অগ্নিকাণ্ডে সম্পত্তির লোকসান পোষাতে অগ্নি বীমা

আগুণে পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত সম্পত্তির আর্থিক লোকসান পুষিয়ে নিতে অগ্নি বীমার জুড়ি নেই। নির্ধারিত হারে প্রিমিয়াম জমা নিয়ে বীমা কোম্পানিগুলো অগ্নি বীমা পলিসি ইস্যূ করে। ভবন ও ভবনের অভ্যন্তরীণ মেশিনারি বা যন্ত্রপাতি, গৃহস্থালী আসবাবপত্র ও দ্রব্যাদি এবং ব্যবসায়িক পণ্যদ্রব্যের জন্য পৃথকভাবে অগ্নি বীমা করা যায়। আবার সবগুলো বিষয়কে অর্থাৎ ভবন ও ভবনের অভ্যন্তরীণ সব সম্পদ একই সাথে বীমার আওতায় আনা যায়। তবে অবশ্যই প্রতিটি বিষয়বস্তুর উপর প্রিমিয়াম পরিশোধ করে ঝুঁকি গ্রহণ করতে হয়।

অগ্নি বীমার পাশাপাশি আরো কিছু ঝুঁকি গ্রহণ করা যেতে পারে, যেগুলোর জন্যও আলাদাভাবে প্রিমিয়াম পরিশোধ করতে হয়। এসব ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে- দাঙ্গা ও ধর্মঘটের ক্ষতি, বিদ্বেষপরায়ণ ক্ষতি, বায়ুমণ্ডলীয় ঝামেলা বা গোলযোগ, ভূমিকম্প, বিস্ফোরণ, প্রভাব ক্ষতি অর্থাৎ সংঘর্ষকালে এক বস্তুর ওপর অন্যবস্তুর অভিগাত ইত্যাদি।

আমাদের দেশে স্বইচ্ছায় কোনো ব্যক্তি কোনো সম্পদের অগ্নি বীমা করে না। অগ্নি বীমার অধিকাংশ পলিসিই গ্রাহকরা করে থাকে বাধ্য হয়ে। দেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতা অনুসারে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কোনো শিল্প-কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা ভবন নির্মাণ করা হলে এসব সম্পত্তির অগ্নি বীমা করা হয়ে থাকে। ফলে অগ্নি বীমার অধিকাংশ গ্রাহক তার অগ্নি বীমা পলিসি সম্পর্কে সচেতন থাকে না। এসব সম্পত্তির অগ্নি বীমার ক্ষেত্রে ব্যাংক যেহেতু নিজেও একটি পক্ষ সেকারণে ঋণ গ্রহীতা এসব বীমা গ্রাহক পলিসি করতে ব্যাংকের উপরই নির্ভর করে থাকে।

অনেক সময় ঋণ গ্রহীতা ওই বীমা গ্রাহক জানেন না কোন কোম্পানিতে পলিসি করা হয়েছে। সে কোম্পানির দাবি পরিশোধের সক্ষমতা বা গ্রাহক সেবার মান কেমন। এসব না জানার কারণে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হলে অধিকাংশ গ্রাহককে হয়রানির মধ্যে পড়তে হয়। অনেক সময় সঠিকভাবে পলিসি না করার কারণে তারা বীমা দাবি পান না।

কোম্পানিগুলো সাধারণত অগ্নি বীমা দাবিটি সঠিক কিনা তা যাচাই করতে জরিপকারি নিয়োগ করে। এক্ষেত্রে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতির প্রমাণ করতে গ্রাহককে সচেতন থাকতে হয়। কেননা দাবিটি নিষ্পত্তি করার জন্য বীমা কোম্পানি নানান কৌশল অবলম্বন করে। এজন্য গ্রাহককে সংশ্লিষ্ট বীমা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা রাখতে হয়। সঠিকভাবে দাবি উত্থাপন ও তা আদায় করতে ইন্স্যুরেন্স নিউজবিডি’র পাঠকদের জন্য এখানে কিছু টিপস তুলে ধরা হলো:

অগ্নি বীমার থেকে সুবিধা পেতে প্রত্যেক গ্রাহককে অগ্নি বীমা পলিসি করার সময় থেকেই সচেতন থাকা উচিত। এক্ষেত্রে প্রথমেই যে বিষয়টি খেয়াল রাখা উচিত তা হলো- বীমা চুক্তিতে প্রয়োজনীয় সব বিষয় আছে কিনা। সেগুলো অবশ্যই দেখে-বুঝে নিতে হবে। যেমন- তার বীমা অংক কত এবং কি ধরণের কভারেজ আছে, কি কি বিষয় কাভারেজের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং কি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হলে দাবি উত্থাপনের শর্তগুলো কি, কত দিনের মধ্যে দাবি উত্থাপন করতে হবে ইত্যাদি। এসব বিষয় বুঝে নেয়ার পর তাকে নিশ্চিত হতে হবে পলিসির প্রিমিয়ামের টাকা সঠিকভাবে কোম্পানিতে জমা হলো কি না। এক্ষেত্রে পলিসি করার জন্য কোনো ব্যক্তির হাতে প্রিমিয়ামের টাকা না দিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে প্রিমিয়াম জমা করা উচিত।

