গ্রাহককে পাঠাতে হবে এসএমএস

১৪ টাকার এসএমএস ৩২ টাকায় কেনার নির্দেশ আইডিআরএ'র

নিজস্ব প্রতিবেদক: এবার সরাসরি গ্রাহকসেবার দায়িত্ব নিলো বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) । পলিসি গ্রহণের পর প্রিমিয়াম পরিশোধের তথ্য নিশ্চিত করতে গ্রাহকের মোবাইল ফোনে এসএমএস (শর্ট মেসেজ সার্ভিস) পাঠাবে কর্তৃপক্ষ। এ জন্য প্রতিটি পলিসির বিপরীতে বছরে ৩২ টাকা চার্জ গুণতে হবে বীমা কোম্পানিগুলোকে। ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে এ টাকা দিতে হবে।

এমনই এক নির্দেশনাবলী অনুসরণে সোমবার বীমা কোম্পানিগুলোকে চিঠি দিয়েছে আইডিআরএ। কর্তৃপক্ষ বলছে, উন্নত গ্রাহকসেবা, ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনায়ন, এজেন্ট কর্তৃক প্রিমিয়াম আহরণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে বীমা কোম্পানিগুলোর আর্থিক অবস্থা সুদৃঢ় করার অংশ হিসেবে ইউনিফাইড মেসেজিং প্লাটফর্ম বা ইউএমপি’র উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানকে এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

এদিকে সার্কুলারটি বীমা কোম্পানিগুলো হাতে পাওয়ার পর বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র কাছে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, ইতোমধ্যে আমরা গ্রাহকদের এসব সেবা দেয়া শুরু করেছি এবং তা খুব কম খরচেই। 

তারা বলেন অতিরিক্ত ব্যয় কমানোর জন্য আমাদের চাপ দেয়া হচ্ছে। বেশ কিছু কোম্পানি এ ব্যয় কমিয়ে আনতে। আইডিআরএ'র এ নির্দেশ মানতে হলে ব্যয় আবারো বাড়বে। যা কোনোভাবেই কাম্য হওয়া উচিত নয়। 

তাদের মতে, নিজের প্রতিষ্ঠানের একজন গ্রাহকের তথ্য অন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া কতটা নিরাপদ ও আইনসঙ্গত তা ভেবে দেখা উচিত।

কয়েকটি বীমা কোম্পানির মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই এ ধরনের সার্কুলার জারি করা হয়েছে। সার্কুলারটিতে বৈঠকের যে বরাত দেয়া হয়েছে তা সঠিক নয় বলেও অভিযোগ করেন অনেকে।

তাদের আরো অভিযোগ, রাতারাতি একটি প্রতিষ্ঠানকে এত বড় দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, যেখানে লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোকে বছরে ৬০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। এর পেছনে অন্য কোন উদ্দেশ্য আছে কিনা তা নিয়ে তাদের সন্দেহ রয়েছে।

তবে অভিযোগকারী কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্ত দেন।

আইডিআরএ’র বলছে, ইউএমপি’র মাধ্যমে প্রত্যেক বীমা গ্রাহককে এসএমএস’র মাধ্যমে লেনদেনের নোটিফিকেশন পাঠানো হবে। এর ফলে স্বচ্ছতা ও আস্থা অনেকাংশেই প্রতিষ্ঠিত হবে, যা দ্বারা বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি উপকৃত হবে। ইউএমপি বাস্তবায়নের কারণে গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে কোম্পানিগুলোকে পৃথকভাবে কোন যন্ত্রপাতি স্থাপন করতে হবে না। ফলে খরচ কমে আসবে এবং তামাদি পলিসিও উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে।

ইউনিফাইড মেসেজিং প্লাটফর্ম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বীমা কোম্পানিগুলোকে তাদের পলিসি ও পলিসিহোল্ডার সংক্রান্ত সব ধরণের তথ্য নির্ধারিত ফরমেটে ইউএমপি পোর্টালে আপলোড করতে বলা হয়েছে। এ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রতিটি বীমা কোম্পানির দু’জন কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেবে আইডিআরএ। আর ইউএমপি’র সেবা সম্পর্কে বীমা গ্রাহকদের সচেতন করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে বীমাকারীদের। 

