নন-লাইফ বীমার উন্নয়নে বাজেটে ৮ প্রস্তাব বিআইএ’র
নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেটে দেশের নন-লাইফ বীমা শিল্পের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের জন্য ৮টি প্রস্তাব করেছে বীমা মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন (বিআইএ)। সোমবার (১৭ মার্চ) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানের কাছে লিখিতভাবে এসব প্রস্তাবনা তুলে ধরেন বিআইএ’র প্রেসিডেন্ট সাঈদ আহমেদ।
বাজেটে নন-লাইফ বীমা খাত নিয়ে বিআইএ’র প্রস্তবনার মধ্যে রয়েছে-
নন-লাইফ বীমার অন্তর্ভুক্ত সকল শ্রেণীর নৌ-কার্গো, নৌ-হাল, বিবিধ বীমাসহ বীমা সেবার বিপরীতে পুনর্বীমাকারীকে সকল প্রিমিয়ামের ওপর মুসক চার্জ অব্যাহতি প্রদান:
এক্ষেত্রে ২০১২ সালের মূসক ও সম্পূরক শুল্ক আইন এর এসআরও নম্বর- ১০৬-আইন/২০২৩/২১৩-মূসক, তারিখ ২১ মে, ২০২০ এর এস০২৭ সেবা কোড এবং মূসক সেবা পর্যায় মূসক অব্যাহতি সংক্রান্ত টেবিল ৪ এর এ বীমা কোম্পানি: শিরোনামে প্রদত্ত অব্যাহতি:
ক. বাংলাদেশ সমুদ্রগামী জাহাজের হাল বীমার প্রিমিয়াম। খ. প্রাইভেট সেক্টর পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি কর্তৃক প্রদত্ত বীমা প্রিমিয়াম। গ. এভিয়েশন বীমার পুনর্বীমার ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধিত প্রিমিয়াম। ঘ. বীমা এজেন্ট কমিশন এর ওপর প্রদেয় মূল্য সংযোজন কর।
উল্লেখিত উপ-ধারা গ. এভিয়েশন নন-লাইফ বীমার পুনর্বীমার ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধিত প্রিমিয়াম এর ধারা সংশোধন করে সকল শ্রেনীর নৌ-কার্গো, নৌ-হাল, বিবিধ বীমাসহ বীমা সেবার পুনর্বীমাযোগ্য সকল প্রিমিয়ামের উপর মূসক অব্যাহতির বিষয়টি বিবেচনার জন্য প্রস্তাব করা হয়।
কর নির্ধারন পদ্ধতি:
এনবিআর ট্যাক্স এসেসমেন্ট করার সময় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রণীত প্রবিধান অনুসারে ব্যবস্থাপনা ব্যয়সীমা নির্ধারিত থাকায় কর অফিস উক্ত প্রবিধান অনুসরণ করে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়কে, আয় হিসেবে গণ্য করে তার ওপর ৩৭.৫% কর ধার্য করে।
কর নির্ধারণের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপন ব্যয়কে আয় হিসাবে গণনা না করে ফাইন্যান্স অ্যাক্ট অনুসারে লভ্যাংশের ওপর কর নির্ধারণ করার জন্য প্রস্তাব করা হয়।
পুনর্বীমা কমিশনের বিপরীতে ১৫% উৎসে মূল্য সংযোজন কর আদায় বা কর্তন রহিত করা:
বীমা আইন ২০১০ এবং বীমা বিধিমালা, ১৯৫৮ এর অধীনে বীমা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজন কর আইন ১৯৯১ এর ৬ ধারা এবং মূল্য সংযোজন কর বিধিমালা এর বিধি-১৮(ক), বিধি-১৮(খ) সহ প্রচলিত অন্যান্য সকল আইনের বিধান অনুযায়ী উৎসে কর কর্তনযোগ্য সকল প্রকার মূসক কর্তন করে নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে মূসক প্রদান করা হয়।
এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, নিয়ম অনুযায়ী সকল বীমা ব্যবসার পুনর্বীমাযোগ্য বীমা অংক শতভাগ পুনর্বীমা করতে হয়। পুনর্বীমা করার সময় পুনর্বীমাকারী একটি কমিশন প্রদান করে থাকেন। এই কমিশনের ওপর নতুন করে ভ্যাট আরোপের কোন সুযোগ নেই। যেহেতু একই ব্যবসা আহরণ করার সময় ১৫% হারে ভ্যাট এবং লভ্যাংশের ওপর ৩৭.৫০% হারে করপোরেট ট্যাক্স সরকারী কোষাগারে জমা করা হচ্ছে। সেহেতু একই ব্যবসা পুনর্বীমা করার সময় পুনর্বীমা প্রিমিয়ামের ওপর প্রাপ্য কমিশনের ওপর নতুন করে ১৫% হারে ভ্যাট আরোপ করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। সুতরাং এই ভ্যাট রহিত করার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।
বৈদেশিক পুনর্বীমা প্রিমিয়ামের ওপর ১৫% হারে উৎসে মূল্য সংযোজন কর এবং ১০% হারে উৎসে কর আদায় বা কর্তন রহিত করা:
এ বিষয়ে বিআইএ’র চিঠিতে বলা হয়েছে, সরকারী নিয়ম অনুযায়ী শতভাগ পুনর্বীমা স্থানীয় পুনর্বীমা কারী অর্থাৎ সাধারণ বীমা করপোরেশনের নিকট অথবা নিয়ম অনুযায়ী ৫০% পুনর্বীমা সাধারণ বীমা করপোরেশনের নিকট এবং অবশিষ্ট ৫০% পুনর্বীমা বৈদেশিক পুনর্বীমা কারীর নিকট পুনর্বীমা করা যায়।
এক্ষেত্রে বৈদেশিক পুনর্বীমা প্রিমিয়ামের ওপর ১৫% হারে ভ্যাট এবং ১০% হারে উৎসে কর কর্তন করা হচ্ছে। যেহেতু একই বাবসা আহরণ করার সময় ১৫% হারে ভ্যাট এবং লভ্যাংশের ওপর ৩৭.৫০% হারে করপোরেট ট্যাক্স সরকারী কোষাগারে জমা করা হচ্ছে সেহেতু একই ব্যবসা পুনর্বীমা করার সময় পুনর্বীমা প্রিমিয়ামের ওপর নতুন করে ১৫% ভ্যাট ও ১০% উৎসে কর আরোপ করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। এক্ষেত্রে বৈদেশিক পুনর্বীমা প্রিমিয়ামের ওপর ১৫% হারে ভ্যাট ও ১০% হারে উৎসে কর রহিত করার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।
করপোরেট কর হ্রাস করার প্রস্তাব:
এ বিষয়ে বিআইএ’র চিঠিতে বলা হয়েছে, আয়কর আইন অনুযায়ী তালিকাভুক্ত ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করহার ৩৭.৫%। ব্যাকিং কোম্পানিগুলোর আায় ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর চাইতে অনেক বেশি অর্থাৎ ব্যাংকিং কোম্পানির আয় ও ব্যবসায়ের ব্যাপকতা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চাইতে অনেক ব্যাপক এ শর্তেও ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ওপর কর হার ব্যাংকিং কোম্পানির সমান।
অন্যদিকে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো ২৫% অথবা তার চেয়ে কম হারে কর প্রদান করে থাকে। যদিও তাদের ব্যবসায়ের ব্যপকতা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ে বেশি। কিন্তু ইন্স্যুরেন্স ব্যবসায় ব্যাংক এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মত ব্যাপকভাবে প্রসার লাভ করতে পারেনি। তাই ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে অন্যান্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের মতো বিবেচনা করে করপোরেট কর হার ব্যাকিং কোম্পানির মত সমান না রেখে অনান্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের মতো কর হার ২৫% নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য বীমার ওপর ট্যাক্স কর্তন রহিত করার প্রস্তাব:
বিআইএ বলছে, আমাদের দেশে প্রচলিত বীমা আইনে লাইফ বীমা পলিসির প্রিমিয়ামের ওপর কোন ভ্যাট প্রদান করতে হয় না। আবার কেউ এককভাবে স্বাস্থ্য বীমা করলেও ১৫% ভ্যাট প্রদান করতে হয়। কিন্তু কোন বীমা গ্রহীতা লাইফ বীমার সাথে স্বাস্থ্য বীমা যুক্ত করে পলিসি করলে স্বাস্থ্য বীমার প্রিমিয়ামের ওপর ১৫% ভ্যাট প্রদান করতে হয় এবং এতে করে প্রিমিয়ামের মাত্রা যেড়ে যায়। ফলশ্রুতিতে গ্রাহক স্বাস্থ্য বীমা করার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। সে কারণে সে কারণে স্বাস্থ্য বীমা প্রসারের জন্য স্বাস্থ্য বীমার ওপর ট্যাক্স রহিত করার জন্য প্রস্তাব করা যাচ্ছে।
কৃষি বীমা, গবাদিপশু বীমা, বিভিন্ন ধরণের শস্য বীমা প্রিমিয়ামের ওপর মূল্য সংযোজন কর ও করপোরেট কর হার রহিত করার প্রস্তাব:
এ বিষয়ে সংগঠনটির বলছে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষি খাতের ভূমিকা অপরিসীম। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই খাত ক্রমাগত বিপন্ন হচ্ছে। যার ফলে কৃষিকাজে কৃষকদের অনীহা দিন দিন বাড়ছে। তাই কৃষকদের জন্য কৃষি বীমা অপহীহার্য। এজন্য কৃষি বীমার উন্নয়ন ও এর ব্যাপক প্রসারের জন্য কৃষি বীমা, গবাদিপশু বীমা, বিভিন্ন ধরণের শস্য বীমা প্রিমিয়ামের ওপর মূল্য সংযোজন কর এবং উক্ত বীমা পরিকল্প থেকে অর্জিত মুনাফার ওপর করপোরেট কর হার রহিত করার প্রস্তাব করা হলো।
অনলাইন ভিত্তিক বীমা প্রিমিয়াম এর ওপর মূল্য সংযোজন কর এবং করপোরেট কর রহিত করার প্রস্তাব:
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে বীমা শিল্প ও সরকারের সাথে একাত্ম হয়ে কাজ করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বিভিন্ন অনলাইন পলিসি ইস্যু করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। যা গ্রাহকদেরকে সর্বোচ্চ বীমা সেবা প্রদানের পথকে সুগম করবে। ডিজিটাল সেবা এবং ইন্স্যুরটেক এর মাধ্যমে ইস্যুকৃত বীমা পলিসি হতে অর্জিত প্রিমিয়াম এর ওপর মূল্য সংযোজন কর এবং পলিসি প্রিমিয়াম হতে অর্জিত মুনাফার করপোরেট কর রহিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
উদ্ভাবনী বীমা ও নতুন সামাজিক ধীমা পণ্যের ওপর মূল্য সংযোজন কর এবং করপোরেট কর রহিত করার প্রস্তাব:
এ বিষয়ে বিআইএ বলছে, উদ্ভাবনী বীমা ও নতুন সামাজিক বীমা পরিকল্প অর্থনৈতিক উন্নয়নে এবং উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের জীবন যাত্রার মানের ওপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। আমরা জানি, যেসব দেশ অর্থনৈতিকভাবে যত উন্নত এবং তাদের জীবন যাত্রার মানও তত উন্নত। আর এই উন্নয়নে বীমার অবদান অনেক বেশি। তাই বীমা শিল্প বিকাশে উদ্ভাবনী বীমা ও নূতন সামাজিক বীমা পণ্যের ওপর মূল্য সংযোজন কর এবং করপোরট কর রহিত করার প্রস্তাব করা হলো।