অগ্নিকাণ্ডের পর যত দ্রুত সম্ভব বীমা কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে আপনার ক্ষতি সম্পর্কে জানাবেন। অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তারা ক্ষতি সম্পর্কে জানতে চাইতে পারে। তবে যেসব তথ্য কোম্পানিকে জানাবেন তা অবশ্যই লিখিত আকারে হতে হবে।

এক্ষেত্রে আপনার পলিসি পত্রটি হারিয়ে গেলে বা অন্য কোনোভাবে নষ্ট হয়ে গিয়ে থাকলে যত শীঘ্র সম্ভব আপনার বীমা পত্রটির একটি অনুলিপি কোম্পানির কাছ থেকে সংগ্রহ করে নিন। আপনার সব ব্যক্তিগত সম্পত্তির তালিকা সংগ্রহ করে বিন্যাস্ত করুন। এর মাধ্যমে আপনার ক্ষতির পরিমাণ বুঝতে পারবেন।

আপনার নিজের সব সম্পত্তি নিয়ন্ত্রণে রাখুন। ক্ষতিপূরণ সম্পর্কে নিশ্চত না হওয়া পর্যন্ত আপনার কোন সম্পত্তি হস্তান্তর, মেরামত বা পুন:স্থাপনের জন্য কোন পুন:স্থাপন কোম্পানিকে অনুমতি দেবেন না। কেননা অগ্নিকাণ্ডের সময় বা এরপর কোন কিছু হারিয়ে গেলে তার ক্ষতিপূরণ নাও পাওয়া যেতে পারে।

বীমা কোম্পানির অ্যাডজাস্টার বা সমন্বয়কারির সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে রেকর্ড রাখুন। এসব রেকর্ডের পৃথক ফাইল করুন। যখন কোন তথ্য বা নথি অ্যাডজাস্টারের কাছে জমা দেবেন তখন সতর্কতা অবলম্বন করুন। প্রতিটি নথির অনুলিপি সংগ্রহ করুন।

আপনার পলিসির সামর্থ অনুযায়ী সব সুযোগ-সুবিধা আদায় করার চেষ্টা করুন অথবা সরকারি অ্যাডজাস্টারের সঙ্গে পরামর্শ করুন। যদি আপনার বীমা দাবি ৯০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি না হয় তাহলে কোম্পানির কাছে ব্যাখ্যা চাইতে পারেন। মনে রাখবেন উল্লেখযোগ্য কোনো কারণ ছাড়া বীমা কোম্পানি ৯০ দিনের মধ্যে দাবি পরিশোধ করতে বাধ্য। আর পরিশোধ না করলে ৯০ দিনের পরবর্তী প্রতিদিনের বিলম্বের জন্য আপনি প্রচলিত ব্যাংক সুদের হারে উপর মাসিক ভিত্তিতে আরো ৫% যোগ করে সুদসহ বীমা দাবি পাওয়ার অধিকার রাখেন।

বীমা কোম্পানি অথবা জরিপকারি বা সার্ভেয়ার প্রতিষ্ঠান অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত কারখানা বা প্রতিষ্ঠানের কাছে যেসব তথ্য বা নথি চাইতে পারে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে –

  • সঠিকভাবে পূরণকৃত বীমা দাবির ফরম (ফায়ার ক্লেইম ফরম),
  • সমর্থনকারি কাগজ বা নথিসহ অনুমিত ক্ষতির পরিমাণ,
  • ফায়ার ব্রিগেডের প্রতিবেদন,
  • ফায়ার লাইসেন্স কপি,
  • অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সম্পর্কে স্থানীয় চেয়ারম্যান বা ওয়ার্ড কমিশনারের বিবৃতি,
  • ক্ষতিগ্রস্ত পণ্যের আমদানির বা স্থানীয় চালানপত্র,
  • ঘটনার সময় উপস্থিতির লিখিত বিবৃতি,
  • সিল-স্বাক্ষরসহ জেনারেল ডায়েরি বা জিডি’র অনুলিপি,
  • অগ্নিকাণ্ডের আগের তিন মাসের স্টক রেজিস্টারের অনুলিপি এবং ব্যাংক স্টেটমেন্ট ইত্যাদি।
  • এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের ধরণ অনুযায়ী অন্যান্য কাগজপত্র প্রয়োজন হতে পারে।

প্রকাশের তারিখ-২৯ মে ২০১৬