জাতীয় বীমা দিবস এখন ‘ক’শ্রেণীতে, উচ্ছ্বসিত বীমা খাত

আবদুর রহমান আবির: জাতীয় বীমা দিবসকে ‘খ’ শ্রেণী থেকে ‘ক’শ্রেণীতে উন্নীত করেছে সরকার। গত ১৩ অক্টোবর এ সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করেছে সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এ নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন দেশের লাইফ ও নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর মালিক ও মুখ্য নির্বাহীসহ খাত সংশ্লিষ্টরা।

তাদের প্রত্যাশা, জাতীয় বীমা দিবসকে ‘খ’ শ্রেণী থেকে ‘ক’ শ্রেণীতে উন্নীত করায় সাধারণ মানুষের জন্য বীমার গুরুত্ব অনুধাবন করা আরো সহজ হবে। ফলে উন্নয়ন ত্বড়ান্বিত হবে বীমা খাতের। বাড়বে প্রচার-প্রচারণা। একইসাথে বীমা গ্রাহকদের সেবা প্রাপ্তি আরো সহজ হবে। স্বচ্ছতা আসবে বীমা ব্যবসায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সভায় জাতীয় বীমা দিবসকে ‘খ’ শ্রেণী থেকে ‘ক’ শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে দিবসটিকে ‘ক’ শ্রেণীভুক্ত করার প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়।

গত ১৩ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে বিষয়টি যথাযথ পরিপালনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাধারণ অধিশাখা। একইসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ১৫ জানুয়ারি ২০২০ তারিখের বীমা দিবস সংক্রান্ত পরিপত্রটি বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।

এদিকে বিষয়টি অবগতি ও প্রয়োজনীয় কার্যার্থে বুধবার (২৬ অক্টোবর) সকল লাইফ ও নন-লাইফ বীমা কোম্পানি এবং ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন, ইন্স্যুরেন্স একাডেমি, ইন্স্যুরেন্স ফোরাম ও সার্ভেয়র এসোসিয়েশনকে চিঠি পাঠিয়েছে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) ।

এর আগে ২০২১ সালের ১ মার্চ জাতীয় বীমা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘জাতীয় বীমা দিবস’কে ‘ক’ শ্রেণীর দিবস হিসেবে ঘোষণা দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি দাবি জানান বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ)’র প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তথ্য মতে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬০ সালের ১ মার্চ তৎকালীন আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে যোগদান করেছিলেন। তার এ যোগদানের দিনটিকে জাতীয় পর্যায়ে স্মরণীয় করে রাখতে ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সুপারিশক্রমে প্রতিবছর ১ মার্চকে জাতীয় বীমা দিবস ঘোষণা করে সরকার।  

বীমা খাতের উন্নয়ন ও বীমা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০২০ সালের ১ মার্চ প্রথমবারের মতো দেশব্যাপী জাতীয় বীমা দিবস পালিত হয়। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় বীমা দিবসের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রতি বছর জাতীয় বীমা দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনে দেশের সকল বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নানান কর্মসূচি গ্রহণ করে সরকার। শুরুতে দিবসটি 'খ' শ্রেণীতে পালনের জন্য অনুমোদন ছিল। গত ২ জানুয়ারি দিবসটিকে ‘ক’ শ্রেণীতে উন্নীতকরণের আবেদন জানায় আইডিআরএ।

জাতীয় বীমা দিবসকে ‘ক’ শ্রেণীতে উন্নীত করার বিষয়ে মুখ্য নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরাম (বিআইএফ)’র ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম নুরুজ্জামান বলেন, বীমা খাতের জন্য এটি একটি বিশাল অর্জন। আমরা মনে করি, সরকার এর মাধ্যমে বীমা খাতের প্রতি আরো গুরুত্ব দিচ্ছে।

এস এম নুরুজ্জামান বলেন, জাতীয় বীমা দিবসকে ‘খ’ শ্রেণী থেকে ‘ক’ শ্রেণীতে উন্নীত করায় সাধারণ মানুষের জন্য বীমা খাতের গুরুত্ব অনুধাবন করা আরো সহজ হবে। এর ফলে বীমা খাতের প্রচার-প্রচারণা আরো বাড়বে। ত্বড়ান্বিত হবে বীমা খাতের উন্নয়ন। একইসাথে বীমা গ্রাহকদের সেবা প্রাপ্তি আরো সহজ হবে। স্বচ্ছতা আসবে বীমা ব্যবসায়।

জাতীয় বীমা দিবসকে ‘খ’ শ্রেণী থেকে ‘ক’ শ্রেণীতে উন্নীত করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরাম এবং জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এস এম নুরুজ্জামান। তিনি আরো বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বীমা পেশায় যুক্ত ছিলেন। তার পদচারণায় ধন্য বীমা খাত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ খাতের উন্নয়নে সর্বোচ্চ আন্তরিক। এ জন্য আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞ।

বীমা মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন (বিআইএ)’র প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট নাসির উদ্দিন আহমেদ (পাভেল) বলেন, এটা বীমা খাতের জন্য একটি বিশাল সংবাদ; বিশাল প্রাপ্তি। দ্বিতীয় জাতীয় বীমা দিবসের অনুষ্ঠানে আমাদের প্রেসিডেন্ট মহোদয় দিবসটিকে ‘ক’ শ্রেণীতে উন্নীত করার দাবি জানিয়েছিলেন। প্রায় দেড় বছর পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে সদয় সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।

তিনি বলেন, এতে করে শুধু বীমা খাতের গুরুত্বই বৃদ্ধি পায়নি বরং আমরা যারা বীমা খাতে কাজ করি বা এর সাথে সংশ্লিষ্ট তাদের দায়িত্বশীলতাও আরো বেড়ে গেছে। এ খাতে যেসব ভুল রয়েছে সেগুলো আমরা সংশোধন করব। এর ফলে বীমা খাতের প্রসার হবে; মানুষ সেবা পাবে।

নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, বীমা সেবা যাতে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পারি; অন্তত আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে যেভাবে সবাই বীমাকে দেখে আমাদের দেশেও যাতে সেভাবে বীমার প্রতি ইতিবাচক ইমেজ তৈরি হয় সেটার জন্য আমরা কাজ করব।

বিআইএ’র এই ভাইস প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, দেশের অর্থনৈতিক খাতের মধ্যে একমাত্র বীমা খাতেই জাতীয় দিবস আছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বীমার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে। তিনি বীমা কোম্পানির মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে কাজ করেছেন। এটা আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় পাওয়া।