আর্থিক প্রতিবেদনে মিথ্যা তথ্য

গ্রাহকের ৫ কোটি টাকার প্রিমিয়ামের হিসাব দেয়নি অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স

আবদুর রহমান আবির: আর্থিক প্রতিবেদনে প্রিমিয়াম আয়ের প্রায় ৫ কোটি টাকার হিসাব দেয়নি অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স। গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ ও সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিতে প্রিমিয়াম আয়ের এই তথ্য গোপনের অভিযোগ উঠেছে বীমা কোম্পানিটির বিরুদ্ধে। ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র অনুসন্ধানে এই তথ্য পাওয়া গেছে। 

অনুসন্ধানে দেখা যায়, নন-লাইফ বীমা খাতে প্রিমিয়াম আয়ের তথ্য গোপন করে রাজস্ব ফাঁকি ও অবৈধ কমিশন বন্ধ করতে ২০১৯ সালে ৩টি ব্যাংক একাউন্টে প্রিমিয়াম জমার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে ৬৪ নং সার্কুলার জারি করে বীমা খাত নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ।

তবে সাধারণ বীমা করপোরেশন থেকে প্রাপ্য সরকারি সম্পত্তির বীমা বিপরীতে পাওয়া টাকা এই ৩টি ব্যাংক একাউন্টে জমা হয় না।

নিয়ম অনুসারে, গ্রাহকের জমা করা প্রিমিয়ামের টাকা থেকে ভ্যাট ও স্ট্যাম্পের টাকা সরকারের রাজস্ব হিসাবে জমা দেয়া হয়। বাকি টাকার হিসাব দিতে হয় আর্থিক প্রতিবেদনে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০২০ সালে ডাচ-বাংলা, যমুনা ও বেসিক ব্যাংকে একটি করে মোট ৩টি ব্যাংক একাউন্টে প্রিমিয়াম এবং ভ্যাট ও স্ট্যাম্পের টাকা জমা নেয় অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স।

কোম্পানিটির ৩টি ব্যাংক হিসাবে ২০২০ সালে সর্বমোট জমা হয় ৪০ কোটি ২৬ লাখ ১ হাজার ৫৭৫ টাকা। তবে এর মধ্যে চেক রিটার্ন হয় ১ কোটি ৮৮ লাখ ৪৪ হাজার ১৯৩ টাকা।

এই হিসাবে প্রিমিয়াম ও ভ্যাট-স্ট্যাম্প বাবদ প্রকৃত জমা ৩৮ কোটি ৩৭ লাখ ৫৭ হাজার ৩৮২ টাকা।

অগ্রণী ইন্স্যুরেন্সের বার্ষিক প্রতিবেদনে ২০২০ সালের ভ্যাট এবং স্ট্যাম্প বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ৪ কোটি ৬৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা।  

কোম্পানিটির ব্যাংক একাউন্টে মোট জমাকৃত টাকা থেকে ভ্যাট ও স্ট্যাম্পের টাকা বাদ দেয়া হলে প্রিমিয়াম বাবদ জমাকৃত টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৩ কোটি ৭৪ লাখ ৭ হাজার ৩৮২ টাকা।

আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে ২০১৯ সালে কোম্পানিটির ডিপোজিট প্রিমিয়াম ছিল ১ কোটি ৮ লাখ ৭৭ হাজার ৫১৫ টাকা। 

উল্লেখ্য, নৌ বীমার কভার নোটের বিপরীতে জমা নেয়া প্রিমিয়াম সিপমেন্ট এডভাইস না পাওয়া পর্যন্ত ডিপোজিট প্রিমিয়াম হিসেবে দেখানো হয়। পরে শিপমেন্ট এডভাইস পাওয়ার পর কভার নোটটি বীমা পলিসিতে রূপান্তরিত হয় এবং ডিপোজিট প্রিমিয়ামকে কোম্পানির প্রিমিয়াম আয় হিসেবে প্রদর্শন করতে হয়।

এই হিসেবে ২০১৯ সালের ডিপোজিট প্রিমিয়াম ২০২০ সালের ব্যাংক একাউন্টে জমা করা প্রিমিয়াম সাথে যোগ করা হলে অগ্রণী ইন্স্যুরেন্সের মোট প্রিমিয়ামের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৪ কোটি ৮২ লাখ ৮৪ হাজার ৮৯৭ টাকা।

অপরদিকে আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে ২০২০ সালের ডিপোজিট প্রিমিয়াম ৭৭ লাখ ৮৩২ টাকা। নিয়ম অনুসারে ২০২০ সালের ডিপোজিট প্রিমিয়াম মোট প্রিমিয়াম থেকে বাদ দেয়া হলে কোম্পানিটির সরাসরি প্রিমিয়াম আয় দাঁড়ায় ৩৪ কোটি ৫ লাখ ৮৪ হাজার ৬৫ টাকা।

কিন্তু অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স ২০২০ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে সরাসরি প্রিমিয়াম আয় দেখিয়েছে ২৯ কোটি ৭ লাখ ৪ হাজার ১৪১ টাকা। অর্থাৎ ৪ কোটি ৯৮ লাখ ৭৯ হাজার ৯২৪ টাকা কম দেখিয়েছে।

এই টাকার ১৫ শতাংশ ভ্যাট ধরা হলে কোম্পানিটি সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে ৭৪ লাখ ৮১ হাজার ৯৮৯ টাকা।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. আজহারুল ইসলামের সঙ্গে ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র পক্ষ থেকে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে কোম্পানিটিতে স্বশরীরে যোগাযোগ করা হলে কোম্পানিটির এসিসট্যান্ট ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ও চীফ ফাইনান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) চিন্ময় চক্রবর্তী মতামত দেয়ার জন্য এক সপ্তাহ সময় নেন।

তবে পরবর্তী সময়ে একাধিকবার কল করলেও সাড়া দেননি চিন্ময় চক্রবর্তী। ফলে এ বিষয়ে অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কোন বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।