যথাসময়ে সংস্কার না করায় মোটর বীমা নিয়ে সঙ্কট তৈরি হয়েছে: ইমাম শাহীন
নিজস্ব প্রতিবেদক: যথাসময়ে সংস্কার না করায় থার্ড পার্টি মোটর বীমা নিয়ে সঙ্কট তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের নির্বাহী সদস্য এবং এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমাম শাহীন।
তিনি বলেন, ৪০ বছর আগে ঠিক করা হয়েছিল- দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে ২০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ পাবে। এরপর বিআইএ, আইডিআরএ, মালিকপক্ষ- এরা কেউ এর সংস্কার করেনি। এখানে যদি সংস্কার করা হতো- মারা গেলে ২০ হাজার টাকার পরিবর্তে যদি ২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করা হতো এবং সেই অনুযায়ী প্রিমিয়াম হারও বাড়ানো যেতো তাহলে আজকের এই পরিস্থিত সৃষ্টি হতো না।
বীমা খাতের সংস্কার ও আমাদের করণীয় শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র চেয়ারম্যান ড. এম আসলাম আলম। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ও ইন্স্যুরেন্স রিপোর্টার্স ফোরামের যৌথ উদ্যোগে আইডিআরএ’র বোর্ড রুমে গত বুধবার (১২ মার্চ) এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
বীমা খাতে দক্ষ জনবল তৈরি করতে না পারার কারণ ব্যাখ্যা করে ইমাম শাহীন বলেন, আমরা বীমা পেশাকে একটি মর্যাদাজনক পেশায় পরিণত করতে পারিনি। এটা আজকের নতুন না। এটা শুরু থেকেই হয়ে আসছে। আমরা যদি এটাকে মর্যাদাপূর্ণ পেশায় পরিণত করতে পারতাম তাহলে এ খাতে দক্ষ জনবলের অভাব থাকত না।
তিনি বলেন, বীমা খাতের উন্নয়ন করতে হলে মালিকদেরকেই বড় ধরণের বিনিয়োগ করতে হবে। দ্রুত মুনাফা লাভের আশা করলে টেকসইভাবে এ খাত গড়ে উঠবে না।
বীমা খাতের সংস্কার বিষয়ে ইমাম শাহীন বলেন, আমরা যথাসময়ে যথাযথভাবে কাজ করিনি বলেই বীমা খাতের উন্নয়নে পিছিয়ে আছি। এ সময় তিনি মটর ইন্স্যুরেন্সের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, মোটর বীমার সংস্কার করা হয়নি বলেই আজকে মটর বীমা নিয়ে এমন সঙ্কট তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০ থেকে ৩০ বছর আগে ঠিক করা হয়েছিল থার্ড পাটি মটর বীমায় একজন মানুষ মারা গেলে ২০ হাজার টাকা পাবে। আবার এটা অনেকেই জানত না। আর ২০ হাজার টাকার জন্য কেউ ক্লেইমও করত না। আমার কর্মজীবনে একটি মটর বীমার ক্লেইম পেয়েছি।
ইমাম শাহীন বলেন, নন-লাইফ বীমা খাতের দু’টি সমস্যা- কমিশন এবং এসবিসি’র সাথে পুনর্বীমা ব্যবসা। এসবিসি’তে ক্লেইম উত্থাপন করলে তা তারা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে পারে না। অপর দিকে পুনর্বীমার প্রিমিয়াম বকেয়া থাকলে সেই টাকা আদায়ে আমাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয়। এই সমস্যা থেকে উত্তরণ করা না গেলে নন-লাইফ বীমা খাতে সংস্কার সম্ভব হয়ে উঠবে না। সংস্কারের ক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুসারে গুরুত্ব দিয়ে সংস্কার করা উচিত।
উল্লেখ্য, মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর ধারা ১০৯ অনুযায়ী বাংলাদেশে সব ধরণের যানবাহনের জন্য থার্ড পার্টি বীমা বাধ্যতামূলক ছিল এবং এই আইনের ১৫৫ ধারায় দণ্ডের বিধানও ছিল। তবে ২০২০ সালের অক্টোবরে মোটরযান অধ্যাদেশ, ১৯৮৩ রহিত করে সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ জারির মাধ্যমে যানবাহনের থার্ড পার্টি বীমা তুলে দেয় সরকার।
এই প্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর সার্কুলার নং- নন-লাইফ ৮২/২০২০ জারি করে যানবাহনের ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বীমা তথা থার্ড পার্টি বীমা পরিকল্প বাতিল করে এ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) ।