আইডিআরএ-আইআরএফ সেমিনার

বীমা খাত ৫ কারণে অর্থনীতিতে প্রত্যাশিত অবদান রাখতে পারছে না: জালালুল আজিম

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বীমা খাতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও ৫টি কারণে খাতটি প্রত্যাশিত অবদান রাখতে পারছে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন (বিআইএ)’র নির্বাহী সদস্য ও প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জালালুল আজিম। আর এ জন্য দেশের বীমা খাতের সংস্কার অত্যন্ত জরুরি বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

বীমা খাতের সংস্কার ও আমাদের করণীয় শীর্ষক এক সেমিনারে লাইফ বীমা খাত নিয়ে উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র চেয়ারম্যান ড. এম আসলাম আলম।  বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ও  ইন্স্যুরেন্স রিপোর্টার্স ফোরামের যৌথ উদ্যোগে আইডিআরএ’র বোর্ড রুমে গত বুধবার (১২ মার্চ) এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।  

জালালুল আজিম বলেন, অনেক বীমা কোম্পানি তাদের গ্রাহকদের বীমা দাবি পরিশোধ করছে না। এমনকি অনেক কোম্পানি দাবি পরিশোধের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। এ কারণে বীমার প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। এক্ষেত্রে অভিযুক্ত বীমা কোম্পানিগুলোকে দাবি পরিশোধে বাধ্য করতে হবে। প্রয়োজনে কোম্পানির সম্পদ বিক্রি করে অথবা উদ্যোক্তাদের আইনের আওতায় এনে দাবি পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হবে।

এ ছাড়াও ভবিষ্যতে যাতে কোন বীমা কোম্পানি দাবি পরিশোধের সক্ষমতা হারিয়ে না ফেলে, তার জন্য বীমা কোম্পানিগুলোকে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা প্রয়োজন। একইসঙ্গে তহবিল বৃদ্ধি না করা পর্যন্ত দাবি পরিশোধে ব্যর্থ কোম্পানিকে নতুন ব্যবসা করা থেকে বিরত রাখতে হবে বলেও জানান তিনি।

অনৈতিক প্রতিযোগিতাকে বীমা খাতের অগ্রগতির জন্য বড় বাধা উল্লেখ করে জালালুল আজিম বলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় দেশের প্রয়োজনীয় বীমা কোম্পানির তুলনায় অনেক বেশি বীমা কোম্পানিকে ব্যবসা পরিচালনার জন্য লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। যার কারণে এ খাতে অনৈতিক প্রতিযোগিতার বিস্তৃতি হয়েছে। একইসঙ্গে বীমা ব্যবসা সম্প্রসারিত না হয়ে ব্যবসা ভাগাভাগি হয়েছে। বিগত ১০ বছরের পেনিট্রেশন সূচক দেখলেই এটি বোঝা যায়।

অর্থনীতিতে বীমা খাতের প্রত্যাশিত অবদান রাখতে না পারার জন্য বীমা কোম্পানি পরিচালনায় প্রশিক্ষিত ও দক্ষ পেশাজীবীর অভাবকে দায়ি করেন জালালুল আজিম। তিনি বলেন, পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশের ৩৫টি লাইফ বীমা কোম্পানির মধ্যে ১০টি প্রতিষ্ঠানে যোগ্যতাসম্পন্ন মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নেই। চলতি দায়িত্ব দিয়ে এসব কোম্পানি চালাতে বাধ্য হচ্ছেন মালিকরা।

দেশে একচ্যুয়ারি নেই বললেই চলে এবং একচ্যুয়ারি তৈরির জন্য কার্যকরী কোন পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয় বলেও মন্তব্য করেন জালালুল আজিম। এক্ষেত্রে তিনি বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমির সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে সরকারকে দেশে পেশাজীবী তৈরির পরামর্শ দেন।

জালালুল আজিম বলেন, বীমার প্রয়োজনীয়তা ও সুফল সম্পর্কে জনগণের সুস্পষ্ট ধারণা নেই। এটি বীমা খাতের অগ্রগতির জন্য একটি বড় বাধা। তিনি বলেন, বীমা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। এ ছাড়াও মাধ্যমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তকে বীমা বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং জাতীয় বীমা নীতির অসম্পূর্ণ কর্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।

অর্থনীতিতে বীমা খাতের প্রত্যাশিত অবদান রাখার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার সক্ষমতা জরুরি বলে জানান জালালুল আজিম। তিনি বলেন, ২০১১ সালে আইডিআরএ গঠন হলেও প্রতিষ্ঠানটি তার পূর্ণ সক্ষমতা অর্জন করতে পারছে না। ৮২টি কোম্পানিকে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের জন্য ৮২ জন ডেডিকেটেড কর্মকর্তাও নেই সংস্থাটিতে। এক্ষেত্রে তিনি বাংলাদেশ বাংকের মতো ক্যাডার সার্ভিস তৈরির পরামর্শ দেন।

জালালুল আজিম আরো বলেন, বীমা আইন যুগোপযোগী করে নিয়ন্ত্রক সংস্থার ক্ষমতা বাড়াতে হবে। কেউ অনিয়ম করে যেনো ছাড় না পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।  এক্ষেত্রে বীমা আইন ২০১০ এর অধীনে যেসব বিধি-প্রবিধি প্রণয়ণ করা হয়নি সেগুলো জরুরি ভিত্তিতে প্রণয়ণ করে কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে।  সর্বোপরি আইডিআরএ’কে নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বীমা খাতের উন্নয়ন কাজেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।