সহযোগিতা না করে মুখ্য নির্বাহীকে সাময়িক বরখাস্ত করল সোনালী লাইফের পরিচালনা পর্ষদ

নিজস্ব প্রতিবেদক: নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা অনুসারে সহযোগিতা না করে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মীর রাশেদ বিন আমানকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ। শনিবার (১৩ জানুয়ারি) বীমা কোম্পানিটির বোর্ডসভায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদনের পরই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বীমা কোম্পানিটি।

এর আগে ১০ জানুয়ারি (বুধবার) সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে মীর রাশেদ বিন আমানের দায়িত্ব পালনে কোনরূপ বাধা সৃষ্টি না করতে বীমা কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদকে নির্দেশ দেয় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) । বীমা কোম্পানিটির চেয়ারম্যানসহ সকল পরিচালককে পাঠানো এক চিঠিতে এই নির্দেশ দেয়া হয়।

আইডিআরএ’র ওই চিঠিতে আরো বলা হয়, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব পালন করতে না দেয়া আইনসম্মত নয় এবং তা করপোরেট গভর্ন্যান্স নির্দেশিকার পরিপন্থি। তাছাড়া এতে কর্তৃপক্ষের নির্দেশিত চলমান তদন্ত কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ।

গত ৯ জানুয়ারি পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এবং বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’কে পাঠানো এক চিঠিতে মীর রাশেদ বিন আমান অভিযোগ করেন- পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে তাকে কোম্পানির অফিসে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না, তার কক্ষ তালাবদ্ধ রাখা হয়েছে এবং কোম্পানির সফটওয়্যারে তার প্রবেশাধিকার বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে তিনি দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না।

এর পরই সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যানসহ কোম্পানিটির সকল পরিচালককে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনে কোনরূপ বাধা সৃষ্টি না করে সহযোগিতা করার নির্দেশ দেয় আইডিআরএ। বীমা গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষায় এই নির্দেশ দেয়া হয় বলেও চিঠিতে উল্লেখ করে কর্তৃপক্ষ।

২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিভিন্ন আর্থিক অনিয়ম খতিয়ে দেখতে নিরীক্ষক নিয়োগ দেয় আইডিআরএ। অডিট ফার্ম হুদাভাসী চৌধুরী এন্ড কোং-কে এই নিরীক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। বীমা কোম্পানিটির ১৭টি বিষয়ে তদন্ত পরিচালনা করে ৩০ দিনের মধ্যে কার্যক্রম সম্পন্নের নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ।

এর আগে (২৮ ডিসেম্বর) ‘মূলধন পরিশোধ না করার অভিযোগ কুদ্দুস পরিবারের পরিচালকদের বিরুদ্ধে: ফ্লোর বিক্রি করে সোনালী লাইফ থেকে ২১২ কোটি টাকা নিয়েছেন চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস, অনুমোদন নেই আইডিআরএ’র’ এই শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি। ওই সংবাদ প্রকাশের পর বীমা কোম্পানিটিতে নিরীক্ষক নিয়োগ দেয় আইডিআরএ।

এ বিষয়ে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মীর রাশেদ বিন আমান ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’কে বলেন, গতকালের বোর্ডসভায় আমাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে শুনেছি। তবে কি কারণে বরখাস্ত করা হয়েছে তা আমাকে জানানো হয়নি। তবে আইন অনুসারে যেসব কারণে কোম্পানি আমাকে বরখাস্ত করতে পারে এ ধরণের কোন কর্মকাণ্ডের সাথে আমি জড়িত নই।

বীমা কোম্পানিটির চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস এ বিষয়ে বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে গতকাল (১৩ জানুয়ারি) কোম্পানির বোর্ডসভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হবে। বোর্ডসভার সিদ্ধান্তের নথি আজ আইডিআরএ’র কাছে পাঠানো হবে। এরপর আইডিআরএ থেকে অনুমোদন পেলে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বরখাস্তের সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।

মীর রাশেদ বিন আমান এখনো কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে রয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস বলেন, তিনি এখনো কোম্পানির দায়িত্বে রয়েছেন। তবে আইডিআরএ বোর্ডসভার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করলেই তার বরখাস্ত কার্যকর হবে।