সোনালী লাইফের অর্থ আত্মসাতকারীদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে দুদক ও সিআইডিতে: আইডিআরএ চেয়ারম্যান
নিজস্ব প্রতিবেদক: সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের অর্থ আত্মসাতকারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)-তে মামলা চলছে বলে জানিয়েছেন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র চেয়ারম্যান ড. এম আসলাম আলম। একইসাথে সোনালী লাইফের অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ড আইনের বাইরে গিয়েই গঠন করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বীমা খাতের সংস্কার ও আমাদের করণীয় শীর্ষক এক সেমিনারে সোনালী লাইফের বিদ্যমান পরিস্থতি নিয়ে এসব কথা বলেন আইডিআরএ চেয়ারম্যান ড. এম আসলাম আলম। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ও ইন্স্যুরেন্স রিপোর্টার্স ফোরামের যৌথ উদ্যোগে আইডিআরএ’র বোর্ড রুমে গত বুধবার (১২ মার্চ) এই সেমিনোর অনুষ্ঠিত হয়।
সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি নিয়ে ড. এম আসলাম আলম বলেন, আইনের সীমাবদ্ধতার কারণে সোনালী লাইফের বিদ্যমান পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আইন অনুসারে প্রশাসক তুলে নেয়া হলে পরিচালনা পর্ষদ ফিরে আসে।
তিনি আরো বলেন, আইনে কর্তৃপক্ষকে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে প্রশাসক নিয়োগ করার। কিন্তু প্রশাসক কিভাবে কাজ করবে তার বিস্তারিত আইনে বলা নেই। আমরা বোর্ড সাসপেন্ড করতে পারি কিন্তু বাতিল করতে পারি না। আইনের এই ফাঁক-ফোকরে যারা দুর্নীতি-অনিয়মে জরিত তারাই আবার ফিরে আসে।
আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, আমরা মামলা করতে পারি। মামলা করা হয়েছে। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করার তাগিদও আমরা দিচ্ছি। এর বাইরে আমরা আর কিছু করতে পারি না। বর্তমান পরিস্থিতিতে দুদক বা সিআইডি আরো অনেক বড় বিষয় নিয়ে কাজ করছে। ফলে আমরা শুধু এ বিষয়ে তাগাদা দিতে পারি। এর বাইরে আমাদের কিছু করার নেই।
তিনি আরো বলেন, বোর্ড গঠন ও পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু আমাদের কোন অনুমোদন নিতে হয় না। আইডিআরএ’র ক্ষমতা নেই একটা বোর্ডকে পুনর্গঠন করে দেয়ার। সোনালী লাইফে প্রশাসক নিয়োগ পরবর্তী উদ্ভুত জটিলতা নিরসনের জন্য সরকার দু’জন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়ে অর্তবর্তীকালীন বোর্ড গঠনের নির্দেশনা দেয়। আইনের বাইরে গিয়ে এটা করতে হয় সরকারকে।
উল্লেখ্য, সোনালী লাইফে প্রশাসক নিয়োগ পরবর্তী উদ্ভুত জটিলতা নিরসনে গেলো বছরের ২ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটিতে পর্যবেক্ষক নিয়োগসহ ৪টি নির্দেশনা দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এসব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে-
পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সার্বিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ অতিরিক্ত সচিব মো. শাহ আলমকে পর্যবেক্ষক (অবজার্ভার) হিসেবে মনোনয়ন প্রদান করা হলো। তিনি উক্ত কোম্পানির সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে নিয়মিতভাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবকে অবহিত করবেন।
আইনি জটিলতা নিরসনের লক্ষ্যে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি কর্তৃক দায়েরকৃত সকল রিট মামলা প্রত্যাহারের শর্তে উক্ত কোম্পানিতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক দু’জন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করতে হবে। তন্মধ্যে হতে একজনকে অন্তবর্তীকালীন বোর্ড অব ডিরেক্টরস এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব প্রদানের জন্য আইডিআরএ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
নিয়োগকৃত অডিট ফার্ম কর্তৃক অডিট কার্যক্রম সম্পন্ন করার পর বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বরাবর অডিট রিপোর্ট দাখিল করতে হবে; এবং যতদ্রুত সম্ভব অর্তবর্তীকালীন বোর্ড কর্তৃক বিধি মোতাবেক নিয়মিত বোর্ড অব ডিরেক্টরস গঠনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও গঠিত বোর্ডের নিকট দায়িত্ব হস্তান্তরের কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।
এর আগে ২০২৪ সালের ২১ এপ্রিল সোনালী লাইফের ১৮৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে দিয়ে প্রশাসক নিয়োগ দেয় এ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। এরপর ২৫ জুলাই কোম্পানিটির ১৮৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদক।
অপর দিকে জুলাই মাসেই সোনালী লাইফের ১০ বছরের ব্যবসায়ীক কর্মকান্ডের দুর্নীতি ও অনিয়ম ক্ষতিয়ে দেখতে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান হুদাভাসিকে নিয়োগ করে আইডিআরএ। এছাড়া বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনও সোনালী লাইফের অনিয়ম দুর্নীতি ক্ষতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করে।