এশিয়া-প্যাসিফিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বীমার সীমিত সুরক্ষা: অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল বিশ্বের অন্যতম প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকা। জলবায়ু পরিবর্তন, ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য এবং দ্রুত নগরায়ণের কারণে এখানে নিয়মিতভাবে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প ও ঝড়ঝঞ্ঝার মতো বিপর্যয় ঘটে। এসব দুর্যোগে প্রতিবছর বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়, তবে তার তুলনায় বীমা সুরক্ষা প্রায় অপ্রতুল। অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার (ওইসিডি) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এ অঞ্চলের মোট ক্ষতির মধ্যে খুব সামান্য অংশই বীমার আওতায় আসে, যা আর্থিক নিরাপত্তার দিক থেকে একটি বড় ঘাটতির ইঙ্গিত দেয়।
গবেষণায় বলা হয়েছে, এশিয়া-প্যাসিফিকের অর্ধেকেরও বেশি দেশে দুর্যোগজনিত ক্ষতির মাত্র অল্প অংশ বীমা দ্বারা কাভার করা হয়। বিশেষ করে ভূমিকম্প বীমার প্রসার অত্যন্ত কম। দীর্ঘ দুই দশকের তথ্য বিশ্লেষণে জানা যায়, গড়ে প্রতিবছর বহু বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষতি হয়েছে, যার প্রায় অর্ধেকের বেশি ক্ষতি হয়েছে বন্যার কারণে। এ সময়ে ক্ষতির পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়েছে। শুরুতে যেটি ছিল তুলনামূলকভাবে সীমিত, তা সাম্প্রতিক সময়ে কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ দুর্যোগের প্রভাব সময়ের সঙ্গে আরও মারাত্মক আকার ধারণ করছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বীমার এই ঘাটতি বা প্রটেকশন গ্যাপ শুধু ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকেই পুনরুদ্ধারে বাধাগ্রস্ত করছে না, বরং সরকারি অর্থনীতির ওপরও চাপ বাড়াচ্ছে। কারণ দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে পুনর্গঠন, ক্ষতিপূরণ ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হয় সরকারকে। এতে বাজেট ঘাটতি বৃদ্ধি পায় এবং দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
চাহিদা-পক্ষের চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে- ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতার অভাব, বীমা কভারেজ নিয়ে ভুল ধারণা, সরকারি সহায়তার ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা, বীমা প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থার ঘাটতি এবং উচ্চ প্রিমিয়ামের কারণে সীমিত আর্থিক সামর্থ্য। ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশে দেখা গেছে, অনেক পরিবার গৃহ বীমা নিয়ে থাকলেও তার মধ্যে অতি সামান্য অংশই ঐচ্ছিক বন্যা কভারেজ গ্রহণ করে। অন্যদিকে, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকেও মোকাবিলা করতে হচ্ছে নানা সীমাবদ্ধতা। ঝুঁকি মূল্যায়নের দুর্বলতা, পুনর্বীমার উচ্চ ব্যয়, বিতরণ খরচ এবং কঠোর নিয়ন্ত্রক কাঠামো অনেক সময় প্রিমিয়াম বাড়িয়ে তোলে, যা গ্রাহকের জন্য বীমা আরও অপ্রাপ্য করে তুলছে।
তবে কিছু ইতিবাচক দিকও আছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বীমা দ্বারা কাভারকৃত ক্ষতির হার সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রযুক্তিনির্ভর ঝুঁকি মূল্যায়ন, পুনর্বীমার নতুন মডেল এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কিছুটা আশার আলো দেখাচ্ছে। কিন্তু এ প্রক্রিয়া এখনও যথেষ্ট নয়। কার্যকর সমাধানের জন্য এখন জরুরি হলো- নীতিনির্ধারকদের সময়োপযোগী উদ্যোগ, সচেতনতা বাড়ানো, দুর্যোগ কভারেজকে সাধারণ বীমা পলিসির অংশ করা, নিম্নআয় শ্রেণির জনগোষ্ঠীর জন্য সাশ্রয়ী পণ্য চালু করা এবং দাবি নিষ্পত্তির প্রক্রিয়ায় আস্থা ফিরিয়ে আনা। (সংবাদ সূত্র: ইন্স্যুরেন্স এশিয়া)