২ দিনের মধ্যে শেয়ার সার্টিফিকেট জমা না দিলে হোমল্যান্ডের ৫ পরিচালকের শেয়ার নেই বলে বিবেচিত হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক: হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের লন্ডন প্রবাসী ৫ পরিচালককে তাদের শেয়ার সার্টিফিকেটের কপি ২ দিনের মধ্যে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষে পাঠাতে বলা হয়েছে। অন্যথায় তাদের ‘শেয়ার সার্টিফিকেট নেই’ মর্মে বিবেচনা করা হবে বলে ওই ৫ পরিচালককে পৃথক পৃথক ই-মেইল বার্তায় জানিয়ে দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির তদন্ত দল।
বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক ও এ সংক্রান্ত তদন্ত দলের সদস্য মো. আবু মাহমুদ এই ই-মেইল বার্তা পাঠিয়েছেন।
ই-মেইল বার্তা পাঠানোর পর এরইমধ্যে দু’দিন শেষ হয়েছে।
তবে হোমল্যান্ড লাইফের লন্ডন প্রবাসী ওই ৫ পরিচালকের শেয়ার সার্টিফিকেটের বিষয়টি আগামীকাল রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানিয়েছে আইডিআরএ’র সংশ্লিষ্ট সূত্র।
বীমা খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হোমল্যান্ড লাইফের ইস্যুকৃত মূল শেয়ার সার্টিফিকেট দেখাতে না পারলে তারা কোম্পানিটির পরিচালক পদে থাকতে পারবেন না এবং বিগত দিনগুলোতে তাদের পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন অবৈধ বলে বিবেচিত হবে।
কর্তৃপক্ষের ই-মেইল বার্তায় বলা হয়েছে, হোমল্যান্ড লাইফের ৫ পরিচালকের শেয়ার সার্টিফিকেট নিয়ে একাত্তর টেলিভিশনে প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে তদন্ত পরিচালনার জন্য কর্তৃপক্ষের পরিচালক এস এম মাসুদুল হককে দলনেতা করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির কাছে দেয়া লিখিত বক্তব্যে হোমল্যান্ডের ওই ৫ পরিচালক অনেক বিষয়ের অবতারণা করেছেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে কিছু নথি প্রদান করেছেন।
কিন্তু তদন্তের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট শেয়ার সার্টিফিকেটের অনুলিপি প্রদান করেননি হোমল্যান্ডের ওই ৫ পরিচালক।
এদিকে হোমল্যান্ড লাইফের অফিস পরিদর্শনকালে কর্তৃপক্ষের তদন্ত দল জানতে পেরেছে, ইংল্যান্ডে বসবাসকারী ওই ৫ পরিচালকের নামে ইস্যুকৃত কোন শেয়ার সার্টিফিকেট বীমা কোম্পানিটিতে নেই।
হোমল্যান্ড লাইফের ওই ৫ পরিচালক ইংল্যান্ডে বসবাস করায় তাদের সাথে যোগাযোগের জন্য বীমা কোম্পানিটি থেকে ই-মেইল আইডি ও ফোন নম্বর প্রদান করা হয়েছে, যার সূত্র ধরে তাদের সাথে ই-মেইলে যোগাযোগ করা হয়েছে বলে ই-মেইল বার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে।
অপরদিকে গ্রাহকদের জমা করা ১০৪ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা তদন্তে হোমল্যান্ডের লন্ডন প্রবাসী ওই ৫ পরিচালকসহ ৬০ জনকে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) । আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ৭টি ধাপে তাদেরকে হাজির হয়ে প্রয়োজনীয় বক্তব্য উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে।
হোমল্যান্ড লাইফের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য প্রদানের জন্য ৯০ দিন সময় চাওয়া হয়েছে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি দুদকে এই চিঠি পাঠান বীমা কোম্পানিটির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা।
তবে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য প্রদানে ৯০দিন সময় চাওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ আইন পরিপন্থী এবং মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দাখিলের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে বলে মন্তব্য করেছে দুদক। একইসঙ্গে হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতার দায়ভার হোমল্যান্ডের মুখ্য নির্বাহীর ওপর বর্তাবে বলে হুশিয়ারি দেয়া হয়েছে।
পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুনরায় অনুরোধ জানিয়েছে দুদক। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি এ সংক্রান্ত চিঠি বীমা কোম্পানিটিকে পাঠানো হয়েছে।
২০২৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর হোমল্যান্ড লাইফের ৫ পরিচালকের শেয়ার সার্টিফিকেট নিয়ে অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশ করে একাত্তর টেলিভিশন। এতে বলা হয়, অভিযুক্ত ওই ৫ পরিচালকের নামে হোমল্যান্ড লাইফে একটিও শেয়ার ছিল না। তারা যেসব শেয়ার দেখিয়ে পরিচালক হয়েছিলেন আসলে সবগুলোর শেয়ারের মালিক কোম্পানির আরেক উদ্যোক্তা পরিচালক কাজী এনাম উদ্দিন আহমেদ।
যিনি নিজের ৮০ হাজার শেয়ার ২০০৫ সালে তৎকালীন ওরিয়েন্টাল ব্যাংক ও বর্তমানের আইসিবি ইসলামি ব্যাংক লিমিটেডে বন্ধক রেখে ঋণ নিয়েছিলেন। বন্ধক থাকায় এসব শেয়ার অন্য কারও কাছে বিক্রির সুযোগ নেই।
এ কারণে অরিজিনাল শেয়ার হারানোর নাটক সাজিয়ে দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে বীমা কোম্পানিটির পরিচালক পদে রয়েছেন। এই সময়ে কোম্পানিটি থেকে বাগিয়ে নিয়েছেন লভ্যাংশ, বোর্ড মিটিং ফি, ঢাকা-লন্ডন আসা যাওয়ার বিমান ভাড়াসহ কোটি কোটি টাকা।
হোমল্যান্ড লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডলের বরাত দিয়ে সংবাদে আরো বলা হয়, ২৬ বছর বয়সী হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সে বর্তমানে ১৯ জন পরিচালক। এর মধ্যে ৯ জন থাকেন লন্ডনে। ১৭ বছর ধরে পরিচালনা পর্ষদে আছেন লন্ডন প্রবাসী বাংলাদেশী জামাল মিয়া, কামাল মিয়া, আব্দুল হাই, আব্দুল আহাদ ও জামাল উদ্দিন।
এর মধ্যে দুই পরিচালক আব্দুল হাই ও আব্দুল আহাদের শেয়ার সার্টিফিকেট রহস্যজনকভাবে একই দিনে হারিয়ে যায়। দিনটি ছিলো ২০১৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। কিন্তু ঘটনার দেড় বছর পর অর্থাৎ ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে থানায় জিডি করেন শেয়ার হারানো ওই দুই ভাই।
হোমল্যান্ড লাইফের লন্ডন প্রবাসী অপর দুই পরিচালক জামাল মিয়া ও কামাল মিয়া। তাদের কোম্পানির মালিকানার শেয়ারগুলোও একই দিনে হারিয়ে যায়। ২০১৪ সালের ১০ মে তাদের শেয়ার হারালেও সিলেটের বালাগঞ্জ থানায় তারা জিডি করেন ঘটনার ১৫ দিন পর।
প্রবাসী আরেক পরিচালক জামাল উদ্দিনেরও ১০ হাজারটি শেয়ার সার্টিফিকেট হারিয়ে যায় ২০১৪ সালের মে মাসে। এর দুই বছর পর ২০১৬ সালের ১২ মে একই দিনে একই পত্রিকায় হারানো বিজ্ঞপ্তি দেন ওই পাঁচ প্রবাসী পরিচালক।
উল্লেখ্য, হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের লন্ডন প্রবাসী ৫ পরিচালকের শেয়ার সার্টিফিকেট নিয়ে গত ১৯ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে “সার্টিফিকেট হারাবে তা আগেই জানতেন সাবেক চেয়ারম্যান সালেহ হোসেন: ব্যাংকে বন্ধক রাখা শেয়ার হারিয়ে গেছে দাবি করে হোমল্যান্ড লাইফের পর্ষদে ৫ পরিচালক” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি।
পরবর্তীতে গত ২৪ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে “হোমল্যান্ড লাইফের শেয়ার সংক্রান্ত নিরীক্ষা প্রতিবেদন: চেয়ারম্যানসহ ৫ পরিচালকের শেয়ারের বৈধতা নেই” শিরোনামে আরেকটি সংবাদ প্রকাশ করে ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি। এসব সংবাদে হোমল্যান্ড লাইফের ওই ৫ পরিচালক কিভাবে শেয়ার ধারণ করেছেন সে বিষয়টি তুলে ধরা হয়।