হোমল্যান্ড লাইফের শেয়ার সংক্রান্ত নিরীক্ষা প্রতিবেদন: চেয়ারম্যানসহ ৫ পরিচালকের শেয়ারের বৈধতা নেই
নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ার হস্তান্তরের আইনি বৈধতা না থাকায় হোমল্যান্ড লাইফের ২৭ জন পরিচালকদের নামে থাকা শেয়ার বাতিল বলে মতামত দিয়েছিল ৩টি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান। এর উপর ভিত্তি করে ৭ জন পরিচালকের নামে থাকা শেয়ার বাতিল করে তাদের পরিচালক পদ থেকে অব্যহতি দেয়া হয়।
বেআইনিভাবে শেয়ার হস্তান্তর করে নেয়া বাকিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি হোমল্যান্ড লাইফের পরিচালনা পর্ষদ। এদের মধ্যে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদে আছেন চেয়ারম্যানসহ ৫ জন। এরা হলেন- বর্তমান চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিন, জামাল মিয়া, কামাল মিয়া, আব্দুল হাই, আব্দুল আহাদ। এরা সবাই লন্ডন প্রবাসী।
অপরদিকে চেয়ারম্যানসহ এই ৫ পরিচালকের শেয়ার সার্টিফিকেটগুলো বন্ধক রয়েছে আইসিবি ইসলামী ব্যাংক বা সাবেক ওরিয়েন্টাল ব্যাংকে। শেয়ার সার্টিফিকেটগুলো বন্ধক রেখেছেন হোমল্যান্ড লাইফের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান কাজী এনাম উদ্দিন আহমেদ। ২০০৫ সালে তিনি এসব শেয়ার সার্টিফিকেট ব্যাংকে বন্ধক রাখেন।
অপরদিকে চেয়াম্যানসহ ৫ পরিচালক বীমা কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদে রয়েছে ডুপ্লিকেট শেয়ার সার্টিফিকেট দিয়ে। তাদের দাবি অনুসারে ২০১২ সাল থেকে ২০১৬ সালের বিভিন্ন সময়ে শেয়ার সার্টিফিকেট হারিয়ে যাওয়ায় নতুন করে তাদের নামে ডুপ্লিকেট শেয়ার ইস্যু করা হয়।
সূত্র মতে, ৫ পরিচালকের শেয়ারের বৈধতা নিয়ে ইতোমধ্যে তদন্তে নেমেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) ।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, শেয়ারে এলটমেন্ট ও হস্তান্তর সংক্রান্ত অনিয়ম উৎঘাটনের জন্য নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান এ হক অ্যান্ড কোং-কে নিয়োগ করে হোমল্যান্ড লাইফের পরিচালনা পর্ষদ। এই নিয়োগ দেয়া হয় ২০১০ সালের ৩০ ডিসেম্বর। নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের মতামতে উল্লেখ করেন পরিচালনা পর্ষদে থাকা ৭ জনের নামে শেয়ার হস্তান্তর করা হয় ২০০৩ সালে নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের ৩৪ ও ৩৬তম সভায়।
তবে ওই সভার কোরাম পূর্ণ না হওয়া, শেয়ার হস্তান্তরের ১১৭ ফরমে স্বাক্ষরে অমিল থাকা এবং কোম্পানি আইনে ৩৯ ধারা মোতাবেক হস্তান্তর প্রত্যয়ন না থাকায় তাদের শেয়ার হস্তান্তর আইনসংগত না হওয়ায় তা বাতিল বলে মতামত দেয় নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড একাউন্টটেন্স।
পরে ২০১২ সালের ২০ মার্চ ৭৪তম পর্ষদ সভায় হোমল্যান্ড লাইফের ৭ জন পরিচালকের শেয়ার বাতিল করে তাদের পরিচালক পদ থেকে অব্যহতি দেয়। এরা হলেন- মোহাম্মদ আব্দুল মুনিম, মিসেস আম্বিয়া খাতুন, মো. মহিউদ্দন, মো. মফিজ উদ্দিন, মো. তোজাম্মেল আলী সুমাইয়া কজি চৌধুরী ও সামিয়া কাজী আহমেদ।
উল্লেখ্য, এই ৭ পরিচালকের মধ্যে ৫ জনই কাজী এনামের পরিবারের।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, বর্তমান চেয়ারম্যানসহ ৫ পরিচালকের নামে শেয়ার হস্তান্তর করা হয় ১৯৯৭ সালের ২৭ জুলাই অনুষ্ঠিত ৬ষ্ঠ বোর্ড সভায়। ওই সভায় মোট ১৭ জনের নামে শেয়ার হস্তান্তর করা হয়।
এসব শেয়ার হস্তান্তরের বিষয়ে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান আল মোকতাদির এসোসিয়েটস তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, ১৯৯৭ সালের ২৭ জুলাই অনুষ্ঠিত ৬ষ্ঠ বোর্ড সভায় ১৭ পরিচালকের নামে শেয়ার হস্তান্তর করা হয়।
ওই বোর্ড সভায় ১৫ জনের উপস্থিতি দেখানো হলেও বোর্ড সভায় উপস্থিতি হাজিরায় স্বাক্ষর ছিল ৭ জন পরিচালকের। ফলে বোর্ড সভার কোরাম পূর্ণ হয় নাই। কোম্পানির সংঘ স্মারক অনুসারে নুন্যতম ১১ জন পরিচালক উপস্থিত থাকলে কোরাম পূর্ণ হয়।
নিরীক্ষক তার প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করেন, শেয়ার হস্তান্তরের বিষয়ে বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোনো অনুমোদনও নেয়া হয় নাই। এছাড়া কোম্পানি প্রতিষ্ঠার ৩ বছরের মধ্যে শেয়ার হস্তান্তর না করার বিধি নিষেধ থাকলেও এসব শেয়ার হস্তান্তর করা হয় কোম্পানি অনুমোদনের ৯ মাসের মধ্যে। আল মোকতাদির এসোসিয়েটস এই প্রতিবেদন দেন ২০১০ সালে মার্চ মাসে।
একই মতামত দেন নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান হুদাভাসী চৌধুরী অ্যান্ড কোং চার্টার্ড একাউনটেন্টস। ২০১৩ সালে ১৪ অক্টোবর তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, পরিচালনা পর্ষদ সভার কোরাম পূর্ণ না হওয়া ও বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন না থাকায় এসব শেয়ার হস্তান্তরের আইনগত কোনো বৈধতা নেই।
হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ২৭ পরিচালকের শেয়ার হস্তান্তরের অবৈধতা এবং শেয়ারগুলো বাতিলে ৩টি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুপারিশের বিষয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানতে সংস্থাটির পরিচালক ও মুখপাত্র জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করে ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, একই অপরাধের শাস্তি সবার জন্য একই হওয়ার কথা। এক্ষেত্রে ৭ জনের শেয়ার বাতিল করা হলেও বাকীদের শেয়ার কেন বাতিল করা হয়নি বিষয়টি আমার বোধগম্য নয়। তবে বিষয়টি যেহেতু অনেক আগের তাই আমাকে আগে এ বিষয়ে জানতে হবে। না জেনে এ বিষয়ে আমার কিছু বলার সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে কোম্পানিটি মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিসি) এ কে দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এ সময় তিনি ব্যস্ত আছেন উল্লেখ করে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। প্রয়োজনে পরবর্তী কোন সময় যোগাযোগ করতে পরামর্শ দেন এ কে দাস।