সাড়ে ১৯ কোটি টাকা আত্মাসাতে দুদকের মামলা: ফারইস্ট লাইফের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল রিমান্ডে
নিজস্ব প্রতিবেদক: জমি ক্রয় দেখিয়ে অর্থ আত্মাসাতের মামলায় ফারইস্ট ইসলামী লাইফের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) বেলা দেড়টায় তাকে গ্রেফতার করে মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে হাজির করা হলে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ সাব্বির ফয়েজ শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
সূত্র মতে, ৪৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলামসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন। গত ৩১ জুলাই এ মামলা দায়ের করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের নামে রাজধানীর ৩৬ তোপখানায় ২০৭ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার টাকার জমি ক্রয় দেখিয়ে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ৪৫ কোটি টাকা আত্মাসাৎ করে। এর মধ্যে নজরুল ইসলাম আত্মসাৎ করেন ১০ কোটি ও তার স্ত্রী এবং ফারইস্ট লাইফের সাবেক পরিচালক তাসলিমা ইসলাম আত্মসাৎ করে সাড়ে ৯ কোটি। জমি ক্রয় ও অর্থ আত্মসাতের এ ঘটনা ঘটে ২০১৫ সালে।
মামলার আসামিদের মধ্যে পরিচালক নাজনিন হোসেন এখনো পরিচালনা পর্ষদে আছেন। মামলার অপর আসামি মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিসের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ডা. মো. মনোয়ার হোসেনের বড় ভাই ড. মোকাদ্দেস হোসেন ফারইস্ট ইসলামী লাইফের ভাইস চেয়ারম্যান। এ ছাড়াও ড. মোকাদ্দেস হোসেনের আরেক ভাই মোজাম্মেল হোসেনও দুদকের অপর মামলার আসামি। ফারইস্ট ইসলামী লাইফের পরিচালনা পর্ষদের নিরপেক্ষ পরিচালক হিসেবে আছেন মোবারক হোসেনের ভাই মামলার অপর আসামী আমানত শাহ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মো. হেলাল মিয়া।
মামলার অন্য আসমিরা হলেন- পিএফআই প্রোপার্টিজ ও নর্দার্ন জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক শাহরিয়ার খালেদ, গেটকো টেলিকমিউনিকেশন ও গেটকো এগ্রো ভিশনের চেয়ারম্যান কে এম খালেদ, প্রাইম ব্যাংক ও প্রাইম ফাউন্ডেশনের উদ্যোক্তা এবং ম্যাক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টি এম এ খালেক, টারটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ড. ইফফাৎ জাহান, ফারইস্ট ইসলামী লাইফের পরিচালক খন্দকার মোস্তাক মাহমুদ, ফারইস্ট ইসলামী লাইফের পরিচালক মো. মিজানুর রহমান, মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিসের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন, ফারইস্ট ইসলামী লাইফের শেয়ারহোল্ডার পরিচালক রাবেয়া বেগম, স্বতন্ত্র পরিচালক ও আইডিআরএ’র সাবেক চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন এবং স্বতন্ত্র পরিচালক ও পিএফআই সিকিউরিটিজের সাবেক এমডি কাজী ফরিদ উদ্দীন আহমেদ। কোম্পানিটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হেমায়েত উল্যাহ-কেও দুদকের মামলার আসামি করা হয়।
ফারইস্টের ২ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ, জড়িত সাবেক চেয়ারম্যানসহ সকল পরিচালক
এর আগে, ২০২০ সালে ২৪ জুন ফারইস্ট ইসলামী লাইফের সাড়ে ১৪ কোটি টাকার জমিতে বালু ফেলতেই খরচ ১৪২ কোটি টাকা শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি। এতে তদন্তে নামে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) ।
গত ২৫ এপ্রিল ২০২১ তারিখে তদন্তকারী হিসেবে চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস সিরাজ খান বসাক এন্ড কো. কে নিয়োগ করা হয়। নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান ২০২২ সালের ১৮ মে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র কাছে এ সংক্রান্ত চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।
সিরাজ খান বসাক এন্ড কোম্পানির তদন্তে ফারইস্ট লাইফের ২ হাজার ৮শ’ কোটি টাকার তহবিল তসরুফের তথ্য উঠে আসে। এর মধ্যে ২ হাজার ৩৬৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা তসরুফ করা হয়েছে বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যে জমি ক্রয় ও উন্নয়ন দেখিয়ে, এমটিডিআর বন্ধক রেখে পরিচালক ও তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়া এবং ক্ষতিকর বিনিয়োগ করে। বাকি ৪৩২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা তসরুফ করা হয়েছে পরিচালনাগত ত্রুটি ও অনিয়ম করে।
এ বিপুল পরিমাণ টাকা তসরুফের জন্য দায়ী করা হয় বীমা কোম্পানিটির সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামসহ সকল পরিচালক ও মুখ্য নির্বাহী হেমায়েত উল্লাহকে। এ ঘটনায় ফারইস্ট লাইফের তহবিল তসরুফের ঘটনায় এর আগেও দুর্নীতি দমন কমিশন আরো তিনটি মামলা দায়ের করেন।
এর মধ্যে ৭০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আসামি করা হয় ৯ জনকে। যাদের মধ্যে পরিচালক ছিলেন ৭ জন। তারা হলেন, নজরুল ইসলাম, কে এম খালেদ, শাহরিয়ার খালেদ, এম এ খালেক, মিজানুর রহমান, ফরিদউদ্দিন এফসিএ ও আসাদ খান।
৭২ কাকরাইলের জমি কেনার ক্ষেত্রে ১১৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে দুদকের মামলায় আসামি করা হয় ৮ জনকে। কোম্পানিটির সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী তাসলিমা ইসলাম, তাসলিমা ইসলামের ভাই সেলিম মাহমুদ, কোম্পানির সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হেমায়েত উল্যাহ, সাবেক ইভিপি ও প্রজেক্ট ইনচার্জ ইঞ্জিনিয়ার আমির ইব্রাহিম, টিপু সুলতান, ফুয়াদ আশফাকুর রহমান এবং মোহাম্মদ আলম খান।
তবে এসব মামলায় ফারইস্টের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও সাবেক পরিচালক এম এ খালেক ছাড়া অপর কোন আসামি গ্রেফতার হয়নি।