২০২১ সালে লাইফ বীমায় বিনিয়োগ বেড়েছে ১৪১০ কোটি টাকা

তাফহিমুল ইসলাম: দেশের বাজারে ব্যবসা করা সরকারি-বেসরকারি লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ বেড়েছে ১৪১০ কোটি টাকা। দেশের ৩৫টি লাইফ বীমা কোম্পানির মধ্যে ৩৩টি কোম্পানির মোট বিনিয়োগ ২০২১ সালে দাঁড়িয়েছে ৩৬ হাজার ৮৩০ কোটি ৯২ লাখ টাকা, যা আগের বছরের  তুলনায় ৪.১৪ শতাংশ বেশি। ২০২০ সালে মোট বিনিয়োগ ছিল ৩৫ হাজার ৪২১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর  ব্যবসা সমাপনীর সাময়িক হিসাব প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। তবে দু'টি কোম্পানির ব্যবসার হিসাব পাওয়া যায়নি।

২০২১ সালে বিনিয়োগ বেড়েছে ২০ কোম্পানির

২০২১ সালে ৩৩টি লাইফ বীমা কোম্পানির মধ্যে বিনিয়োগ বেড়েছে ১৯ কোম্পানির, কমেছে ১০ কোম্পানির। এছাড়াও একটি কোম্পানির বিনিয়োগ বাড়েনি এবং দু'টি কোম্পানি ব্যবসা শুরু করেছে আলোচ্য ২০২১ সালে।

দেশের লাইফ বীমা খাতে মোট বিনিয়োগের ৪৫ শতাংশই মেটলাইফের। ২০২১ সালেও সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগে বেড়েছে বিদেশী মালিকানাধীন মেটলাইফের। কোম্পানিটির ২০২১ সালে বিনিয়োগ বেড়েছে ৯৩৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। ২০২০ সালে কোম্পানিটির মোট বিনিয়োগ ছিল ১৫ হাজার ৭৩৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। আর ২০২১ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৬৭০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।

বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স। তবে দেশীয় বীমা কোম্পানির মধ্যে বিনিয়োগ বৃদ্ধির শীর্ষে রয়েছে এই লাইফ বীমা কোম্পানি। লাইফ বীমা খাতের মোট বিনিয়োগের ১২.৭০ শতাংশই ন্যাশনাল লাইফের।

২০২১ সালে ন্যাশনাল লাইফের বিনিয়োগ বেড়েছে ৪১৭ কোটি টাকা। ২০২০ সালে কোম্পানিটির মোট বিনিয়োগ ছিল ৪ হাজার ২৮৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। আর ২০২১ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭০০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।

২০১৩ সালে অনুমোদন পাওয়া চতুর্থ প্রজন্মের কোম্পানি সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। কোম্পানিটির ২০২১ সালে ১৫৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকা বিনিয়োগ বেড়েছে। কোম্পানিটির ২০২০ সালে বিনিয়োগ ছিল ১২৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। আর ২০২১ সালে এসে বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ২৫৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।

বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে চতুর্থ স্থানে রয়েছে সরকারি লাইফ বীমা প্রতিষ্ঠান জীবন বীমা করপোরেশন। কোম্পানিটির ২০২১ সালে ১৩৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেছে। ২০২০ সালে মোট বিনিয়োগ ছিল ২ হাজার ১৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আর ২০২১ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৫২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।

