ব্যয়বহুল বিয়েতে চাহিদা বাড়ছে বীমার

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক: ব্যয়বহুল বিয়ে বাতিলের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বীমার চাহিদা বাড়ছে। বিয়ে বাড়িতে চুরি, অনুষ্ঠানস্থলে দুর্ঘটনা এবং অগ্নিকাণ্ড বা ভূমিকম্পে সম্পদের ক্ষতিসহ বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকি বহন করে বীমা কোম্পানি। বর-কনের অভিভাবকদের আর্থিক ঝুঁকি কমাতে বড় বাজেটের বিয়ের জন্য বীমা কাভারেজ চালু করেছে ভারত।

দেশটিতে ব্যয়বহুল বিয়ের জন্য কয়েক বছর আগে থেকে বীমা সুবিধা চালু করা হয়েছে। তবে সম্প্রতি বড় বাজেটের বিয়ের জন্য বীমার চাহিদা বেড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি বিয়ের ব্যয় প্রায় ৫০ লাখ রুপি হলে সেই বিয়েটি যদি কোনো কারণে বাতিল বা স্থগিত হয় তাহলে পরিবারের কাছে বড় ধরনের অর্থনৈতিক ধাক্কা লাগে।

ফিউচার জেনারেলী ইন্ডিয়া ইন্সুরেন্স চেন্নাই এর প্রধান অপারেটিং কর্মকর্তা শ্রীরাজ দেশপাণ্ডে বলেন, অনেক পরিবার বড় বাজেটের বিয়ের জন্য সম্প্রতি বীমা সুবিধা নেয়া শুরু করেছে। এই বছর ৭০টির মতো বিয়েতে বীমা চালু করা হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে গতবারের তুলনায় ২৫-৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে ব্যক্তিগত বিয়ের ব্যয় মেটানোর জন্য।

বিয়ে বাতিল বা স্থগিত হওয়া দুশ্চিন্তার বড় কারণ। কেননা এতে অনুষ্ঠানস্থলের ভাড়া, খাদ্য সরবরাহকারী এবং খাবারের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা নষ্ট হয় যা বিয়ের মোট খরচের প্রায় ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ। বেশিরভাগ পরিবারের জন্য এই ব্যয় বহন করা অনেক কঠিন। এ ক্ষেত্রে বিয়ে বাড়িতে চুরি, অনুষ্ঠানস্থলে দুর্ঘটনা এবং অগ্নিকাণ্ড বা  ভূমিকম্পে সম্পদের ক্ষতি হলে বীমা কোম্পানি এর ক্ষতিপূরণ দেবে।

শুধু তাই নয় সকল প্রতিকূলতাই এর আওতায় পড়বে। বিয়ের বাড়িতে পরিবারের কেউ হঠাৎ মারা গেলে বীমা দাবি উত্থাপন করা যাবে। তবে হঠাৎ মানসিকতা বা সিদ্ধান্তে পরিবর্তনের কারণে বিয়ে বাতিল হলে সে ক্ষতি বীমা পলিসির আওতায় পড়বে না।

এসবিআই জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের বীমার সুবরোমোনিয়াম ব্রমোজশুলা বলেন, বিয়ের আয়োজক পরিবারগুলো জেনে খুশি হবে যে এই বীমা অংকের ১ থেকে ১.৫ শতাংশ প্রিমিয়াম বাবদ পরিশোধ করতে হবে। অর্থাৎ ৫০ লাখ রুপি বীমা কভারেজের জন্য তাদেরকে ৫০ হাজার রুপি প্রিমিয়াম পরিশোধ করতে হবে।

দেশপাণ্ডে আরো বলেন, ৫০/৬০ লাখ রুপির জন্য ০.২৫%-০.৩০% প্রিমিয়াম হতে পারে। বিয়ের পরিকল্পনায় বেশি ব্যয়ের জন্য বীমা একটা ধারণা হতে পারে।

ভিডা ওয়েডিং এর শ্রুতি রভিন্দ্রন বলেন, কোন কারণে বিয়ে না হলে বর বা কনের অভিভাবক মানসিক ও আর্থিক উভয় দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাদের মাধ্যমে আয়োজিত একটি বিয়ের কথা উল্লেখ করে বলেন, ২৫ লাখ রুপি বরাদ্দের ওই বিয়ের জন্য ডেকোরেশন, ফটোগ্রাফি এবং কেনাকাটা সম্পন্ন করা হয়। মাত্র ১ মাস আগে বিয়েটি বাতিল করা হয়। তবে কোন অর্থ তাদের ফিরে পাওয়ার সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয়বার  যখন বিয়ের আয়োজন করা হয়। তখন বাজেট কমিয়ে ৫ লাখ টাকা বরাদ্ধ করা হয়। বর্তমানে বর-কনের পরিবার দ্রুত সময়ের মধ্যে বিয়ের আয়োজন করতে পছন্দ করে। সেক্ষেত্রে একটা বীমাই পারে তাদের এ ধরনের পরিস্থিতিতে সহযোগিতা করতে, অন্তত বিয়ে বাতিলের ক্ষতি পূরণ হতে পারে। স্থগিত বিয়ে পুনরায় আয়োজন করা অনেক দূরূহ কাজ।

ওয়েডিং প্রতিষ্ঠান বিয়ে মেলা এর পরিকল্পনাকারী অনিশ সুধাকর মনে করেন, আগাম বিয়ের অনুষ্ঠান, খাদ্য সরবরাহকারী, ডেকোরেশন, গান-বাজনা, কার্ড ছাপানো, হোটেল বুকিং এবং যাতায়াত খরচ বীমার মাধ্যমে হতে পারে। কিন্তু আবার আয়োজন করতে দ্বিগুণ খরচ হয়। এছাড়া বড় বিয়েতে বিমানের টিকিট কেটে বিয়ে স্থগিত হলে পুনরায় টিকিটের জন্য খরচ দ্বিগুণ হয়। এগুলো হচ্ছে বিয়ে বাতিলের খরচ বৃদ্ধির ঝুঁকির কারণ। স্থগিত বিবাহের জন্য বীমা আর্থিকভাবে সাহায্য করতে পারে। (টাইমস অব ইন্ডিয়া)