সোনালী লাইফের চেয়ারম্যান হলেন মইনুল ইসলাম

নিজস্ব প্রতিবেদক: সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র সাবেক সদস্য মইনুল ইসলামকে। এ ছাড়াও কোম্পানিটির অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ডের স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সাবেক গ্রেড-১ কর্মকর্তা মো. জাফর ইকবাল এনডিসি।

বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের পরিচালক (উপসচিব) আহম্মদ এহসান উল হান্নান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়।

চিঠিতে বলা হয়েছে, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রচলিত বিধি-বিধান অনুসরণ করে অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ড গঠন করবেন।  

তবে এই বোর্ড গঠনের ক্ষেত্রে সোনালী লাইফের দায়ের করা সকল রিট মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। সেই সাথে নিয়োগকৃত অডিট ফার্মকে অডিট করতে দিতে হবে। এসব শর্ত পরিপালনের বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ডকে একটি অঙ্গীকারনামা দিতে হবে এবং এই অঙ্গীকারনামা বোর্ড গঠনের ৭ দিনের মধ্যে আইডিআরএ’র কাছে দাখিল করতে হবে।

তবে চিঠিতে অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ডে কারা থাকতে পারবেন বা সাসপেন্ডেড পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা থাকতে পারবেন কিনা সে বিষয়ে কোন ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি।

বীমা খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সোনালী লাইফের ১৮৭ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় অভিযুক্তদের এই অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করা হলে তা হবে খুবই ন্যাক্কারজনক ঘটনা। যারা অর্থ আত্মসাতে জড়িত তাদের নিয়ে যদি বোর্ড গঠন করা হয় তাহলে অর্থ আত্মসাতে জড়িতরা পার পেয়ে যাবে। যা বীমা খাতে একটি নজিরবিহীন ঘটনার জন্ম দেবে।

উল্লেখ্য, ১৮৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সোনালী লাইফের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে দিয়ে চলতি বছরের ২১ এপ্রিল প্রশাসক নিয়োগ করে আইডিআরএ। পরে ১৮৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২৫ জুলাই মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদক।

অপর দিকে জুলাই মাসেই সোনালী লাইফের ১০ বছরের ব্যবসায়ীক কর্মকান্ডের দুর্নীতি ও অনিয়ম ক্ষতিয়ে দেখতে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান হুদাভাসিকে নিয়োগ করে আইডিআরএ। এছাড়া বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনও সোনালী লাইফের অনিয়ম দুর্নীতি ক্ষতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করে।

তবে বীমা কোম্পানিটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসককে তদন্ত কাজে বাধা সৃষ্টির অভিযোগ ওঠে।  তারা আইডিআরএ চেয়ারম্যান ও সোনালী লাইফের প্রশাসকের পদত্যাগের দাবিতে কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ের সামনে বেশ কয়েক দিন ধরে হট্টগোল করে আসছিল। সর্বশেষ গত ২০ আগস্ট তারা আইডিআরএ কার্যালয় দিনভর অবরুদ্ধ করে রাখে। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে রাত ১টায় দুই শর্তে সমঝোতা হয়।  

সমঝোতার শর্ত দু’টি ছিল- সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রশাসক প্রত্যাহার ও পরিচালনা পর্ষদ পুনর্বহালের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে একটি সভা করার জন্য কর্তৃপক্ষ হতে পত্র প্রেরণ করা এবং কোম্পানিটির কর্মকর্তা-কর্মচারী ও উন্নয়ন কর্মীদের পূর্বের মতো সুযোগ-সুবিধা বহাল ও বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য প্রশাসককে নির্দেশনা দেয়া।

এই প্রেক্ষিতে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে অন্তবর্তীকালীন বোর্ড গঠনের নির্দেশনা দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। যুগ্মসচিব মো. জাহিদ হোসেন স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি গত ২ সেপ্টেম্বর নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ বীমা কোম্পানিটিকে পাঠানো হয়।  পর্যবেক্ষক নিয়োগসহ ৪টি নির্দেশনা দেয়া হয় ওই চিঠিতে।