আন্তর্জাতিক বন দিবস: পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্ব পাচ্ছে বনবীমা

আবদুর রহমান: 

সম্প্রতি মানবসৃষ্ট এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে গাছ-পালা তথা বন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় জোর দাবি উঠেছে গাছের জন্য বীমা বা বনবীমার। মানুষের রোপন করা বা প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয়া গাছপালার সুরক্ষায় এই দাবি তোলা হয়েছে।

এবারের আন্তর্জাতিক বন দিবসে বনবীমা চালুর প্রক্রিয়া শুরুর জোর দাবি তোলা হয়েছে পরিবেশবাদী সংগঠনের পক্ষ থেকে। দক্ষিণ কোরিয়ার বন নিয়ে কাজ করা কয়েকটি সংগঠন গাছের জন্য বীমা পলিসি চালু করার দাবি জানিয়েছে। সংগঠনগুলো বলছে, ট্রি ইন্স্যুরেন্স চালু করা হলে গাছ মালিকরা তথা বনায়ণকারীরা আর্থিক লোকসান থেকে সুরক্ষা পাবে।

দেশটির ফরেস্ট্রি কো-অপারেটিভ ইন কোরিয়া ও কোরিয়া ফরেস্ট সার্ভিস জানিয়েছে, দাবানল, ভূমিধস, এবং কীটপতঙ্গ উপদ্রবের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে গাছ-পালা তথা অরণ্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কিন্তু দেশে বর্তমানে এমন কোন কৃষি বা দূর্যোগ বীমা পরিকল্প নেই, যার মাধ্যমে এসব বন মালিকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।

জানা গেছে, জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য মতে, ১৯৯০ সাল থেকে ১২৯ মিলিয়ন হেক্টর ভূমির বন-জঙ্গল উজাড় হয়ে গেছে। বর্তমানে বিশ্বের মোট ভূমির ৩০.৬ শতাংশ জুড়ে রয়েছে বন-জঙ্গল। মানুষের কার্যকলাপে গত কয়েক শতকে বনাঞ্চল কমে গেছে। তবে আশার দিক হলো, সম্প্রতি বন উজাড়ের পরিমাণ ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। তবে বিশ্বব্যাপী বনভূমির পরিমাণ হ্রাস পেলেও প্রাকৃতিক বন এখনো মোট বনভূমির ৯৩ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করছে।

এসব সংগঠন বলছে, বনায়ণকারীদের স্বার্থ রক্ষায় যথোপযুক্ত বীমা পলিসির অভাব রয়েছে, যা তাদের ব্যাপকভাবে অনুৎসাহ কাজ করছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় দুই মিলিয়ন বেসরকারি বন মালিকের পক্ষে যুক্তি উত্থাপন করছে ফরেস্ট্রি কো-অপারেটিভ ইন কোরিয়া।

২০১৬ সালে পাইন উড নিমাটোড'র উপদ্রবে ১৩ লাখ ৭০ হাজার গাছ কাটা পড়েছে। কিন্তু এসব লোকসানের জন্য গাছ মালিকরা কোন ক্ষতিপূরণ পায়নি। ফরেস্ট্রি কো-অপারেটিভ মনে করে, ২০১১ সালের কৃষি ও মৎস্য দুর্যোগ বীমা সংস্কার বিল অনুসারে ট্রি ইন্স্যুরেন্স সুবিধা পাওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করার তাদের আইনি অধিকার রয়েছে।

বন মালিকদের সেবা দেয়ার জন্য বীমা খাতে একটি প্রকল্প দাঁড় করাতে সংগঠন দু'টি আগামী ৩ বছর একসঙ্গে কাজ করবে বলেও জানিয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে পাইন এবং সাইপ্রেস গাছসহ ৭ প্রকার গাছের বীমা কভারেজ প্রদান করা হবে।

তবে এ ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে বলে জানিয়েছে বীমাকারীরা। বীমার আওতায় দায়গ্রহণের উদ্দেশ্যে প্রাকৃতিক বনের মান নির্ধারণ করা কঠিন। কারণ, বনের মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য গাছ থাকে যেগুলোর বয়স, ফলন শ্রেণী ও বৃদ্ধির হার সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না। সেই অনুসারে, এসব বনের বীমা কভারেজের জন্য অগ্নিকাণ্ড খরচ বীমা এবং কার্বন অফসেট সংক্রান্ত পণ্য সীমিত।

অন্যদিকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রোপণ করার মাধ্যমে সৃষ্ট বন এলাকা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯৯০ সাল থেকে রোপন করা বন এলাকার পরিমাণ বেড়ে ১১০ মিলিয়ন হেক্টরে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে এই ধরণের বনের পরিমাণ বিশ্বের মোট বনের ৭ শতাংশ বলে ধরা হয়। এসব বনের বৈশিষ্ট্য হলো ইউক্যালিপটাস ও পাইন থেকে শুরু করে অয়েল পাম গাছে বিন্যাস্ত।

সুইস রি প্রকাশনার লেখক পিটার ওয়েলটেন “ফরেস্ট্রি ইন্স্যুরেন্স: এ লার্জলি আনট্যাপড পোটেনশিয়াল” শীর্ষক প্রবন্ধে সংক্ষিপ্তভাবে বনায়ন বীমার অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, রোপনকৃত বন নির্ভর করে নিবিড় ভূমি ব্যবহারের ওপর এবং গাছের অল্প কিছু প্রজাতির ওপর নজর দেয়। এগুলো মূল্যবোধের একাগ্রতা তৈরি করে এবং পরে অতিরিক্ত ঝুঁকি প্রদর্শণ করে।

যেখানে ফরেস্ট ইন্স্যুরেন্স বা বনায়ন বীমা মূল্যবান হাতিয়ার প্রমাণিত হবে। বনায়ন বীমা দণ্ডায়মান কাঠের ঝুঁকি গ্রহণ করে অগ্নি ও ঝড়ের মতো প্রভাবশালী ঝুঁকিসহ অন্যান্য ঝুঁকি যেমন- বন্যা বা বরফ এবং তুষাড়পাতের বিপরীতে সুরক্ষা প্রস্তাব দেয়।

বনায়ন বীমা একটি উদীয়মান ব্যবসা। যদিও বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বনায়নের মাত্র ছোট একটি শতাংশ বীমাকৃত। ক্রমবর্ধমান সংখ্যক বাণিজ্যিক বাগানের ব্যবস্থাপক ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী সুরক্ষার জন্য বীমা বা পুনর্বীমা বাজারে খুঁজছেন।

পিটার আশাবাদী, সুইস রি তার গ্রাহকদেরকে এই ব্যবসায়িক সুযোগ গ্রহণে সহযোগিতা দিতে ভালো অবস্থানে রয়েছে। এর স্থানীয় অভিজ্ঞতার সঙ্গে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে দক্ষ সমাধান উন্নয়ন এবং পুনর্বীমাকরণ ক্ষমতা প্রদানের মাধ্যমে এ সহযোগিতা করবে সুইস রি।

অন্যদিকে ট্রি ইন্স্যুরেন্সের প্রস্তাবের বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার কতিপয় সরকারি সংস্থা।দেশটির অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, গাছ-পালা খুব বেশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণ না হওয়ায় এখন ট্রি ইন্স্যুরেন্সের জরুরি প্রয়োজন নেই বলে তাদের ধারণা।