শূন্যের কোঠায় ফারইস্ট ইসলামী লাইফের সম্পদ, গ্রাহকের পাওনা পৌনে ৮শ’ কোটি টাকা

আবদুর রহমান আবির: শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের সম্পদ। একইসঙ্গে বেড়ে চলেছে কোম্পানিটির দায়ের পরিমাণ। অন্যদিকে বীমা দাবি না পাওয়া গ্রাহকদের অভিযোগের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে। এই প্রেক্ষিতে করণীয় ঠিক করতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠকে বসতে চিঠি দিয়েছে নতুন পর্ষদের চেয়ারম্যান ড. মো. রহমত উল্লাহ। গত বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) এ চিঠি দেয়া হয়।

চিঠিতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে, বর্তমানে কোম্পানির সম্পদ শূন্যের কোঠায় এবং দিনে দিনে দায়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোম্পানির আর্থিক দুর্বলতা, প্রশাসনিক জটিলতা, বেদখলকৃত সম্পদ উদ্ধার ও ভবিষ্যৎ কার্যক্রম পরিচালনা সম্পর্কে আলোচনা করতে এ বৈঠক করতে চায় বিএসইসি নিযুক্ত ফারইস্ট ইসলামী লাইফের পরিচালনা পর্ষদ।

চিঠিতে আরো বলা হয়, কোম্পানির সকল কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ইতোমধ্যে পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক করপোরেট গভর্নেন্স কোড ২০১৮ অনুযায়ী বিভিন্ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত কমিটিসমূহের মাধ্যমে কোম্পানির সংশ্লিষ্ট স্বার্থ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

তাছাড়া ইতোমধ্যে বিএসইসি, আইডিআরএ এবং বিধিবদ্ধ নিরীক্ষক কর্তৃক কোম্পানির বিগত বছরের আর্থিক বিষয়াদির নিরীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। বোর্ড অডিট কমিটি কর্তৃক কোম্পানির বিগত ১০ বছরের আর্থিক বিষয়াদিও নিরীক্ষাধীন বলে উল্লেখ করা হয়েছে  ড. মো. রহমত উল্লাহ স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে।

এর আগে ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের গ্রাহকদের পাওনার তথ্য দেয়া হয়। ওই চিঠির তথ্য অনুসারে, মেয়াদ উত্তীর্ণ বীমা দাবি বাবদ ফারইস্টের কাছে গ্রাহকদের পাওনা ৭৭৯ কোটি ৪৭ লাখ ৯৭ হাজার ৩৮৫ টাকা। সর্বমোট ১ লাখ ৪০ হাজার ৬৯৩ গ্রাহকের বীমা দাবি অনিষ্পন্ন রয়েছে।  এর মধ্যে মেয়াদ উত্তীর্ণ দাবির সংখ্যা ১ লাখ ৩৮ হাজার ৪৭টি এবং মৃত্যুদাবি ২ হাজার ৬৪৬টি।

ওই চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ আকারে আসা প্রায় ১৩শ’ বীমা দাবির মধ্যে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ পরিশোধ করেছে ৫৭০টি বীমা দাবি। এ ছাড়াও ৩৩৯টি বীমা দাবির অভিযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে রয়েছে, যেগুলোর তথ্য বীমা কোম্পানিটির কাছে পাঠানোর অপেক্ষায় রয়েছে।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিসি) মোহাম্মদ আলমগীর কবিরের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে একাধিকবার কল দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি কথা বলার বিষয় উল্লেখ করে মেসেজ পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।

উল্লেখ্য, গত ১ সেপ্টেম্বর ফারইস্ট ইসলামী লাইফের পরিচালনা পর্ষদ অপসারণ করে নতুন ১০ জন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) । বিনিয়োগকারী, পলিসিহোল্ডার এবং সামগ্রিক পুঁজিবাজারের সুরক্ষার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষাবিদ ড. মো. রহমত উল্লাহকে বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত করে পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদ। ড. মো. রহমত উল্লাহ বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের সদস্য এবং বেসরকারি মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেডের স্বতন্ত্র পরিচালক।

বিএসইসির তথ্য অনুসারে, পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদ ৬ মাসের মধ্যে কোম্পানির শীর্ষ ব্যবস্থাপনা পুনর্গঠন করাসহ করপোরেট ক্যাশ ও সম্পদ ফিরিয়ে আনবে এবং যারা গত ১০ বছরে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির আর্থিক অপরাধ এবং মানি লন্ডারিং করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

পরিচালনা পর্ষদের অন্য সদস্যরা হলেন- মোহাম্মদ সানাউল্লাহ এন্ড এসোসিয়েটস এর সিইও এন্ড লিড কনসালট্যান্ট এবং সিঙ্গান বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালক মোহাম্মদ সানাউল্লাহ, এফসিএ; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং এন্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম; অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব এবং জীবন বীমা করপোরেশনের জেনারেল ম্যানেজার মো. মোফাজ্জল হোসেন, এনডিসি; কর্নেল গাজী মো. খালিদ হোসেন, পিএসসি (অব.);

এসএমএসি ও এসএসএসি’র পার্টনার স্নেহাশিষ বড়ুয়া, এফসিএ; একাত্তর মিডিয়া লিমিটেডের এমডি এন্ড চীফ এডিটর মোজাম্মেল হক; জি৭ সিকিউরিটিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও পদ্মা ওয়েল কোম্পানির ডাইরেক্টর এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের কনসালট্যান্ট সুজাদুর রহমান; জনতা ব্যাংকের ডিএমডি জিকরুল হক এবং নর্দান জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি এবং এফআইএলআইসিল চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম চৌধুরী।