কঠোর বিধিনিষেধে যেমন চলছে বীমার অফিসগুলো

নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চলমান কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও বীমা সেবা নিশ্চিত রাখার স্বার্থে সীমিত পরিসরে কার্যক্রম চালাচ্ছে কোম্পানিগুলো। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র নির্দেশনা অনুসারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত চলছে বীমা অফিস।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পবিত্র ঈদুল আজহার পাঁচ দিনের ছুটি শেষে আজ রোববার (২৫ জুলাই) ফের কর্মমুখর হয়ে উঠেছে বীমা কোম্পানিগুলো। লকডাউনের প্রথম অফিসে খুব অল্প সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত হয়েছেন। দূরের কর্মকর্তাদের বেশিরভাগই রয়েছেন ছুটিতে। তবে দু’এক দিনের মধ্যেই কর্মকর্তাদের এই সংখ্যা আরো বাড়বে।

২১ জুলাই পবিত্র ঈদুল আজহা পালিত হওয়ায় ২০, ২১ ও ২২ জুলাই ছুটি ভোগ করেন বীমা খাতের কর্মীরা। এর সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি হিসেবে ২৩ জুলাই (শুক্রবার) ও ২৪ জুলাই (শনিবার) ছুটি কাটানোর সুযোগ পান তারা। ফলে টানা পাঁচ দিন বন্ধ থাকে বীমা খাত।

এর আগে ১৪ জুলাই পর্যন্ত ছিল লকডাউন। তবে ঈদ উদযাপন বিবেচনায় সরকার ৮দিনের শিথিলতা দিয়ে পুনরায় ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে। বিধিনিষেধ চলাকালে অর্থনীতি সচল রাখার স্বার্থে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সীমিত পরিসরে খোলা রাখা হয়েছে।

সে হিসেবে আজ রোববার খুলেছে বীমা কোম্পানিগুলোর অফিস। প্রধান কার্যালয় ও কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ শাখা অফিসে চলছে তাদের কার্যক্রম। এ ছাড়াও বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কার্যালয়, বাংলাদেশের বীমা খাত উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যালয় এবং সার্ভে প্রতিষ্ঠানও খোলা রয়েছে শর্তসাপেক্ষে।

সরকারের পক্ষ থেকে ঈদ পরবর্তী কঠোর বিধিনিষেধ ও সীমিত পর্যায়ে বীমা কার্যক্রম চালানোর ঘোষণার পর গত ১৯ জুলাই প্রজ্ঞাপন জারি করে শর্তসাপেক্ষে বীমা অফিস খোলার অনুমোদন দেয় আইডিআরএ। প্রজ্ঞাপন অনুসারে বীমা কোম্পানিগুলোকে যেসব নির্দেশনা মানতে হবে সেগুলো হলো-

সীমিত সংখ্যক জনবল নিয়ে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করে ২৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত (সাপ্তাহিক ছুটির দিন ব্যতীত) সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। বীমাকৃত সম্পদ দুর্ঘটনায় পতিত হলে দ্রুত বীমা দাবি নিষ্পত্তির জন্য তাৎক্ষণিকভাবে সার্ভের প্রয়োজন হলে সীমিত সংখ্যক জনবল এবং কঠোর স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সার্ভে কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে।

স্ব স্ব বীমা প্রতিষ্ঠান বা সার্ভে প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণকে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে আনা-নেয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সকল ক্ষেত্রে বীমাকারী বা সার্ভে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীগণকে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত পরিচয় পত্র আবশ্যিকভাবে বহন করতে হবে।

বীমা সেবা অব্যাহত রাখতে দাপ্তরিক কাজসমূহ ভার্চুয়াল পদ্ধতি অবলম্বন অগ্রাধিকার দিতে হবে। এছাড়াও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক গত ১৩ জুলাই আরোপিত বিধি-নিষেধ যথাযথভাবে পালন করতে হবে।

ঈদ পরবর্তী অফিসের বিষয়ে প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আপেল মাহমুদ বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত সংখ্যক জনবল নিয়ে আজ আমরা অফিস খুলেছি। ঈদের পর আজ প্রথম অফিস হওয়ায় উপস্থিতি বেশ কম। তবে দু’এক দিনের মধ্যে এ সংখ্যা আরো বাড়বে।

রাস্তায় চলাচলেও কোন সমস্যা হচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোম্পানির পরিচয়পত্রের পাশাপাশি বীমা অফিস খোলা রাখার বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নির্দেশনার কপি আমরা সবাইকে সরবরাহ করেছি। তাই রাস্তায় কোথাও চেক করলেও জরিমানা বা হয়রানির শিকার হতে হয়নি কাউকে।

জেনিথ ইসলামী লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম নুরুজ্জামান বলেন, পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি শেষে আজ আমরা অফিস শুরু করেছি। বিধিনিষেধ থাকায় নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা অনুসারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে অফিস পরিচালনা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, রোস্টার অনুসারে কর্মকর্তারা অফিসে আসছেন। দূরের কর্মকর্তাদের অফিস থেকে গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে অথবা ছুটি দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা গাড়ি ব্যবহার করছেন তাদের আশপাশের কর্মকর্তাদের তার গাড়িতে আনা-নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিসি) গিয়াস উদ্দিন বলেন, আইডিআরএ’র নির্দেশনা মেনে আমরা আফিস শুরু করেছি। আজকে কর্মকর্তাদের উপস্থিতি কম। তবে জনবলের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ নিয়ে চলবে আমাদের কার্যক্রম। আমরা আশা করছি, খুব শিগগিরই পরিস্থিত পরিবর্তন হবে এবং সবাইকে নিয়ে আমরা কাজ করতে পারব।