ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা, বীমা নিয়ে চাপে রাশিয়া
আবদুর রহমান আবির: সমুদ্রপথে রাশিয়ার তেল বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং শিল্প উন্নত দেশগুলোর সংগঠন জি-সেভেন। সোমবার (৫ ডিসেম্বর) থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর শুরু হয়েছে।
একইসঙ্গে ইউরোপীয় জোট এবং তাদের মিত্ররা রাশিয়ার তেলের মূল্যসীমা ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলার কার্যকর করা শুরু করেছে।
বিশ্বজুড়ে রাশিয়ার তেল সরবরাহে নিযুক্ত জাহাজগুলোর বীমা কভারেজ প্রদানকারী এবং অর্থায়নকারী ইইউ’র কোম্পানিগুলো এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে। তবে পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহকৃত রাশিয়ার তেলের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা নেই।
ইইউ এবং জি-৭ এমনভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে- যাতে বীমা কভারেজের অভাবে বৈশ্বিক ট্যাংকার বহরের সেবা থেকে বঞ্চিত হয় রাশিয়া। তবে মূল্যসীমা মেনে নিলে যেকোনো গন্তব্যের জন্য রাশিয়ান তেল বহনে তারা বীমা সুবিধা পাবে।
এরইমধ্যে পশ্চিমা শক্তির এই নিষেধাজ্ঞার ফলে বীমা নিয়ে বড় চাপে পড়েছে রাশিয়া। বীমা কভারেজ না পাওয়ায় বৈশ্বিক ট্যাংকার বহরের সেবা বঞ্চিত মস্কো মিত্র দেশগুলোর কাছেও তেল রপ্তানিতে বাধার সম্মুখিন হয়েছে।
রাশিয়ার এই চাপের বড় একটি কারণ হলো- আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি পরিবহনে ব্যবহৃত ট্যাংকারগুলোর নিরাপত্তার জন্য যে বীমা করা হয় তার ৯৫ শতাংশই নিয়ন্ত্রণ করে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
জাহাজে পণ্য পরিবহনে নানান দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে। এতে মালামালের ক্ষয়ক্ষতি হলে তার ক্ষতিপূরণের ভার নেয় বীমাকারী সংস্থা। মূলত এ জন্যই রাশিয়ার তেল রপ্তানিতে এতো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বীমা।
তুর্কি গণমাধ্যম হারিয়েত ডেইলি নিউজ জানায়, মোট ২ মিলিয়ন টন অপরিশোধিত তেল নিয়ে ১৮টি ট্যাঙ্কার কৃষ্ণ সাগরে এবং একটি এজিয়ান সাগরে অপেক্ষা করছে এবং জাহাজগুলো এখনও বীমা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উপস্থাপন করেনি।
এ ছাড়াও কৃষ্ণ সাগরের অপেক্ষারত ১৮টি ট্যাঙ্কারের মধ্যে ১৩টি ইউরোপীয় ইউনিয়নের বন্দরে তেল সরবরাহ করতে যাচ্ছে এবং এসব জাহাজের মধ্যে ১৫টির মালিক গ্রীক, দুটি হংকংয়ের এবং একটি তুর্কি বলে জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার (আইইএ) তথ্যানুযায়ী, রাশিয়া থেকে ইইউ দিনে ২২ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আমদানি করে থাকে। এর মধ্যে পাইপলাইন দিয়ে প্রতিদিন ৭ লাখ ব্যারেল তেল সরবরাহ হয়। পাশাপাশি দিনে ১২ লাখ ব্যারেল পরিশোধিত জ্বালানি পণ্যও সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
তুরস্কের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্সের জেনারেল ডিরেক্টরেট জানিয়েছেন, উপযুক্ত বীমা কাগজপত্রসহ কমপক্ষে ৩টি তেলের ট্যাঙ্কার তুর্কি প্রণালী অতিক্রম করার অনুমতি দেয়া হয়েছে।
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য ক্রেমলিনকে শাস্তি দিতে পশ্চিমা শক্তিগুলো তেলের মূল্য সীমা আরোপ করার পরে রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল বোঝাই ট্যাঙ্কার থেকে বীমার প্রমাণপত্র দেখাতে অনুরোধ করা শুরু করে তুরস্ক।
জেনারেল ডিরেক্টরেট আরো বলেন, সুরক্ষা এবং ক্ষতিপূরণ (পিএন্ডআই) বীমার প্রমাণ সম্পর্কিত নিয়মটি ১ ডিসেম্বর কার্যকর হয়েছে এবং তখন থেকে বীমা কাগজপত্র উপস্থাপন করা তিনটি অপরিশোধিত তেল ট্যাঙ্কার ইস্তাম্বুল প্রণালী দিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে।