সর্বোচ্চ অতিরিক্ত ব্যয় উন্নয়ন কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতায়

৪১% নন-লাইফ বীমা কোম্পানি অতিরিক্ত ব্যয় করেছে ২০২২ সালে: আইডিআরএ

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের নন-লাইফ বীমা খাতের ৪১.৩০ শতাংশ কোম্পানি ২০২২ সালে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় করেছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয়েছে কোম্পানিগুলোর উন্নয়ন কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা খাতে, যা মোট অতিরিক্ত ব্যয়ের ৮০ শতাংশ। এমন তথ্য প্রকাশ করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) ।

বুধবার (১৫ মে) সকালে কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর পরিচালকদের সাথে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়। কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারীর সভাপতিত্বে এতে সম্মানিত অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন (বিআইএ)’র প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন।

কর্তৃপক্ষের পাঠানো এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর ‘ব্যবস্থাপনা ব্যয়’ নির্ধারিত সীমার মধ্যে রাখার ক্ষেত্রে সমস্যা ও করণীয় বিষয়ে এ সভা আয়োজন করা হয়। এতে কর্তৃপক্ষের সকল সদস্য, নির্বাহী পরিচালক, বিআইএ’র মনোনীত প্রতিনিধি, সকল নন-লাইফ বীমা কোম্পানির চেয়ারম্যান ও পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ  পরিদর্শন ও তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কোম্পানির আকারের তুলনায় অত্যাধিক জনবলের কারণেই ব্যয় বেশি হয়। পারিবারিক সদস্য, আত্মীয়দের জনবলে নিয়োগ করা হয় যারা প্রকৃতপক্ষে কর্মরত থাকেন না। চাকরি না করেও বেতন-ভাতাদি খাতে উক্ত ব্যয় হিসেবে প্রদর্শন করা হয়।

সভায় উন্মুক্ত আলোচনায় উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় তুলে ধরা হয়। বিভিন্ন কোম্পানির চেয়ারম্যান, প্রতিনিধিগণ এ বিষয়ে বিভিন্ন  প্রতিবন্ধকতা  এবং তা উত্তরণের জন্য পরামর্শ প্রদান করেন। আলোচনায় মূলত কোম্পানির অনুমোদিত ব্যবস্থাপনা ব্যয় আইন অনুযারী সীমার মধ্যে রাখার ক্ষেত্রে কোম্পানির চেয়ারম্যানদের নিজেদের ইতিবাচক মানসিকতা দ্বারা নিজেদের সেক্টরকে উন্নত করার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করার ক্ষেত্রে অভিমত প্রকাশ করেন।

কোম্পানির প্রতিনিধিরা আরও জানান যে, কোম্পানিগুলো নিজেদের মধ্যে এক হীন প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। তারা বীমা গ্রাহকগণকে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে কমিশন বা প্রিমিয়াম প্রদানে ছাড় দিয়ে থাকেন। যা আর্থিক বিবরণীতে ‘ব্যবস্থাপনা ব্যয়’ হিসেবে প্রতিফলিত হয়। এই ধারা বন্ধ হওয়া উচিত বলে আলোচকরা অভিমত পোষণ করেন। একইসঙ্গে তারা এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের নিয়মতান্ত্রিক হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন বলেন, কোম্পানিগুলো সম্পূর্ণ অটোমেশনের অন্তর্ভুক্তকরণ অনেকাংশে এই সমস্যার সমাধান হতে পারে। এছাড়াও ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা দ্বারা জনসচেতনা বৃদ্ধি করা উচিত বলে তিনি মনে করেন।

সমাপনী বক্তব্যে আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, বীমা শিল্পের উন্নয়ন ও প্রসারে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ সর্বদা চেষ্ঠা করছে। প্রোডাক্ট ডাইভারসিটি ও প্রোডাক্ত ডেভেলপমেন্টের জন্য বিভিন্ন সভা-সেমিনারের আয়োজন করা হয় এবং স্টার্টআপ ইন্স্যুরটেক এর সাথে ডিজিটালভাবে নতুন নতুন বীমা প্রোডাক্ট এর ধারনা নেয়া হয়।

এছাড়াও কৃষি বীমা, মৎস্য বীমা, গৃহায়ন বীমা, ব্যাংকাস্যুরেন্স চালু করা হয়েছে। কোর সফটওয়্যার এর ক্লাউডের মাধ্যমে কোম্পানিগুলোকে অটোমেশনে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং সম্পূর্ণভাবে অটোমেশনের আওতায় আনার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।

তিনি আরোও বলেন, বীমা কোম্পানির দায়িত্ব রিসার্চ ডেভেলপমেন্টের জন্য ব্যয় বা ইনভেস্টমেন্ট করা। নতুন নতুন পলিসি উদ্ভাবন করা। মূলত বীমা শিল্পের সার্বিক উন্নয়নে বীমা কোম্পানির ভূমিকাই মূখ্য। বীমা কোম্পানির আইনের সঠিক চর্চা এবং ইতিবাচক মানসিকতার দ্বারা বিভিন্ন সম্স্যার সমাধান করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সকল প্রকার সহযোগিতা দেয়া হবে বলে তিনি উপস্থিত সকলকে আশ্বস্থ করেন।