হোমল্যান্ড লাইফের সংবাদ সম্মেলন

আনন্দ-ফূর্তির জন্য সিলেটে বোর্ডসভা ডেকেছিলেন হোমল্যান্ডের প্রবাসী পরিচালকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: গ্রাহকদের পাওনা টাকা দিতে পারছেন না। কোম্পানির আর্থিক অবস্থাও খারাপ। এরপরও আনন্দ-ফূর্তি করতেই সিলেটে বোর্ড সভা ডেকেছিলেন হোমল্যান্ড লাইফের প্রবাসী পরিচালকরা। আজ মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান কোম্পানিটির চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন।

গত সপ্তাহে ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহীসহ ২ কর্মকর্তাকে অব্যাহতি দিয়ে তাদের স্থলে অর্থ আত্মাসাৎ মামলার আসামিকে নিয়োগ দেন কোম্পানিটির চেয়ারম্যান। বোর্ডসভার অনুমোদন ছাড়াই ২ কর্মকর্তাকে অব্যাহতি এবং নতুন করে একজনকে নিয়োগ দেয়ায় সপ্তাহখানিক ধরেই চলছে অস্থিরতা।

এর মধ্যেই অব্যাহতি দেয়া সেই কর্মকর্তারাই অফিস করছেন- এই অভিযোগে আজ সংবাদ সম্মেলন করেন হোমল্যান্ড লাইফের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কোম্পানিটির আরেক পরিচালক কামাল মিয়া, ডিএমডি ও হেড অব মার্কেটিং পদে নতুন নিয়োগ পাওয়া জাকির হোসেন সরকার প্রমুখ। মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ডিআরইউ অডিটোরিয়ামে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

উল্লেখ্য, হোমল্যান্ড লাইফের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন গত ১৩ ফেব্রুয়ারি কোম্পানিটির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আব্দুল মতিনকে অব্যাহতি দেন। কোম্পানির অপর কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার আলোকেও অব্যাহতি দেয়া হয় একইদিন।

অপরদিকে একইদিন জাকির হোসেন সরকারকে কোম্পানিটির ডিএমডি ও হেড অব মার্কেটিং পদে নিয়োগ দেয়া হয়। জাকির হোসেন কোম্পানিটির প্রায় এক কোটি টাকা অর্থ আত্মসাতের ২টি মামলার আসামি। এছাড়া কোম্পানির ১০৪ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায়ও তিনি অভিযুক্ত। তার বিরুদ্ধে কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে বিশৃংখলা সৃষ্টির অভিযোগে মতিঝিল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন বীমা কোম্পানিটির ২ কর্মকর্তা।

এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি হোমল্যান্ড লাইফের ১৫১তম বোর্ড সভা কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ের পরিবর্তে সিলেটের হোটেল ব্রিটানিয়ায় আহবান করে পরিচালকদের নোটিশ প্রদান করা হয়। অথচ এর আগে ১৫১তম সভাটি প্রধান কার্যালয়ের বোর্ড রুমে ২৯ জানুয়ারি বেলা ১২টায় আহবান করা হয়।

সিলেটের ওই বোর্ডসভা আহবানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট মামলা দায়ের করেন কোম্পানিটির পরিচালক মোহাম্মদ জুলহাস। মামলার শুনানি শেষে ৪ সপ্তাহের জন্য আহূত সকল সভা স্থগিত করে রুল জারি করেন আদালত। হাইকোর্টের বিচারপতি জাফর আহমেদ রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) এই আদেশ দেন।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন কোম্পানিটির চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন। এ সময়ে শেয়ার সার্টিফিকেট জালিয়াতি করে হোমল্যান্ড লাইফের পর্ষদে থাকা সংক্রান্ত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের শেয়ারের বৈধতা শতভাগ আছে। আরজেএসসি’তে খোঁজ নেন। আরজেএসসি'তে আমরা ১৯৯৬ সাল থেকে আছি। আমাদের সব ঠিক আছে।

একই প্রশ্নের জবাবে কোম্পানিটির অপর পরিচালক কামাল মিয়া বলেন, ১৯৯৬ সাল থেকেই আমরা পরিচালনা পর্ষদে আছি। আমাদের সমস্যা থাকলে আইডিআরএ কেন আমাদের প্রশ্ন করল না। আপনারা স্টক এক্সচেঞ্জে খোঁজ নিলেও পাবেন, আমরা আছি।

গ্রাহকের ১০৪ কোটি টাকা আত্মাসাৎ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে জামাল উদ্দিন বলেন, ১০৪ কোটি টাকা আত্মসাতের বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে ভুয়া। কেস তদন্ত আছে। মামলা এখনো হয়নি। এটা তদন্তাধীন। এটা এখনো প্রমাণ হয়নি। মামলা প্যাঁচায়া করতে পারেন।

সিলেটে কেন বোর্ডসভা আয়োজন করা হয়েছিল- এমন প্রশ্নের জবাবে জামাল উদ্দিন বলেন, ২০০১, ২০০২ ও ২০০৩ সালসহ আগের অনেক বোর্ড মিটিং সিলেটে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবার একটু সমস্যা হয়েছে। আমার সাথে যে ৬/৭ জন পরিচালক লন্ডন থেকে এসেছেন তাদের মধ্যে ২/৩জন খুবই বয়স্ক; তারা বেশ অসুস্থও। আমি চিন্তা করলাম যে, সিলেট একটি ভালো যায়গা; ওরা একটু ভিজিটিং করল, হলিডে করল।

জামাল উদ্দিন আরো বলেন, আমি চাইছিলাম যে, তাদেরকে একটু সমূস্ত সিলেট দেখাব। আর আমরা একটু ফূর্তি-আমোদ করব। আমার সৎ উদ্দেশ্য ছিল। আমার কলিগরা লন্ডন থেকে আসছে ওরা সেখানে থাকুক। আর এখানকার যে ২/৩ জন কলিগ আছে ওরাও সেখানে যাবে। আমার কোন অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না। ওরা যদি আমাকে ফোন করে বলত যে, কেন আপনি (সিলেটে বোর্ডসভা আহবান) করলেন! তখন আমি জবাব দিতাম যে, ভাই ছেড়ে দেন। যেহেতু আপনি আসতে পারছেন না; ঠিক আছে আমি-ই চলে আসতেছি।

শীর্ষ ২ কর্মকর্তাকে বহিস্কারের ক্ষেত্রে বোর্ডের অনুমোদন ছিল কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে জামাল উদ্দিন বলেন, বোর্ডের অনুমোদন আছে। একইসাথে তিনি দাবি করেন, বোর্ডের অনুমোদন অনুসারে তিনি কাউকে নিয়োগ দিতে পারেন এবং অব্যাহতি দিতে পারেন। কিন্তু ২ কর্মকর্তাকে অব্যাহতি দেয়ার ক্ষেত্রে লিখিত কোন অনুমোদন নেই বলেও জানান তিনি। তিনি আরো জানান, গত ৩/৪ মাসের মধ্যে কোম্পানির বোর্ডসভার কোন মিটিং হয়নি।

অর্থ-আত্মসাতের দায়ে মামলার আসামিকে ডিএমডি পদে নিয়োগ দেয়া সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে জামাল উদ্দিন বলেন, মামলা আছে এ কথা আমি জানি না। তবে তাকে নিয়োগ দেয়ার সময় ৪ জন পরিচালক ছিলেন যাদের মতামত নিয়েই তাকে নিয়োগ দেয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্যে হোমল্যান্ড লাইফের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন বলেন, কোম্পানির ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী এবং একজন ডিএমডিকে আমি বরখাস্ত করেছি। তবে ওরা এখনো অফিসে আছে। কেন ওরা অফিসে আছে, তা জানি না।

তিনি বলেন, কোম্পানির স্বার্থে ওদের টার্মিনেট করেছি। যতদিন তারা ছিল- কোম্পানির যে ব্যবসা-বাণিজ্যের টার্গেট দেয়া ছিল, তারা তা পূরণ করতে পারেনি। বর্তমানে আমাদের ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। আমাদের অনেক গ্রাহক আছে তাদের টাকা দিতে পারছি না। টাকা দিতে হলে তো ব্যবসা-বাণিজ্য থাকতে হবে।

জামাল উদ্দিন বলেন, আমি থাকি বিদেশে। যা বলি তা হচ্ছে না। আমার নির্দেশ মান্য হচ্ছে না। তাই আমি তাদের টার্মিনেট করেছি। কিন্তু তারা এখনো অফিসে আছে।

তিনি আরো বলেন, আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা চাই। আমরা আমাদের কাজ করতে চাই। তারা অফিসে থাকায় আমাদের কাজে বিঘ্ন ঘটছে। বীমা গ্রাহকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা আরেকটু ধৈর্য ধরুন। একটু সময় দিন। আপনাদের সবার পাওনা পরিশোধ করে দিব।