বোনাস শেয়ার নির্ভর গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, নেই নগদ লভাংশ, কমেছে বোনাস
আরেফিন ফয়সাল: পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স ২০০৮ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগাকরীদের লভ্যাংশ দিয়ে আসছে। তবে গত ৯ বছরে এই বেসরকারি ননলাইফ বীমা কোম্পানিটি থেকে কোন নগদ লভ্যাংশ পায়নি বিনিয়োগকারীরা।
বছরের পর বছর ধরে গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের শুধু বোসান শেয়ার ঘোষণাকে সন্দেহের চোখে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, লভ্যাংশ হিসেবে টানা বোনাস শেয়ার ঘোষণা আর্থিক দুর্বলতার লক্ষ্যণ। যেহেতু দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে শুধু বোনাস লাভ্যাংশই দিচ্ছে কোম্পানিটি সেহেতেু আদৌ নগদ লভাংশ দেয়ার সক্ষমতা আছে কি না সে ব্যাপারে যথেষ্ঠ সন্দেহ থেকে যায়। বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থার খতিয়ে দেখা উচিত।
তারা বলছেন, সাধারণত হাতে পার্যপ্ত অর্থ না থাকলে কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের খুশি করতে লভ্যাংশ হিসেবে বোনাস শেয়ার দিয়ে থাকে। কিন্তু বোনাস শেয়ার দেয়ার ফলে কোম্পানির দায় বাড়তে থাকে। এতে ভবিষ্যতে লভ্যাংশ দেয়ার সক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে যায়। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে শেয়ার প্রতি আয় ও সম্পদ মূল্যের ওপর।
এদিকে গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের আর্থিক অবস্থা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সর্বশেষ বছরে (২০১৬ সালে) প্রতিষ্ঠানটির লভ্যাংশ ঘোষণার পরিমাণ কমে গেছে। সেই সঙ্গে কমেছে শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য। শেয়ার প্রতি আয়ও কমেছে ধারাবাহিকভাবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও শেয়ার বাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, লভ্যাংশ দেয়া বা না দেয়া কোম্পানর বিষয়। কোন কোম্পানি যদি নগদ লভাংশ না দেয় বা কোন লভাংশই না দেয় তাহলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কিছু করার থাকে না।
তিনি বলেন, কোন কোম্পানি যদি দীর্ঘ কয়েক বছর নগদ লভাংশ না দেয় তাহলে বুঝতে হবে কোম্পানিটির নগদ লভাংশ দেয়ার সক্ষমতা নেই কিংবা কোম্পানিটি লাভবান হতে পারছে না। এ ব্যাপারে কোম্পানি কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসা করলে সাধারণত তারা বলে তাদের ক্যাশ ফ্লো কম তাই তারা নগদ লভ্যাংশ দিতে পারছে না।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) উচিত বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যাবস্থা নেয়া। সরকার সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে যথেষ্ঠ ক্ষমতা দিয়েছে। কিন্তু আমার মনে হয় সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন সঠিক ভাবে এ বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করছে না।
গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের ম্যানেজার (শেয়ারবাজর) মো. সুরাজের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি একাউন্টস ইনচার্জ মামুনুল ইসলামমের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
এরপর মামুনুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের ৪০ কোটি টাকার কম পেইড আপ ক্যাপিটাল আছে। কোম্পানির পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ৪০ কোটি টাকার পেইড আপ ক্যাপিটাল হলে নগদ লভাংশ দেয়া হবে। তবে কতদিন নাগাদ ৪০ কোটি টাকার পেইড আপ ক্যাপিটাল হতে পারে তা বলা মুশকিল।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০০৮, ২০০৯, ২০১০ এবং ২০১১ সালে গ্লোবল ইন্স্যুরেন্স বিনয়োগকারীদের লভ্যাংশ হিসেবে ১০ শতাংশ করে বোনাস শেয়ার দিয়েছে। ২০১২ সালে এই লভ্যাংশ দেয়ার পরিমাণ ছিল ১২ শতাংশ। এরপর ২০১৩, ২০১৪ এবং ২০১৫ সালের জন্য আবার ১০ শতাংশ করে বোনাস লভাংশ দেয়া হয়। আর সর্বশেষ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ সমাপ্ত হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে ৭ শতাংশ বোনাস শেয়ার।
এদিকে আগের বছরের তুলনায় ২০১৬ সালে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য মূল্য কমেছে ৬২ পয়সা এবং গত তিন বছরে শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য কমেছে প্রায় ১ টাকা। ২০১৬ সাল শেষে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১২ টাকা ২৯ পয়সা। আগের বছরে যার পরিমাণ ছিল ১২ টাকা ৯১ পয়সা।
এছাড়া ২০১৪ সালে ১৩ টাকা ৭ পয়সা, ২০১৩ সালে ছিল ১৩ টাকা ১০ পয়সা এবং ২০১২ সালে ছিল ১৩ টাকা ১৯ পয়সা। অর্থাৎ ২০১২ সালের পর থেকে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য ধারাবাহিকভাবে কমেছে।