কোভিড-১৯ মানবজাতির পরম শত্রু হলেও প্রকৃতিবান্ধব
এ কে এম এহসানুল হক, এফসিআইআই: করোনা ভাইরাস বিশ্বের জন্য বিভীষিকা সৃষ্টি করলেও অদ্ভুতভাবে প্রকৃতিবান্ধব। মানুষ স্বাভাবগতভাবেই প্রকৃতির সাথে বৈরিভাব প্রদর্শন করে নানাভাবে নিষ্ঠুর আচরণ করে আসছে। প্রতিবাদ সরূপ বিভিন্ন সময়ে উগ্রমূর্তি ধারণ করে নানা প্রকার দুর্যোগ যেমন- ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত, ঝড়-তুফান, সুনামী, প্লাবন প্রভৃতির মাধ্যমে মানবজাতিকে বারবার সাবধান করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু কে কার কথা শোনে!
অনোন্যপায় হয়ে প্রকৃতি ক্রোধের বসবর্তী হয়ে প্রতিশোধ এবং মানবজাতিকে চরম শাস্তি দেয়ার ব্রত নিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পরেছে। করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বিশ্বে প্রতিদিন হাজার হাজার লোকের প্রাণহানি ঘটছে।
মানুষ চাঁদ জয় করেছে, গ্রহ থেকে গ্রহে ছুটে বেড়াচ্ছে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির শীর্ষ স্থানে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে অথচ সেই শক্তিশালী মানবজাতি করোনা ভাইরাসের মতো এক অদৃশ্য শত্রুর ভয়ে সঙ্কিত হয়ে ঘরের কোনে পালাতে বাধ্য হয়েছে। কারোনা ভাইরাস স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্পূর্ণ বিকল এবং বিশ্ব অর্থনীতিকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে।
বর্তমান বিশ্বে বহুল আলোচিত উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে পৃথিবীর আবহাওয়া বা জলবায়ূ পরিবর্তনের কথাই ধরা যাক। এর কারণে প্রকৃতিতে নানা প্রকার বিরুপ প্রতিক্রিয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, যেমন- সময় অসময়ে ঝড়-বৃষ্টি, সুনামী, কোন অঞ্চলে তীব্র ঠাণ্ডা আবার কোথাও প্রচণ্ড গরম ইত্যাদি।
করোনা ভাইরাস মানব জীবনে ভয়ঙ্কর রুদ্র মূর্তী নিয়ে আবির্ভূত হলেও এটি প্রকৃতির জন্য ভালো সংবাদ বয়ে এনেছে। সমাজে মানুষের গতিবিধি ও কার্যক্রম লক ডাউনের দ্বারা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বায়ূ ও পানি দূষণ হ্রাস, ওজন স্তরের উল্লেখযোগ্য সঙ্কোচন, আর্কটিক অঞ্চলে বরফের পাহাড় সরক্ষণ, বন্য জীবজন্তু এবং পশুপাখির জনশূন্য লোকালয়ে বিচরণ ইত্যাদি করোনা ভাইরাসের প্রকৃতিবান্ধবের স্বাক্ষর বহন করে। করোনা ভাইরাস মানুষের চরম শত্র হলেও এটি আমাদের চতুর্পার্শ্বে বিষাক্ত পরিবেশকে দূষণ মুক্ত রাখতে সাহায্য করছে।
প্রকৃতি আপন গতিতে এবং আপন মহিমায় চলমান। এটি কিভাবে সকল পরিস্থিতিতে নিজের ভারসাম্য রক্ষা করে চলেছে তা আমাদের বোধগম্যের বাইরে। প্রকৃতির সাথে আর যুদ্ধ নয়, বন্ধুসুলভ আচরণ মানব জাতির জন্য মঙ্গলজনক এবং কল্যাণকর।
লেখক: জেনারেল সেক্রেটারি, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স প্রফেশনালস সোসাইটি (বিআইপিএস) ।