বিনিয়োগ বৃদ্ধির ধারায় এরপরে রয়েছে যথাক্রমে গার্ডিয়ান লাইফ, কোম্পানিটির বিনিয়োগ বেড়েছে ৫৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এরপরে মেঘনা লাইফের ২২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, রুপালি লাইফের ১৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা, মার্কেন্টাই ইসলামী লাইফের ১১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা, প্রগতি লাইফের ৮ কোটি ৪৬ লাখ, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফের ৭ কোটি ১০ লাখ টাকা, এলআইসি বাংলাদেশের ৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, আলফা লাইফের ৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, আস্থা লাইফ ৩ কোটি টাকা, জেনিথ ইসলামী লাইফের ২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, চার্টাড লাইফের ২ কোটি ২ লাখ টাকা, ডায়মন্ড লাইফের ৬৩ লাখ টাকা, বেঙ্গল ইসলামী লাইফের ৬০ লাখ টাকা, বেস্ট লাইফের ২৬ লাখ টাকা এবং গোল্ডেন লাইফের ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ বেড়েছে।

বিনিয়োগ কমেছে ১০ লাইফ বীমা কোম্পানির

২০২১ সালে বিনিয়োগ কমেছে ১০টি লাইফ বীমা কোম্পানির। আর এই ১০ কোম্পানির মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ কমেছে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের। কোম্পানিটির বিনিয়োগ কমেছে ১৩৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ফারইস্ট ইসলামী লাইফের ২০২০ সালে মোট বিনিয়োগ ছিল ২ হাজার ৬৩৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। যা ২০২১ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৯৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

এর পরের আবস্থানে রয়েছে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স। কোম্পানিটির ২০২১ সালে বিনিয়োগ কমেছে ১১৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। ২০২১ সালে পপুলার লাইফের মোট বিনিয়োগ ১ হাজার ৭৪৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা থাকলেও ২০২০ সালে ছিল ১ হাজার ৮৫৯ কোটি ৯ লাখ টাকা।

এর পরে যথাক্রমে বিনিয়োগ কমেছে ডেল্টা লাইফের ৯০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, প্রোগ্রেসিভ লাইফের কমেছে ১৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, প্রাইম ইসলামী লাইফের ১৭ কোটি ৬ লাখ টাকা, হোমল্যান্ড লাইফের কমেছে ৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, সন্ধানী লাইফের ৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, সানফ্লাওয়ার লাইফের ৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা,পদ্মা ইসলামী লাইফের ৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা এবং প্রোটেক্টিভ ইসলামী লাইফের কমেছে প্রায় ৩ কোটি টাকা।

এছাড়াও যমুনা লাইফের কোন বিনিয়োগ বাড়েনি। ২০২০ সালে কোম্পানিটির বিনিয়োগ ছিল ১৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ২০২১ সালে বিনিয়োগ একই রয়েছে কোম্পানিটির। এদিকে ২০২১ সালে যাত্রা শুরু করা ২ লাইফ বীমা কোম্পানির বিনিয়োগ যথাক্রমে আকিজ তাকাফুল লাইফের ১৯ কোটি ৫ লাখ টাকা এবং এনআরবি ইসলামিক লাইফের ১৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

বিনিয়োগের বিষয়ে ন্যাশনাল লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কাজিম উদ্দিন বলেন, সাধারণত জীবন বীমা শিল্পে গ্রাহকের আস্থার ঘাটতি রয়েছে। এই আস্থা ঘাটতির পিছনে মূল কারণ কিছু কিছু কোম্পানির বীমা দাবি পরিশোধে দীর্ঘ সূত্রিতা। তিনি বলেন, ন্যাশনাল লাইফ গ্রাহকের বীমা দাবিগুলো স্থানীয় এলাকায় গিয়ে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গ্রাহকের আত্মীয় স্বজন ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে প্রদান করে থাকে। এর ফলে ন্যাশনাল লাইফের গ্রাহক সংখ্যা বাড়ছে, প্রিমিয়াম সংগ্রহও বাড়ছে; সাথে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ব্যয় আনুমোদিত সীমার চেয়ে থেকে ১০৬ কোটি টাকা কম হয়েছে এবার। আয়ের থেকে ব্যয় কম হওয়ায় মূলত বিনিয়োগ বেড়েছে। একই সাথে লাইফ বীমা খাতে ব্যয় কম হওয়ার কারণে বিনিয়োগ বেড়েছে।