তদন্ত বিলম্বে হবে তাই ২ কর্মকর্তার বাধ্যতামূলক ছুটি প্রত্যাহার করলেন হোমল্যান্ডের চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক: তদন্ত বিলম্বে হবে তাই ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তার বাধ্যতামূলক ছুটি প্রত্যাহার করেছেন হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুল মজিদ। ওই দুই কর্মকর্তা হলেন কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন এবং উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও হেড অব মার্কেটিং জাকির হোসেন।
হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের এই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোম্পানিটির বিগত সময়ের প্রশাসনিক ও আর্থিক অনিয়ম তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে উচ্চ আদালতের গঠন করে দেয়া প্রতিষ্ঠানটির অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ড। এই তদন্ত কার্যক্রম নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের স্বার্থে গত ১৮ অক্টোবর তাদের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়।
তবে এই সিদ্ধান্তের ৭ দিনের মাথায় গতকাল ২৫ অক্টোবর তাদের বাধ্যতামূলক ছুটি প্রত্যাহার করে নেন বীমা কোম্পানিটির অন্তর্বর্তীকালীন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মজিদ।
চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, অন্তর্বর্তীকালীন পরিচালনা পর্ষদের ৭ম সভায় আপনাদের প্রেরিত গত ২৩ অক্টোবরের আবেদন পত্রটি পর্যালোচনার পর বিগত সময়ের প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রম তদন্ত বিলম্বে হওয়ার কারণে আপাতত আপনাদের উপর আরোপিত বাধ্যতামূলক ছুটি প্রত্যাহার করা হলো। পৃথক চিঠিতে ওই দুই কর্মকর্তাকে এই সিদ্ধান্তের বিষয় অবহিত করা হয়।

বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যতো অভিযোগ:
হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহাদাত হোসেন। একইসঙ্গে তিনি কোম্পানিটির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তারও দায়িত্ব পালন করছেন। শাহাদাত হোসেনকে প্রথমে কোম্পানির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ দেয়া হয় ২০২৪ সালের জুলাই মাসের ৭ তারিখে। এর ৩ মাস পরেই (৭ অক্টোবর, ২০২৪) তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
চাকরির অব্যাহতি পত্রে উল্লেখ করা হয়, ১ কোটি ৬২ লাখ ৪৭ হাজার ৯০১ টাকার বীমা প্রিমিয়াম বকেয়া রাখা, কোন উন্নয়ন কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে না পারা, কোম্পানির বিভিন্ন তথ্য পাচার, নৈতিক স্খলনজনিত কারণে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হল।
আবার চাকরি থেকে শাহাদাত হোসেনকে অব্যাহতি দেয়ার ৩ মাস পরেই ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সালে পদোন্নতি দিয়ে কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ দিয়ে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তারও দায়িত্ব দেন কোম্পানির তৎকালীন চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন। পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন ছাড়াই চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন একক সিদ্ধান্তে এ নিয়োগ দেন।
শাহাদাত হোসেন দায়িত্ব নেয়ার পর কোম্পানির চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন নিয়ম বহির্ভুতভাবে ৩৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা নেন কোম্পানি থেকে। এই টাকা তিনি নেন আইও শ্লিপ দিয়ে। এসব টাকা উত্তোলনের নোটশিটে স্বাক্ষর করে শাহাদাত হোসেন। এর মধ্যে ৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা তিনি নিজেই আইও শ্লিপে স্বাক্ষর দিয়ে গ্রহণ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অপরদিকে কোম্পানিটির সাবেক চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত জাকির হোসেন সরকার দায়িত্ব পালন করছেন কোম্পানিটির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও হেড অব মার্কেটিং পদে। জাকির হোসেন সরকার নিয়োগ পান ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে।
কোম্পানির একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জাকির হোসেন সরকার সারাদেশের ব্রাঞ্চ ম্যানেজারদের কাছ থেকে প্রিমিয়ামের নামে প্রায় ৬০ লাখ টাকা নিয়েছেন এমন গুঞ্জন রয়েছে। তবে ব্যক্তিগত বিকাশ একাউন্ট ও নগদে টাকা নেয়ায় কোনো প্রমাণাদি দিতে পারছে না কেউ।
এছাড়াও জামাল উদ্দিনের ঘনিষ্ঠ ও কোম্পানিতে প্রভাবশালী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত হওয়ার কারণে জাকির হোসেন সরকারকে যারা টাকা দিয়েছেন তারা মৌখিকভাবে অভিযোগ করলেও চাকরি হারানোর ভয়ে লিখিত কোন অভিযোগ করছেন না।
হোমল্যান্ড লাইফের মামলা সংক্রান্ত নথিপত্রের তথ্য অনুসারে, মতিঝিল থানায় জাকির হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে দায়ের করা ১৮(১)১১নং মামলাটি উচ্চ আদালতে আদেশের অপেক্ষায় আছে। এই মামলায় তার বিরুদ্ধে হোমল্যান্ড লাইফের ৮৫ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। আর কতোয়ালী থানার ০১(০১)১১নং মামলায় জাকির হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে কোম্পানির ৭ লাখ ৩৬ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।
দুই কর্মকর্তার বাধ্যতামূলক ছুটি প্রত্যাহারের বিষয়ে হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের অন্তর্বর্তীকালীন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মো. আবদুল মজিদের বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন কলটি রিসিভ করেন। তবে এই প্রতিবেদকের পরিচয় দেয়ার পর তিনি রং নাম্বার বলে ফোন কলটি কেটে দেন।

 (1).gif)


