আইন লঙ্ঘন করে এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহীর নিয়োগ অনুমোদন দিয়েছে আইডিআরএ
নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রবিধান অনুসারে যোগ্যতার শর্ত পূরণ না করলে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে কোন ব্যক্তির নিয়োগ অনুমোদন করবে না বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) ।
অথচ আইনের এই নির্দেশ লঙ্ঘন করে এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নজরুল ইসলামকে নিয়োগের অনুমোদন করেছে বীমা খাতের এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা। গত ২৬ জুলাই এ নিয়োগ অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা ২০১২ গেজেট আকারে প্রকাশ হয় ২০১২ সালে। এতে বলা হয়, মুখ্য নির্বাহী পদে নিয়োগ পেতে হলে, তিন বৎসর মেয়াদী স্নাতক ও এক বৎসর মেয়াদী স্নাতকোত্তর ডিগ্রি বা চার বৎসর মেয়াদী স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রির অধিকারী হতে হবে।
অথচ নজরুল ইসলাম এইচএসসি পাস করেন ১৯৮৫ সালে এবং বিএসসি পাস করেন ১৯৮৭ সালে। অর্থাৎ নজরুল ইসলামের বিএসসি ডিগ্রিটি ২ বছর মেয়াদী। পরে ২০১১ সালে দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটির সাভার ক্যাম্পাস থেকে এমবিএ পাস করেন নজরুল ইসলাম।
অর্থাৎ প্রবিধানমালার শর্ত অনুসারে নজরুল ইসলাম শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত পূরণ করেন না। শিক্ষাগত যোগ্যতার এসব তথ্য তিনি মুখ্য নির্বাহী পদে নিয়োগ অনুমোদনের জন্য করা আবেদনে উল্লেখ করেছেন।
তবে নজরুল ইসলাম বলছেন, তার সময়ে দু’বছরের ডিগ্রি ছিল। পরবর্তীতে তিনি দু’বছরের মাস্টার্স করেছেন। সব মিলিয়ে চার বছর। প্রবিধানমালায় শিক্ষাগত যোগ্যতা চার বছরই চাওয়া হয়েছে এবং সে হিসেবে তার শিক্ষাগত যোগ্যতা রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
প্রবিধানমালায় উল্লেখিত তিন বৎসর মেয়াদী স্নাতক ও এক বৎসর মেয়াদী স্নাতকোত্তর ডিগ্রি বা চার বৎসর মেয়াদী স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রির বিষয়ে তিনি বলেন, এটা আমাদের ক্ষেত্রে নয়। প্রবিধানমালা করার পর যারা পাস করেছেন তাদের জন্য। কারণ পরবর্তীতে ডিগ্রি তিন বছর করা হয়েছে।
প্রবিধানমালায় দু’বছরের ডিগ্রির বিষয়ে কিছু বলা হয়নি উল্লেখ করলে নজরুল ইসলাম বলেন, সেটা ঠিক আছে। কিন্তু আমিও কারেক্ট। প্রবিধানমালা ইনকারেক্ট কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি সেটা বলছি না। যারা এটা নিয়ে চিন্তা করে তাদেরকেই ভাবতে হবে। প্রয়োজনে এ বিষয়ে কোর্টে আপিল করতে পারে।
শুধু শিক্ষাগত যোগ্যতাই নয়, বীমা খাতে নজরুল ইসলামের কর্ম অভিজ্ঞতা নিয়েও প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
নজরুল ইসলাম প্রভাতি ইন্স্যুরেন্সের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে মূখ্য নির্বাহীর অব্যবহিত পরের পদে চাকরি করেছেন বলে জীবন বৃত্তান্তে দাবি করেন। কিন্তু প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে ‘মো. নজরুল ইসলাম’ নামের কোন ব্যক্তির নাম উল্লেখ নেই।
প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সের আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, কোম্পানিটির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ‘মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার’। তিনি ২০১৭ সালে কোম্পানিটির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। ২০১৮ সাল থেকে তিনি কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
তবে গত ১৬ জুন প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) সাখাওয়াত হোসেন মামুন স্বাক্ষরিত একটি সনদে উল্লেখ করা হয়, নজরুল ইসলাম ২০০৪ সালে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন।
সনদটিতে আরো উল্লেখ করা হয়, শেষ ৩ বছর তিনি কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কোম্পানির ২য় সর্বোচ্চ পদে চাকরি করেন। তবে কত তারিখ থেকে ২য় সর্বোচ্চ পদে পদোন্নাতি পান তার কোন তথ্য দেয়া হয়নি সনদটিতে।
এ বিষয়ে এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সে আমি মজুমদার নামে পরিচিত ছিলাম। এটা আমার বংশ পদবি। তবে আমার কাগজপত্রে মজুমদার পদবি ব্যবহার করা হয়নি। তাই এটা নিয়ে একটা সন্দেহ তৈরি হতে পারে। তবে আমিই নজরুল ইসলাম মজুমদার।
‘মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার’ নামের বিষয়ে প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ও সনদ ইস্যুকারী সাখাওয়াত হোসেন মামুন বলেন, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম-ই প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সের সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার। আমাদের এখানে তিনি মজুমদার নামে পরিচিত ছিলেন।
এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)'র নির্বাহী পরিচালক (যুগ্মসচিব) ও মুখপাত্র এস এম শাকিল আখতারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।