সঠিক পলিসি না হলে ঝুঁকি থেকে মুক্তি অসম্ভব

রাজ কিরণ দাস: ব্যবসায়িক নিরাপত্তা আজ কেবল পুঁজি বা মুনাফার ওপর নির্ভর করে না। এর মূল শক্তি এখন ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায়, আর সেই ব্যবস্থাপনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বীমা। বিশেষ করে ব্ল্যাংকেট পলিসি- যা একসঙ্গে একাধিক সম্পদ ও ঝুঁকিকে সুরক্ষা দেয়- তা ব্যবসায়িক স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এত প্রতিষ্ঠান ও অফারের ভিড়ে কোন বীমা কোম্পানিকে ভরসা করা যায়?

বীমা কোম্পানি নির্বাচন করা এখন কৌশলগত সিদ্ধান্তের বিষয়। একটি ভুল পদক্ষেপ ব্যবসার আর্থিক কাঠামো নষ্ট করতে পারে, আবার সঠিক সিদ্ধান্ত হতে পারে দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষার ভিত্তি।

একটি নির্ভরযোগ্য বীমা প্রতিষ্ঠানের মূল শক্তি তার আস্থা ও আর্থিক সক্ষমতা। যেসব প্রতিষ্ঠান সময়মতো দাবি নিষ্পত্তি করে এবং প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে, সেগুলোই বাজারে টিকে থাকে। অন্যদিকে আর্থিকভাবে দুর্বল কিংবা অস্বচ্ছ কোম্পানিগুলো ক্ষতির সময় গ্রাহককে হতাশ করে। তাই ব্ল্যাংকেট পলিসি নেওয়ার আগে বীমা প্রতিষ্ঠানের সুনাম, আর্থিক স্থিতি এবং তাদের কার্যক্রমের ইতিহাস যাচাই করাই হতে পারে সবচেয়ে বুদ্ধিদীপ্ত পদক্ষেপ।

প্রতিটি ব্যবসার ঝুঁকি আলাদা- কখনও পণ্য পরিবহণে, কখনও স্থাপনা বা মজুদের ক্ষতিতে, আবার কখনও আইনগত জটিলতায়। তাই কভারেজের ধরন এবং সুরক্ষার পরিধি ঠিকমতো না বুঝে চুক্তি করলে ক্ষতির সময় পূর্ণ সুবিধা পাওয়া যায় না। একটি ভালো বীমা কোম্পানি ব্যবসার বাস্তব প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে কভারেজ সাজায়, যাতে গ্রাহক অপ্রয়োজনীয় প্রিমিয়াম না দিয়ে বাস্তব ঝুঁকির বিপরীতে পূর্ণ সুরক্ষা পান।

ব্ল্যাংকেট পলিসির ক্ষেত্রে নমনীয়তাও একটি বড় বিষয়। এখন গ্রাহকরা প্রতিটি ব্যবসার প্রয়োজন অনুযায়ী পলিসি কাস্টমাইজ করার সুবিধা প্রত্যাশা করেন। যে বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো এই নমনীয়তা প্রদান করে, তারাই বাজারে দ্রুত আস্থা অর্জন করে থাকে। এতে শুধু ব্যয় নিয়ন্ত্রণ নয়, বাস্তবসম্মত সুরক্ষার নিশ্চয়তাও মেলে।

বীমা তখনই প্রকৃত অর্থে মূল্যবান হয়ে ওঠে, যখন কোন বিপদের সময় তা কাজে লাগে। অনেক প্রতিষ্ঠান দাবি নিষ্পত্তিতে ধীরগতি ও জটিলতার কারণে গ্রাহকের ভোগান্তি বাড়ায়। অথচ যে কোম্পানি দ্রুত, স্বচ্ছ ও সহানুভূতিশীলভাবে ক্লেইম নিষ্পত্তি করে, সেটিই আসলে প্রকৃত পেশাদার প্রতিষ্ঠান। একইসঙ্গে দক্ষ গ্রাহকসেবা ব্যবস্থাও একটি প্রতিষ্ঠানের গুণমান নির্ধারণ করে। সহজ যোগাযোগ, অনলাইন সাপোর্ট এবং মানবিক আচরণ- এই তিনটি দিকেই উৎকর্ষতা থাকা জরুরি।

বীমা খাতে প্রতিযোগিতা দিন দিন বাড়ছে, ফলে প্রিমিয়াম রেট অনেকের কাছে বড় বিষয় হয়ে উঠেছে। তবে কম মূল্যে প্রিমিয়াম দেয়ার প্রলোভনে পড়ে দুর্বল প্রতিষ্ঠান বেছে নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। বরং দেখা উচিত- কে মানসম্মত কভারেজ দিচ্ছে, কে বাস্তব ক্ষতির সময় পাশে থাকবে, আর কে দীর্ঘমেয়াদে ব্যবসার সঙ্গে থেকে সুরক্ষার অংশীদার হবে।

ব্ল্যাংকেট পলিসি কেবল একটি বীমা চুক্তি নয়, এটি একটি প্রতিষ্ঠানের স্থিতিশীলতা, দায়িত্ববোধ এবং দূরদর্শিতার প্রতিফলন। যারা সঠিক প্রতিষ্ঠান বেছে নেয়, তারা মূলত তাদের ব্যবসাকে ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তার বিরুদ্ধে সুরক্ষিত রাখে। কারণ ক্ষতি ঠেকানো নয়, ক্ষতির পরেও টিকে থাকার শক্তিই প্রকৃত সাফল্য।

সঠিক বীমা কোম্পানি বেছে নেয়া মানে শুধু পলিসি কেনা নয়; এটি আস্থা, নিরাপত্তা ও দায়িত্বের একটি চুক্তি। আজকের প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতিতে সেই আস্থা অর্জন করতে পারে কেবল তারাই, যারা গ্রাহকের পাশে থেকে স্বচ্ছতা ও মানবিকতার সঙ্গে কাজ করে।