গ্রাহকের টাকায় দাওয়াত খায় ফারইস্ট ইসলামী লাইফের পরিচালকরা!
নিজস্ব প্রতিবেদক: বিয়ে, জন্মদিন, বউভাত, বিবাহ বার্ষিকী, সুন্নতে খাৎনা পারিবারিক সামাজিক অনুষ্ঠান। এসব দাওয়াত দেয়া সামাজিক রেওয়াজ। দাওয়াত দেয়া হয় বন্ধু বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, অফিসের কলিগ, ব্যবসায়িক বন্ধু-বান্ধবদের।
এসব অনুষ্ঠানে উপহার দেয়ার রেওয়াজ দীর্ঘদিনের। তবে উপহারের ব্যয়টি যৌথভাবে বা এককভাবেই বহন করা হয়। তাও ব্যক্তিগতভাবে নিজ নিজ পকেট থেকেই এ খরচ করা হয়।
তবে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের পরিচালক বা ব্যবস্থাপনা পরিষদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসব দাওয়াত খান পলিসি হোল্ডারের টাকায়। তারা নিজের গাটের পয়সা খরচ করেন না। এমন খরচের অনুমোদনও দেয়া হয় কোম্পানির নির্বাহী কমিটি বা বোর্ড সভায়।
গ্রাহকের টাকায় বিয়ে বা অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানের উপহার কেনা যায় কিনা তা নিয়ে বীমা সংশ্লিষ্ট অনেকের সাথে আলাপ করা হয়। তাদের মতে গ্রাহকের টাকায় দাওয়াতের উপহার কেনার কোন সুযোগ নেই। তবে অনেক কোম্পানি এটা করে থাকে যা বেআইনি। এ ধরণের ব্যয়কে তারা খুবই দৃষ্টিকটু বলেও মনে করেন।
প্রাইম ইসলামী লাইফ ও ফারইস্ট ইসলামী লাইফ বীমা খাতে কোম্পানি দু’টি ইসলামী বীমা কোম্পানি। দু’টি কোম্পানির মালিকদের সম্পর্ক বীমা খাতে সকলেরই জানা। তাই প্রাইম ইসলামী লাইফের মূখ্য নির্বাহী মো. শাহ আলমের ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে দাওয়াত পান ফারইস্ট ইসলামী লাইফের চেয়ারম্যান, পরিচালনা পর্ষদ ও মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা।
এই বিবাহ অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেয়ায় ১ লাখ টাকার উপহার দেন তারা। উপহারের খরচের ১ লাখ টাকা অনুমোদন দেয়া হয় নির্বাহী কমিটির সভায়। বিয়ের অনুষ্ঠানটি হয় ২০১৭ সালে। ওই বছরের ১০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ফারইস্ট ইসলামী লাইফরে ৫২১তম নির্বাহী কমিটির সভায় এ টাকা অনুমোদন দেয়া হয়।
পিডিবির পরিচালক হেমায়েত উদ্দিনের মেয়ে নওশিন নাওয়েল এর বিয়েতে দাওয়াত পান ফারইস্ট ইসলামী লাইফের চেয়ারম্যান, পরিচালনা পর্ষদ সদস্য ও মূখ্য নির্বাহী। বিয়েতে ১ লাখ টাকা উপহার দেয়া হয়। বিয়ের অনুষ্ঠান হয় ৬ এপ্রিল ২০১২ সালে। কোম্পানির ৪৩৩তম নির্বাহী কমিটির সভার সর্বশেষ বিবিধ আলোচনায় এ টাকার ব্যয়ের অনুমোদন দেয়া হয়।
আল-আরাফা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একরামুল হক এর ছেলের বিয়েতে ৪০ হাজার টাকার একটি ল্যাপটপ উপহার দেন ফারইস্ট ইসলামী লাইফের চেয়ারম্যান, পরিচালনা পর্ষদ সদস্য ও মূখ্য নির্বাহী। উপহারের ব্যয়টি অনুমোদন করা হয় নির্বাহী কমিটির ৪২৮তম সভা।
ফারইস্ট ইসলামী লাইফের পরিচালক আসাদ খান এর ছেলে আসিফ খানের বিয়েতে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা নগদে উপহার দেয়া হয়। বিয়েতে দাওয়াত পান কোম্পানির ফাউন্ডার চেয়ারম্যান এম এ খালেক। কোম্পানির ৪৪০তম নির্বাহী কমিটির সভায় এ ব্যয় অনুমোদন করা হয়।
দাওয়াতের উপহার কেনার ব্যয়ের বিষয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র সদস্য ড. মোশারফ হোসেন এর সাথে আলাপ করা হলে তিনি বলেন, গ্রাহকের টাকা থেকে দাওয়াতের উপহার কেনার কোন সুযোগ নেই। এটা অনুচিত ও দৃষ্টিকটু। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এ বিষয়ে তদন্ত করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
তবে সিএসআর ফান্ড থেকে এ ব্যয় করা যায় বলে জানান ফারইস্ট ইসলামী লাইফের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হেমায়েত উল্যাহ।