১২ কোটি টাকা লেনদেন নিয়ে স্বদেশ লাইফের ২ চেয়ারম্যানের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নুরুল আলম চৌধুরীকে ১২ কোটি টাকা দিয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান মো. মাকসুদুর রহমান। নুরুল আলম চৌধুরীকে এ টাকা তিনি দিয়েছেন অনুদান হিসেবে। কিন্তু নুরুল আলম চৌধুরী কোন রশিদ দেননি। মাকসুদুর রহমানের দাবি- এ টাকা তিনি দিয়েছেন শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রকে অনুদান দেয়ার জন্য। তিনি নুরুল আলম চৌধুরীকে এ বিষয়ে চিঠি লেখেন গত বছরের ২৬ এপ্রিল।

তবে এ অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই বলেছেন প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নুরুল আলম চৌধুরী। একই সাথে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন কেন আমাকে টাকা দিবেন।

অন্যদিকে মাকসুদুর রহমান দাবি করেছেন এই টাকা পে-অর্ডারের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে। তার প্রমাণ তাদের কাছে আছে।

মাকসুদুর রহমানের গত ২৬ এপ্রিলের ওই চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৭ বছর নুরুল আলম চৌধুরী কোম্পানির চেয়ারম্যান থাকাকালে সর্বোচ্চ ৩০৮ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় করা হয়েছে। অস্বাভাবিক এই ব্যয়ের জন্য নুরুল আলম চৌধুরীকে দায়ী করেন মাকসুদুর রহমান।

নুরুল আলম চৌধুরীকে মাকসুদুর রহমানের লেখা এই চিঠির ২ মাস পরে ১ জুন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন নুরুল আলম চৌধুরী। তিনি অভিযোগ করেন ২০২০ সাল থেকে ২০২২ সাল এই ৩ বছরে অস্বাভাবিক ব্যয়, মন্দ ব্যবসাসহ বিভিন্ন প্রকার অনিয়ম হয়েছে।

নুরুল আলম চৌধুরীর অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে গত বছর ২২ আগস্ট ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে আইডিআরএ। কমিটি গত ১০ অক্টোবরে প্রতিবেদন দাখিল করে।

তদন্তে  শুরু থেকেই আইন লঙ্ঘন করে অবৈধ ব্যয়, মাত্রাতিরিক্ত কমিশন প্রদান,  বর্তমান মুখ্য নির্বাহীকে অবৈধভাবে ইনসেনটিভ প্রদান কোম্পানির মুখ্য নির্বাহীর ব্যক্তিগত প্রিমিয়ামের টাকা লেনদেনের প্রমাণ পেয়েছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

তবে নুরুল আলম চৌধুরী কোম্পানির চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় যে পরিমাণ অবৈধ ব্যয় হয়েছে বর্তমানে তা কম হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় তদন্ত প্রতিবেদনে।

এছাড়া তদন্ত প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠার ৫ বছরের মধ্যে শেয়ারবাজারে অন্তর্ভুক্ত হতে না পারা, পরিশোধিত মূলধন হতে উত্তোলনকৃত ৫ কোটি টাকা পুণর্ভরণ না করা, কোম্পানির দায় মূল্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণে কোম্পানিটি ব্যর্থ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

সেই সাথে শুরু থেকেই যারা অবৈধ ব্যয়, মাত্রাতিরিক্ত কমিশন প্রধান ও কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় অনিয়মের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করে তদন্ত দল।

নুরুল আলম চৌধুরীকে ১২ কোটি টাকা দেয়া সহ কোম্পানির বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে স্বদেশ ইসলামী লাইফের চেয়ারম্যান মো. মাকসুদুর রহমানের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। এই সময়ে মাকসুদুর রহমান এই প্রতিবেদককে বলেন, কোম্পানির অনুমোদনের সময় আমরা দু’জন স্পন্সর ডাইরেক্টর ৬ কোটি টাকা করে মোট ১২ কোটি টাকা নুরুল আলম চৌধুরীকে দিয়েছিলাম। পে-অর্ডারের মাধ্যমে এই টাকা দেয়া হয়েছিল। তিনি (নুরুল আলম চৌধুরী) বলেছিলেন কোম্পানির অনুমোদন নেয়ার জন্য এই টাকা দিতে হবে। আমাদের কাছে এই টাকা দেয়ার ডকুমেন্টস আছে। কয়েক দিনের মধ্যে পে-অর্ডারের কপি ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি'কে পাঠাবেন বলেও জানান।

১২ কোটি টাকা অনুদান দেয়ার বিষয়ে স্বদেশ ইসলামী লাইফের পরিচালক ও প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নুরুল আলম চৌধুরী বলেন, কেউ অভিযোগ করলেই তো সেটা প্রতিষ্ঠিত হয় না, এর জন্য তাকে অবশ্যই নথিপত্র দেখাতে হবে। তাছাড়া কেন-ইবা আমাকে টাকা দিবে এবং কিসের ভিত্তিতে টাকা দিবে- এই প্রশ্নের জবাব কোথায়!

তিনি বলেন, কোম্পানির বর্তমান চেয়ারম্যান (মাকসুদুর রহমান) আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তুলেছেন প্রকৃতপক্ষে সেটার কোন ভিত্তি নেই। এই অভিযোগের বিষয়ে আমি বর্তমান চেয়ারম্যানকে প্রশ্নও করেছি, কিন্তু তিনি কোন জবাব দিতে পারেননি। তাছাড়া, কোম্পানি প্রতিষ্ঠার সময় আমি বর্তমান চেয়ারম্যানকে চিনতাম-ই না। তাকে কোম্পানিতে নেয়া হয়েছে মূলত বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যানের সুপারিশে।

তবে এমন বক্তব্যের বিষয়ে মাকসুদুর রহমান বলেছেন, কোম্পানি প্রতিষ্ঠার সময় তার সাথে আমিসহ ৪ জন মিটিং করেছি। আমাকে যদি তিনি (প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান) না চিনে থাকেন তাহলে মিটিং করলেন কিভাবে! কয়েক দফা মিটিং করার পরই তো আমরা তাকে অনুদানের জন্য ১২ কোটি টাকা দিয়েছি।

নুরুল আলম চৌধুরী বলেন, যখন ২০২০ ও ২০২১ সালে কোম্পানিতে অস্বাভাবিক ব্যয় বৃদ্ধি, মন্দ ব্যবসা ও বিভিন্ন প্রকার আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তুলেছি তখনই আমার বিরুদ্ধে এ ধরণের অভিযোগ আনা হয়েছে। মূলত বর্তমান মুখ্য নির্বাহীর দুর্নীতি ও অযোগ্যতাকে প্রশ্রয় বা আড়াল করতে এ অভিযোগ আনা হয়েছে। সঠিকভাবে তদন্ত হলে প্রকৃত বিষয়টি বেরিয়ে আসবে

আর্থিক অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে মাকসুদুর রহমান বলেন, কোম্পানির ব্যবসা পরিস্থিতি তুলনা করলেই তার অভিযোগের জবাব পাওয়া যায়। তার (নুরুল আলম চৌধুরী) সময় ৩৩৮ টাকা (প্রতি একশ’ টাকায়) দিয়ে শুরু হয়েছে ব্যয় এবং যাওয়ার সময় ব্যয় রেখে গেছেন ১২৭ টাকা। আমরা সেই ব্যয় ১০৩ টাকায় (প্রতি একশ’ টাকায়) এনেছি। কিন্তু কোভিডের কারণে সেটা ১১৪ টাকা আছে, তবে সেটা আবার কমে যাবে।