কোভিড-১৯ এবং বীমা শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের করণীয়

এ কে এম এহসানুল হক, এফসিআইআই: করোনা ভাইরাসের মহামারী কার্যত সমগ্র বিশ্বের মানুষের জীবন স্থবির করে দিয়েছে। ধনী, দরিদ্র, প্রতিপত্তিশালী কোন দেশই এর বিষাক্ত ছোবল থেকে পরিত্রাণ বা নিষ্কৃতি পাচ্ছে না।

এমতাবস্থায় বীমা শিল্পের সার্বিক স্বার্থে এর সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট সকলকে সম্মিলিতভাবে সাহায্য এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। এককভাবে কারো পক্ষেই এই মহাদুর্যোগ মোকাবেলা করা সম্ভব নয়।

করোনা ভাইরাস আমাদের গতানুগতিক চিন্তার জগতে এক প্রচণ্ড আঘাত হেনেছে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এ ব্যাপারে আমরা কি সিদ্ধান্ত বা উদ্যোগ গ্রহণ করছি তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বীমা শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের করণীয় সমূহ নিম্নে প্রস্তাব আকারে তুলে ধরা হলো-

বীমা কোম্পানির করনীয়:

বীমা কোম্পানির সৃষ্টিধর্মী নূতন পলিসি উদ্ভাবন। যেমন- ১। বেকারত্বজনিত আর্থিক ক্ষতি সংক্রান্ত বীমা পলিসি; এই বীমার মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের মতো মহামারীর সময় লকডাউন বা কার্ফিউ ইত্যাদি কারণে যে সমস্ত কর্মচারী আয়-উপার্জন থেকে বঞ্চিত হবে, বিশেষ করে যারা জীবীকার জন্য সম্পূর্ণভাবে কমিশনের ওপর নির্ভরশীল কেবলমাত্র তাদের বেলায় প্রযোজ্য হবে। নির্দিষ্ট বেতনভোগী কর্মচারীদের বেলায় এই বীমা প্রযোজ্য নয়।

২। বিশেষ পরিণতিজনিত আর্থিক ক্ষতির বীমা; যা গতানুগতিক বীমা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই বীমা করোনা ভাইরাসের মতো মহামারীর বেলায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত আর্থিক ক্ষতিপূরণে সহায়ক হবে।

৩। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার; যেমন, অনলাইনের মাধ্যমে এজেন্টদের পলিসি বিক্রয়ে উৎসাহিত করা। স্বাভাবিক কমিশনের ঊর্ধ্বে বিশেষ প্রণোদনা চালু করা। এই পদ্ধতির মাধ্যমে বীমা কোম্পানির মূল্যবান সময় এবং প্রশাসনিক খরচ হ্রাস পাবে।

৪। বীমা কর্মচারীদের মঙ্গলার্থে বিশেষ তহবিল গঠন; যা কর্মচারী এবং তাদের পরিবারের প্রয়োজনে ব্যবহার করা হবে। বীমা কোম্পানির বাৎসরিক মুনাফার একটি অংশ এই তহবিল গঠনে বরাদ্দ করা যেতে পারে। বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরাম (বিআইএফ) এ ব্যাপারে উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে।

বীমা কোম্পানির মালিকগণের করণীয়:

বীমা কোম্পানির মালিকগণ সাধারণত ধনী এবং বিত্তশালী। এই সমুস্ত ব্যক্তিবর্গ বর্তমান পরিস্থিতিতে আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত বীমা কর্মচারীদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারেন এবং উদার হস্তে দান করতে পারেন। বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন (বিআইএ) এ ব্যাপারে এক বিশেষ এবং প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কারণীয়:

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) নিজস্ব উদ্যোগে বীমা শিল্পে নিয়োজিত বিশেষ করে নিম্ন বেতনভুক্ত কর্মচারীদের জন্য একটি জরুরি তহবিল গঠন করতে পারে। আইডিআরএ’র বাৎসরিক আয়ের একটি অংশ এই তহবিল গঠনের জন্য বরাদ্দ করা যেতে পারে।

সরকারের করণীয়:

বীমা শিল্পকে বর্তমান সঙ্কট থেকে উত্তরণে সহায়তা করতে আর্থিকভাবে সঙ্কটপূর্ণ বীমা কোম্পানিকে সরকার সহজ শর্তে বিশেষ ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে পারে। আর্থিক সঙ্কট বা অসচ্ছলতার কারণে বীমা কো্পানি বন্ধ হয়ে যাওয়া কোনভাবেই বাঞ্চনীয় নয়।

[বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ফর প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট (বিআইপিডি)'র প্রস্তাবনার আলোকে বিষয়টি তুলে ধরেছেন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স প্রফেশনালস সোসাইটি (বিআইপিএস)'র জেনারেল সেক্রেটারি এ কে এম এহসানুল হক]