ইউএমপি বাস্তবায়নে বীমা কোম্পানিগুলোকে তাদের প্রতিটি পলিসির বিপরীতে ত্রৈমাসিক ভিত্তিক তথা প্রতি ৩ মাসে ৮ টাকা হারে খরচ করতে হবে।  পে-অর্ডার অথবা পে-চেকের মাধ্যমে প্রথম মাসের ১ তারিখের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ডিওইআর সার্ভিস লিমিটেড বরাবর এ টাকা পরিশোধ করতে হবে। তবে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে এ টাকা পরিশোধ করতে হবে।

বীমা কোম্পানিগুলোর দেয়া তথ্য মতে, দেশে সচল পলিসির সংখ্যা ১ কোটি ৮ লাখ। তবে এই হিসাব ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরের। ডিসেম্বর পর্যন্ত পলিসি সংখ্যা সোয়া কোটি থেকে দেড় কোটিতে উন্নীত হবে। এর সাথে যদি ল্যাপস পলিসির হিসাব ধরা হয় তাহলে মেসেজ পাঠাতে হবে প্রায় দেড় কোটি গ্রাহকের কাছে।

তাদের হিসাব অনুসারে, প্রতিটি পলিসির জন্য প্রতি ৩ মাসে ৮ টাকা হারে বছরে খরচ দিতে হবে ৩২ টাকা। এর সাথে ভ্যাট-ট্যাক্স মিলিয়ে প্রতিটি গ্রাহককে মেসেজ পাঠাতে বছরে খরচ হবে ৪০ টাকা। সে হিসাবে ৩২টি লাইফ বীমা কোম্পানির বছরে খরচ দাঁড়াবে ৬০ কোটি টাকা। 

বীমা কোম্পানিগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতিটি পলিসি গ্রাহককে সাধারণভাবে বছরে ২ থেকে ২৪টি এসএমএস পাঠানো হয়। অর্থাৎ বাৎসরিক প্রদেয় প্রিমিয়ামের ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের আগে প্রিমিয়াম পরিশোধে তাগাদা দেয়ার জন্য একবার এবং প্রিমিয়াম গ্রহণের পর গ্রাহককে তা নিশ্চিত করতে আরেকবার নোটিফিকেশন পাঠানো হয়।

একইভাবে ষান্মাসিক প্রিমিয়ামের ক্ষেত্রে বছরে ৪টি, ত্রৈমাসিক প্রিমিয়ামের ক্ষেত্রে ১২টি এবং মাসিক প্রিমিয়ামের ক্ষেত্রে ২৪টি এসএমএস পান বীমা গ্রাহকরা। প্রতিটি এসএমএস পাঠাতে বীমা কোম্পানির খরচ হয় ভ্যাট-ট্যাক্সসহ ৫৭ পয়সা। অর্থাৎ কোন পলিসি গ্রাহককে সর্বোচ্চ সংখ্যক এসএমএস পাঠানো হলেও কোম্পানির খরচ হয় বছরে ১৩ টাকা ৬৮ পয়সা। আর বার্ষিক প্রিমিয়ামের ক্ষেত্রে এই খরচ ১ টাকা ১৪ পয়সা।

ডিওইআর সার্ভিস লিমিটেড এর কর্মকর্তা মো. মকুল আরফান ডিটো ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি'কে বলেন, বীমা কোম্পানিগুলোর এতো পরিমাণ তথ্য একই ফরমেটে নিয়ে আসা এবং সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। এরপর কোম্পানিগুলোর প্রয়োজন মতো গ্রাহকদের নোটিফাই করা একটি বড় দায়িত্ব। বীমা কোম্পানিগুলোর সহায়তায় ডিওইআর এ কাজ করবে।

এই প্লাটফর্মের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রাহককে প্রিমিয়াম পরিশোধে তাগাদা দেয়া ও পরিশোধিত প্রিমিয়ামের তথ্য নিশ্চিতকরণ, নতুন সুবিধা সম্পর্কে অবহিতকরণ, প্রোডাক্ট পরিচিতি এবং বিভিন্ন উপলক্ষ্যে গ্রাহকদের মোবাইলে এসএমএস পাঠানো হবে। বীমা গ্রাহকদের তথ্য নতুন ফরমেটে নিয়ে আসাতে বীমা কোম্পানিগুলোকে সার্বিক সহযোগিতা করবে ডিওইআর।