ভূরাজনৈতিক অস্থিরতায় সমুদ্র বীমা খাত নতুন সংকটে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সমুদ্র বীমা খাত বর্তমানে এক জটিল মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে। একদিকে সফট প্রাইসিং এবং অতিরিক্ত ক্যাপাসিটির চাপ, অন্যদিকে যুদ্ধ ও ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা- এই দুইয়ের সংঘাতে প্রিমিয়াম ও লাভজনকতার ভারসাম্য ক্রমেই অনিশ্চিত হয়ে উঠছে। সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, হাল প্রিমিয়ামের সামান্য বৃদ্ধি ঘটলেও সামগ্রিকভাবে লাভজনকতা নিশ্চিত নয়। ফলে নীতি, বিপণন কৌশল এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার রূপান্তর এখন সময়ের দাবি।
বিশ্ববাজারে হালের প্রিমিয়াম কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও বহরের ক্রমবর্ধমান মূল্যের কারণে ঝুঁকি কেন্দ্রীভূত হয়েছে। এ ধরনের একত্রিত ঝুঁকি কোনো বড় ক্ষতির ক্ষেত্রে পুরো শিল্পকে বিপদের মুখে ফেলতে পারে। একই সময়ে দেখা যাচ্ছে, অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণ সবচেয়ে ব্যয়বহুল দাবি সৃষ্টি করছে, আর কার্গো ক্ষতি সবচেয়ে ঘনঘন ঘটছে। মুদ্রাস্ফীতি দাবির খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে, যা পি অ্যান্ড আই ক্লাব এবং অন্যান্য মিউচুয়াল সংস্থার আর্থিক সক্ষমতাকে সংকুচিত করছে। এই অবস্থায় কেবল প্রিমিয়াম বৃদ্ধি যথেষ্ট নয়; প্রয়োজন আরও কঠোর ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা প্রটোকল।
ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা বিশেষত রেড সি ও ইউক্রেনের মতো অঞ্চলে সমুদ্র বাণিজ্যের রুট ও খরচে বড় পরিবর্তন আনছে। এর ফলে যুদ্ধঝুঁকি কভার এবং রাজনৈতিক ঝুঁকি পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী অর্থবছরে পি অ্যান্ড আই ক্লাবগুলো প্রায় ব্রেক-ইভেনে কাজ করতে বাধ্য হতে পারে। এর মানে বাজারে প্রিমিয়াম পুনর্নির্ধারণ প্রায় অবশ্যম্ভাবী।
এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে বাজারও থেমে নেই। ব্রোকাররা নতুন পণ্য নিয়ে আসছেন, যেমন উইলিসের ‘আন্ডারকভার’ ফ্যাসিলিটি, যা মালিকদের ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি থেকে সুরক্ষা দিতে সক্ষম। তবে একই সঙ্গে নতুন প্লেয়ারদের আগ্রাসী প্রবেশ প্রতিযোগিতা বাড়াচ্ছে, যা অতিরিক্ত সরবরাহ তৈরি করে সফট মার্কেটকে আরও দীর্ঘস্থায়ী করে তুলতে পারে।
সমুদ্র বীমা খাত এখন শুধু আর্থিক চ্যালেঞ্জ নয়; এটি রাজনৈতিক এবং কৌশলগত দিক থেকেও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে। রুট পরিবর্তন লজিস্টিক ব্যয় বাড়াচ্ছে, পুরোনো জাহাজ এবং নতুন জ্বালানি-শিপিং চাহিদা মিলিয়ে ঝুঁকিকে আরও বহুমাত্রিক করছে। তাই প্রিমিয়াম বাড়ানোর পাশাপাশি দরকার গতিশীল মূল্যনির্ধারণ, প্রযুক্তিনির্ভর ঝুঁকি শনাক্তকরণ এবং কার্যকর তত্ত্বাবধান।
সমুদ্র বীমা খাতের টেকসই ভবিষ্যতের জন্য ঝুঁকি হ্রাসে বিনিয়োগ, রুটভিত্তিক প্রাইসিং, তথ্য-শেয়ারিং এবং দক্ষ ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট অপরিহার্য। শিল্পকে দ্রুত কৌশলগত পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে দীর্ঘস্থায়ী সফট মার্কেট লাভজনকতাকে মারাত্মকভাবে দুর্বল করে দিতে পারে। (বিইনসিউর নিউজ)