নন-লাইফ বীমায় কমিশন উঠেছে ৫০ শতাংশে

আবদুল্লাহ পাটোয়ারী: নন-লাইফ বীমা কোম্পানি ৫০ শতাংশ পযর্ন্ত কমিশন দিচ্ছে। বীমা খাত সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। আলাপকালে নন-লাইফ বীমা কোম্পানির পলিসি বিক্রির সাথে সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন কর্মকর্তারা বলেন, বর্তমানে মোটর বীমায় ৩৫%, ফায়ারে ৫০-৫৫%, মেরিনে ৫০% পযর্ন্ত কমিশন দেয়া হচ্ছে।

ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র সাথে আলাপকালে তারা বলেন, আইডিআরএ থেকে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার পরও অবৈধভাবে কমিশন দেয়া বন্ধ হয়নি। তাদের মতে, আইডিআরএ নানা ধরনের সার্কুলার দিলেও তা কতটা বাস্তবায়ন হচ্ছে তা নিয়ে মনিটরিংয়ের অভাব রয়েছে।

এছাড়া আইডিআরএ’র অবৈধ কমিশন দেয়ার অপরাধে আইন অনুসারে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানা করে থাকে। এক্ষেত্রে বীমা কোম্পানিগুলো কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে কমিশন দেয়ার বিপরীতে জরিমানা করা হয় ৫ লাখ টাকা। ফলে জরিমানার হার কম হওয়ায় কমিশন বন্ধে আইডিআরএ’র পদক্ষেপগুলো ফলপ্রসূ হচ্ছে না।

খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, আইডিআরএ’র উচিত কঠোর মনিটরিংয়ের পাশাপাশি লাইসেন্স বাতিলের মত পদক্ষেপ নেয়া।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কমিশন বন্ধে আইডিআরএ’র সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ ছিল ৬৪ ও ৬৮ নং সার্কুলার। এই সার্কুলার জারির পর বীমা কোম্পানিগুলো নতুন নতুন পদ্ধতি বের করছে। কখনো এমপ্লয়ী নিয়োগ দিয়ে, কখনো এমপ্লয়ীদের বেতন-ভাতা, বোনাস ও অন্যান্য সুবিধার নামে কোম্পানি থেকে টাকা বের করে তা কমিশন হিসেবে দেয়া হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বীমা কর্মকর্তা বলেন, আইডিআরএ’র নিয়ম মেনে পলিসি করতে গেলে তৃতীয় প্রজন্মের কোম্পানিগুলো মার্কেটে টিকে থাকতে পারবে না। কেননা, আগের প্রজন্মের বীমা কোম্পানিগুলোর অবস্থান নতুনগুলোর তুলনায় অনেক মজবুত এবং তাদের সম্পদের পরিমাণ অনেক। এজন্য কমিশনের পরিমাণ বেশি দিয়ে হলেও পলিসি করে নিচ্ছে।

অন্য আরেক কর্মকর্তা বলেন, কোম্পানিগুলো তাদের ব্যবসা ধরে রাখতে মোটর বীমায় ৩৫%, ফায়ার বীমায় ৫০-৫৫%, মেরিন বীমায় ৫০% কমিশন দিয়ে পলিসি করছে। যদি কোম্পানিগুলো বেশি কমিশন দিয়ে পলিসি না করে তাহলে তারা মার্কেটে পলিসি পাবে না। এজন্য বাড়তি কমিশন দিয়ে পলিসি করতে হচ্ছে।

ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র সাথে আলাপকালে তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, মার্কেটে কমিশন ৭০% পর্যন্ত চলছে। বীমা কোম্পানিগুলো বাড়তি কমিশন দিয়ে তারা পলিসি করিয়ে নিচ্ছে।

ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো এত কমিশন দিয়ে কেন পলিসি করাচ্ছে? এর দায় কার? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এই কমিশনের জন্য দায়ী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির এমডিরা। তাদের কারণে এত কমিশন হার বেড়ে চলছে। এমডিরা যদি আইডিআরএ’র নিয়ম অনুযায়ী কমিশন দেন এবং এর চেয়ে বেশি না দেন তাহলে এই কমিশন বাণিজ্য থাকত না। এমডিদের কোন চাপ নেই যে পলিসি করাতে হবে। এমডিরা নিজেদেরকে কোম্পানির মালিকদের কাছে ব্যবসার ভলিউম বেশি দেখানোর জন্য এই কাজ করে থাকে।

তিনি আরো বলেন, কোম্পানির এমডিরা যদি আজ থেকে সবাই বলে যে আমরা বেশি কমিশন দিয়ে পলিসি করাবো না । তাহলে কি কারো সুযোগ আছে পলিসি করানোর? কিন্তু না, তারা বেশি কমিশন দিয়ে পলিসি করে নিচ্ছে। পলিসি করানো বাধ্যতামূলক যেহেতু সেক্ষেত্রে নির্ধারিত হারে কমিশন দিয়ে পলিসি করানো সম্ভব। শুধুমাত্র এমডিদের সদিচ্ছার অভাব।

বেশি কমিশন দিয়ে পলিসি করানো হচ্ছে এইক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত কারা হচ্ছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ও গ্রাহক উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গ্রাহক যখন ৬০%-৭০% কমিশন নিয়ে পলিসি করে তখন ক্লেইম হলে সে আর ক্লেইম পায় না। কোম্পানি তখন নয়-ছয় করে; এই ডকুমেন্ট ওই ডকুমেন্ট নাই, বিভিন্ন সমস্যা দেখিয়ে আর ক্লেইম দেয় না। সেক্ষেত্রে গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর কোম্পানি এজন্য রি-ইন্স্যুরেন্স করতে পারে না। যার ফলে কোম্পানি এত বড় ক্লেইম দেওয়ার সামর্থ্য রাখে না।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে যে পরিমাণে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি আছে সে পরিমাণ ব্যবসার ভলিউম নেই। যার জন্য ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো কাস্টমার ধরার জন্য নিয়মের বাধা ভেঙ্গে এই অতিরিক্ত কমিশন দিয়ে পলিসি করে যাচ্ছে।

সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শফিক শামীম বলেন, মার্কেটে নন-লাইফ কোম্পানিগুলোর মধ্যে যারা অতিরিক্ত কমিশন দিচ্ছে তারা পুনর্বীমা করে কিনা সেটা সন্দেহজনক। বিষয়টি চেক করা হলে বের হয়ে আসবে আসলে তারা পুনর্বীমা করছে কিনা। যারা পুনর্বীমা করে তাদের দ্বারা কখনো অতিরিক্ত কমিশন দেয়া সম্ভব না। কেননা, পুনর্বীমা করলে আমি পাব ২৫%-৩০% তাহলে গ্রাহককে কিভাবে ৫০%- ৬০% কমিশন দিব। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ পুনর্বীমা করার বিষয় গুরুত্ব দিয়ে দেখলে অতিরিক্ত কমিশন দেয়া বন্ধ করা সম্ভব হবে।

অতিরিক্ত কমিশনগুলো কিভাবে দেখানো হয় এই বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোম্পানিগুলো ব্লাক মানি বা অবৈধ টাকা দিয়ে কমিশন দেয় অথবা কর্মকর্তা নিয়োগ দেখিয়ে এই কমিশনের টাকা দেখানো হয়। এই অবৈধ কমিশন বন্ধে কি করা যায় এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আইডিআরএ’কে আরো গুরুত্ব দিয়ে মনিটরিং করতে হবে। গ্রাহক ও বীমা কোম্পানির সদিচ্ছার মাধ্যমে এই কমিশন বন্ধ করা সম্ভব।

নিটল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মাহবুবুল করিম বলেন, মার্কেটে অতিরিক্ত কমিশন চলছে এটা বেআইনি। এটার দ্বারা বীমা কোম্পানিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এটা বন্ধের জন্য আইডিআরএ’কে আরো গুরুত্ব দিয়ে মনিটরিং করা দরকার।