আকর্ষণ হারাচ্ছে ভারত সরকারের স্বাস্থ্য বীমা
ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক: দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য চালু করা ভারত সরকারের স্বাস্থ্য বীমা প্রকল্প ক্রমেই আকর্ষণ হারাচ্ছে। ২০০৮ সালে ২৫টি রাজ্যে এই বীমা পরিকল্প চালুর পর বর্তমানে তা ১৫টি রাজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। কমেছে সেবা প্রদানকারী হাসপাতাল ও বীমা গ্রহীতার সংখ্যা।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৯ অর্থ বছরে এই প্রকল্পের আওতায় ৭ হাজার ৮৬৫টি বেসরকারি হাসপাতাল সেবা প্রদান করেছে। ২০১৭ অর্থ বছরে এই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯২৬টিতে। অর্থাৎ ৮ বছরের ব্যবধানে ২ হাজার ৯৩৯টি বা ৩৭ শতাংশ হাসপাতাল এ সেবা বন্ধ করেছে।
অন্যদিকে সরকারের এই স্বাস্থ্য বীমা গ্রহণকারী পরিবারের সংখ্যাও কমছে দ্রুত। ২০১৬ অর্থ বছরে দেশটিতে এই সেবা গ্রহণকারী পরিবারের সংখ্যা ছিল ৪১.৩ মিলিয়ন। ২০১৭ অর্থ বছরে এই সংখ্যা কমে দাড়িয়েছে ৩৬.৩ মিলিয়ন। অর্থাৎ মাত্র এক বছরের ব্যবধানে ৫ মিলিয়ন তথা ১২ শতাংশ গ্রাহক পরিবার কমেছে।
পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়া (পিএইচএফআই) এর কর্মকর্তা ড. অনুপ করণ বলেছেন, বেসরকারি অনেক হাসপাতাল এখান থেকে সুবিধা লাভের আশা ছেড়ে দিয়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে যখন এই কর্মসূচি চালু করা হয় তারপর থেকে খুব অল্প পরিমাণই বেড়েছে বীমা কভারেজ এবং সেবাদানকারি হাসপাতালগুলোর অর্থ পরিশোধের হারেও কোন সংশোধন হয়নি।
ড. অনুপ করণ আরো বলেন, এই কর্মসূচিতে সেবা প্রদানকারী হাসপাতালগুলোর অর্থ পরিশোধে কালক্ষেপণের অনেক অভিযোগ রয়েছে এবং অনেক সময় হাসপাতালের প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণ কমানো হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলো প্রতিযোগিতাহীন এই ব্যবসায় খুব কম লাভ করতে পেরেছে। তাই ধীরে ধীরে অনেক প্রতিষ্ঠান এই প্রকল্প থেকে নিজেদেরকে গুটিয়ে নিয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকার যখন রাজ্যগুলোতে এই প্রকল্প চালু করে, তখন অনেকে নানা কারণে প্রকল্পটিতে অংশ নেয়নি। অনেকে দাবি করেছে তাদের নিজেদের বীমা পরিকল্প রয়েছে। আবার অনেকে ন্যাশনাল হেলথ প্রোটেকশন স্কিম (এনএইচপিএস) এর অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন, যেটি রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বীমা যোজনা (আরএসবিওয়াই)'র স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত নতুন এই প্রকল্প গত বছরের অক্টোবরে মন্ত্রীসভায় উপস্থাপন করা হয়েছে, তবে এখন পর্যন্ত এটি সবুজ সঙ্কেত পায়নি। অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বীমা যোজনা (আরএসবিওয়াই) ২০১৮ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে বলে জানান পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়া এর কর্মকর্তা ড. অনুপ করণ।
আরএসবিওয়াই এর অধীনে একটি পরিবারের সর্বোচ্চ ৫ জন সদস্যের জন্য ৩০ হাজার রুপি পর্যন্ত নগদ মুদ্রাবিহীন স্বাস্থ্য বীমা কভারেজ প্রদান করা হয়। তবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবায় নিজস্ব খরচ কমাতে এই প্রকল্প অনেকটা অকার্যকর বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
গত বছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এনএইচপিএস এর আওতায় দরিদ্র পরিবারের জন্য ১ লাখ রুপি পর্যন্ত বীমা কভারেজ প্রদানের প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেন। প্রস্তাবিত এই প্রকল্পে বর্তমানে যারা যুক্ত আছেন তারাসহ ১০০ মিলিয়ন মানুষকে বীমা কভারেজ দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।