জাপানের নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স সেক্টরে রেকর্ড ক্ষতির শঙ্কা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জাপানের বীমা শিল্প এমন এক ঝুঁকিপূর্ণ বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে, যা আগামী তিন দশকে দেশের দুটি সম্ভাব্য মহাভূমিকম্পের কারণে নজিরবিহীন আর্থিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল রেটিংসের সাম্প্রতিক বিশ্লেষণ বলছে, নানকাই ট্রাফ এলাকায় বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনা ৬০% থেকে ৯০% এবং টোকিওর নিচে আরেকটি শক্তিশালী ভূমিকম্পের সম্ভাবনা প্রায় ৭০%। এই দুই দুর্যোগের যেকোনো একটির সংঘটন বীমা খাতে এমন পরিমাণ ক্ষতিপূরণের বোঝা চাপিয়ে দিতে পারে, যা ২০১১ সালের বিধ্বংসী পূর্ব জাপান ভূমিকম্পের আর্থিক প্রভাবকেও অতিক্রম করবে।
এসঅ্যান্ডপি’র মূল্যায়নে দেখা যাচ্ছে, নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলো এই ঝুঁকির প্রধান বাহক। করপোরেট ভূমিকম্প বীমা কভারেজ সবচেয়ে বেশি ক্ষতির কারণ হতে পারে। সরকারি পূর্বাভাস অনুযায়ী, শুধুমাত্র নানকাই ট্রাফ এলাকায় বড় ভূমিকম্প হলে নন-লাইফ বীমা খাতকে প্রায় ২৬.২ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত দাবি পরিশোধ করতে হতে পারে। টোকিওতে সম্ভাব্য ভূমিকম্পের ক্ষেত্রেও এই অঙ্ক ৭ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে। এসব অনুমান গৃহস্থালি ভূমিকম্প বীমাকে বাদ দিয়ে করা হয়েছে, যা বেসরকারি খাতের জন্য তুলনামূলকভাবে সীমিত ঝুঁকি তৈরি করে। জাপান আর্থকোয়েক রিইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মাধ্যমে সরকার এই বীমার অধিকাংশ ঝুঁকি গ্রহণ করে থাকায় বেসরকারি কোম্পানির সর্বোচ্চ দায় দাঁড়ায় কেবল ২.১ বিলিয়ন ডলার।
অন্যদিকে জীবন বীমা খাত তুলনামূলকভাবে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। নানকাই ট্রাফ ভূমিকম্পে জীবন বীমার সম্ভাব্য দাবি প্রায় ১৫.৪ বিলিয়ন ডলার এবং টোকিও ভূমিকম্পে প্রায় ১.২ বিলিয়ন ডলার হিসেবে ধরা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ অর্থবছরে শিল্পটির সাধারণ মুনাফা ছিল ১৯.৮ বিলিয়ন ডলার, যা থেকে বোঝা যায়, তারা উল্লেখযোগ্য আর্থিক চাপ সত্ত্বেও ক্ষতি শোষণ করতে সক্ষম হবে। কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালেও জীবন বীমা কোম্পানিগুলো ৮.৩ বিলিয়ন ডলার দাবি পরিশোধ করে লাভজনক অবস্থায় থাকতে পেরেছিল, যা তাদের স্থিতিস্থাপকতার উদাহরণ।
তবে ভূমিকম্প-পরবর্তী আর্থিক বাজারের অস্থিরতা এখনো একটি গুরুতর উদ্বেগ। ২০১১ সালের দুর্ঘটনার পর জাপানের শেয়ারবাজার প্রায় ১৫% নিচে নেমে যায়, দীর্ঘমেয়াদি সুদের হার হ্রাস পায় এবং ইয়েনের অস্বাভাবিক শক্তিশালী হওয়া রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করে। যদিও গত এক দশকে বীমা কোম্পানিগুলো ইক্যুইটি, সুদের হার এবং বৈদেশিক মুদ্রাজনিত ঝুঁকি কমানোর জন্য তাদের পোর্টফোলিও আরও বৈচিত্র্যময় ও সুরক্ষিত করেছে, একটি মহাভূমিকম্পের অভিঘাত একই মাত্রায় বাজারে নতুন ধাক্কা আনতে পারে।
এছাড়া বড় ধরনের ভূমিকম্প জাপানের সার্বভৌম ক্রেডিট রেটিংয়ের ওপরও উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতি, কর আদায় কমে যাওয়া এবং পুনর্গঠনে বিপুল ব্যয়- এসবই সরকারের ঋণগ্রহণের সক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে। অধিকাংশ জাপানি বীমা কোম্পানির সম্পদ দেশীয় বাজারে কেন্দ্রীভূত হওয়ায় সার্বভৌম রেটিং কমে গেলে স্বাভাবিকভাবেই তাদের ক্রেডিট রেটিংও ঝুঁকির মুখে পড়বে।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল রেটিংসের সার্বিক পর্যবেক্ষণে স্পষ্ট, জাপানের বীমা শিল্প গত এক দশকে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাকে আগের তুলনায় আরও উন্নত করেছে, কিন্তু সম্ভাব্য ভূমিকম্প-পরবর্তী ক্ষতি ও বাজার অস্থিরতা থেকে পুরোপুরি রক্ষা পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আগামী কয়েক দশকে যদি নানকাই ট্রাফ বা টোকিওতে মহাভূমিকম্প আঘাত হানে, তবে তার আর্থিক অভিঘাত ২০১১ সালের দুর্যোগের চেয়েও দীর্ঘস্থায়ী ও গভীর হতে পারে- এমনটাই সতর্কবার্তা দিচ্ছে বিশ্লেষকরা। (সংবাদ সূত্র: ইন্স্যুরেন্স এশিয়া)




