সঠিক তথ্য না জেনে বীমা কেনা মানেই পরিবারকে বিপদে ফেলা

রাজ কিরণ দাস: জীবন বীমা পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তার এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এটি যেমন একটি চুক্তিপত্র, তেমনি সংকটময় সময়ে প্রিয়জনদের জন্য সুরক্ষার নিশ্চয়তা। তবুও অনেকেই সঠিক তথ্য যাচাই না করেই বা সাময়িক স্বস্তির খোঁজে বীমা নেন, যা পরবর্তীতে বড় ধরনের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, সচেতনতা ও নিয়মিত পর্যালোচনার মাধ্যমে এ ঝুঁকি সহজেই এড়ানো সম্ভব।

সস্তার প্রিমিয়ামে লুকানো শর্ত

অনেকে মনে করেন কম প্রিমিয়ামে পাওয়া বীমাই সবচেয়ে ভালো সমাধান। কিন্তু বাস্তবে এই ধরনের পলিসিতে নানা সীমাবদ্ধতা লুকিয়ে থাকে। দাবির সময় অপ্রত্যাশিতভাবে বাদ পড়তে পারে এমন রোগ বা দুর্ঘটনার কভার। ফলে পরিবার যখন সবচেয়ে বেশি সহায়তা আশা করে, তখনই বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকি দেখা দেয়। তাই কেবল খরচ নয়, পলিসির কভারেজ, প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা এবং দাবি নিষ্পত্তির ইতিহাস বিবেচনায় নেওয়া জরুরি।

অবসর তহবিলের বীমায় পুরো নির্ভরতা

অবসর তহবিলের সঙ্গে যুক্ত বীমা অনেক সময় সীমিত কভার প্রদান করে। চাকরি পরিবর্তনের সময় এটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিও থাকে। একই সঙ্গে প্রিমিয়াম কেটে নেওয়ার কারণে অবসর সঞ্চয়ও কমতে পারে। তাই অবসর তহবিলভিত্তিক কভারের পাশাপাশি ব্যক্তিগত প্রয়োজন অনুযায়ী অতিরিক্ত বীমা নেওয়া আরও নিরাপদ বিকল্প হতে পারে।

দ্রুত সিদ্ধান্তে বিপদ

বর্তমানে অনলাইনে বা টেলিফোনের মাধ্যমে সহজেই বীমা কেনা সম্ভব। তবে দ্রুত অনুমোদনের এই সুবিধা অনেক সময় দাবির সময়ে সমস্যায় ফেলে দেয়। তথ্য গোপন, অপ্রকাশিত শর্ত বা মালিকানার জটিলতার কারণে দাবি প্রত্যাখ্যাত হতে পারে। একজন অভিজ্ঞ পরামর্শকের সাহায্যে বীমা নিলে এসব ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। তিনি শুধু সঠিক কভার নির্বাচনেই সহায়তা করেন না, বরং বীমার মালিকানা কাদের নামে হওয়া উচিত সেটিও পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দেন।

জীবনের পরিবর্তনের সঙ্গে বীমা হালনাগাদ

মানুষের জীবন এক জায়গায় থেমে থাকে না। বিয়ে, সন্তান জন্ম, চাকরি পরিবর্তন বা আয়ের ওঠানামা- সবকিছুই বীমার প্রয়োজনীয়তা বদলে দেয়। কিন্তু অনেকেই একবার পলিসি নিয়ে তা আর পর্যালোচনা করেন না। এর ফলে পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষা থাকে না। তাই জীবনের প্রতিটি বড় পরিবর্তনের সঙ্গে বীমার কভার হালনাগাদ করাই সঠিক পদক্ষেপ।

জীবন বীমার প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো পরিবারের ভবিষ্যৎ সুরক্ষা নিশ্চিত করা। ভুল সিদ্ধান্ত বা অসচেতনতার কারণে সেই সুরক্ষা ভেঙে পড়তে পারে। খরচের পরিবর্তে কভারেজকে প্রাধান্য দেওয়া, অবসর তহবিলের সীমাবদ্ধতা বোঝা, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া এবং নিয়মিত পলিসি হালনাগাদ করার মাধ্যমে প্রিয়জনদের জন্য একটি কার্যকর আর্থিক সুরক্ষা তৈরি করা সম্ভব। সচেতনতার এই ছোট প্রচেষ্টা প্রিয়জনদের জন্য হতে পারে সবচেয়ে বড় উপহার।