ভারতে বীমার টাকা আদায়ে নিজেকে মৃত ঘোষণা
ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক: ভারতের রাজস্থানের আলওয়ারে টাকার লোভে দু’দুবার নিজেকে মৃত ঘোষণা করেন এক ব্যক্তি। একবার ১৬ লাখ টাকা ভাড়া বাঁচাতে এবং ১ কোটি টাকার বীমা দাবি পেতে জালিয়াতি করে দু’বার ডেথ সার্টিফিকেটও বানান তিনি। আর নিজেকে মৃত প্রমাণ করতে দু বছর যাবৎ ছিলেন গৃহবন্দী। ভারতের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে এ খবর জানিয়েছে।
ইন্ডিয়া টুডে বলছে, ২০১৭-১৮ সালে আলওয়ারের বাসিন্দা নীরজ শর্মা আলওয়ারের একটি ম্যারেজ হোম ভাড়া নিয়েছিলেন। সেই হোমের মালিক ছিলেন নেহা যাদব। এক বছর ধরে নীরজ ম্যারেজ হোমের ভাড়া ১৬ লাখ টাকা বাকি রাখেন। হঠাৎ করে ২০১৯ সালে নেহা যাদব হলটি বন্ধ করে দেন। অন্যদিকে নীরজ ভাড়া পরিশোধ না করায় আদালতে মামলা করেন নেহা যাদব। এমতাবস্থায়, আদালত নীরজকে বকেয়া টাকা পরিশোধের নির্দেশ দিলে তিনি হাইকোর্টে আবেদন করেন। কিন্তু হাইকোর্টও নিম্ন আদালতের আদেশ বহাল রাখে।
২০২০ সালে করোনার সময় নীরজের বাবা করোনাতে মারা গেলে, বাবার ডেথ সার্টিফিকেট পেয়ে মাথায় কুবুদ্ধি আসে তার। বাবার মৃত্যুর পরে ২০২০ সালে করোনার সুযোগ নিয়ে নীরজ নিজেকে মৃত ঘোষণা করেন। শ্মশান এবং সিটি কাউন্সিলের কাগজপত্রে চতুরতার সাথে নিজেকে মৃত দেখিয়ে ডেথ সার্টিফিকেট তৈরি করেন। আর ১৬ লাখ টাকার ভাড়া এড়াতে আদালতে সেই ডেথ সার্টিফিকেট দাখিল করেন।
এর পর থেকে নিজের বাড়ি থেকে বেরোনো বন্ধ করে দেন তিনি। শুধু তাই নয়, তার স্ত্রী সবাইকে জানাতে থাকেন যে তার স্বামী মারা গেছেন। ম্যারেজ হোমের মালিক নেহা যাদব একদিন নীরজকে স্কুটার চালাতে দেখে তিনি ভিডিও তৈরি করে আদালতে উপস্থাপন করে।
ইন্ডিয়া টুডে আরো বলছে, আলওয়ার পুলিশ তাদের জানিয়েছে যে, ২০২০ সালে প্রথম ডেথ সার্টিফিকেট পাওয়ার পর নীরজ আরেকটি পরিকল্পনা করে। তিনি বাখতালের পোস্টের কাছে অস্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে ২০২০ সালের অক্টোবরে তার ঠিকানা পরিবর্তন করে। শুধু তাই নয়, ২১ অক্টোবর তিনি আইসিআইসিআই এবং পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকে ৫০ লাখের দু’টি বীমা পলিসি কেনেন। প্রথম বছরের জন্য তিনি ৩৮ হাজার টাকার কিস্তিও জমা দেন।
২০২১ সালের ২১ নভেম্বরে করোনার কারণে মৃত্যু হয়ে ট্রান্সপোর্ট নগরে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে দেখিয়ে সিটি কাউন্সিল থেকে দ্বিতীয় জাল ডেথ সার্টিফিকেট তৈরি করে। এরপরই নীরজ তা দিয়ে এক কোটি টাকার বীমার জন্য দাবি আবেদন করেন।
যে ভাবে ফাঁস হলো তার পরিকল্পনা
ইন্ডিয়া টুডে বলছে, কিছুদিন পর সংশ্লিষ্ট বীমা পলিসির এজেন্ট যাচাইয়ের জন্য তার বাড়িতে গেলে এজেন্টকে স্বামী মারা যাওয়ার খবর দেয় তার স্ত্রী। কিন্তু নীরজের ছোট ভাই সঞ্জয় পুরো বিষয়টি ফাঁস করে দেয়।
পুলিশ জানায়, সঞ্জয় এজেন্টকে জানিয়ে দেয় যে তার ভাই নীরজ বেঁচে আছেন। বীমা কোম্পানি এবং ওই ম্যারেজ হলের মালিক নেহা যাদবের অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর নথিভুক্ত করার পরে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। এরপরই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ।