বীমা শিল্পের সংস্কার: আইনী ভাবনা ও বাস্তবতা
 মো. নূর-উল-আলম, এসিএস: সারাবিশ্বে বীমা এজেন্ট একটি প্রতিষ্ঠিত ধারণা। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়; তাই এখানেও এটি একটি প্রতিষ্ঠিত বিষয়। সাধারণ মানুষের অনেকেই মনে করেন বীমা এজেন্ট বীমা কর্মচারী। এ প্রবন্ধে আইন, বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা এবং এ বিষয়ে বৈশ্বয়িক ভাবনার আলোকে এজেন্ট বিষয়ে বীমা খাতের সম্ভাব্য সংস্কার, আইনী ভাবনা এবং এর বাস্তবতা  তুলে ধরা হয়েছে।
মো. নূর-উল-আলম, এসিএস: সারাবিশ্বে বীমা এজেন্ট একটি প্রতিষ্ঠিত ধারণা। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়; তাই এখানেও এটি একটি প্রতিষ্ঠিত বিষয়। সাধারণ মানুষের অনেকেই মনে করেন বীমা এজেন্ট বীমা কর্মচারী। এ প্রবন্ধে আইন, বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা এবং এ বিষয়ে বৈশ্বয়িক ভাবনার আলোকে এজেন্ট বিষয়ে বীমা খাতের সম্ভাব্য সংস্কার, আইনী ভাবনা এবং এর বাস্তবতা  তুলে ধরা হয়েছে।   
ঝুঁকি মানব জীবনে অবিচ্ছেদ্য অংশ। চাইলেও এ থেকে মানুষের নিস্তার নেই। একা চলাচল এবং বসবাসের ঝুঁকি এড়ানোর জন্য মানুষ যথাক্রমে দল বেঁধে চলাফেরা এবং সমাজ বদ্ধ জীবন যাপন শুরু করে। ইতিহাস হতে জানা যায়, রোম দেশে ৫০ বছর পর্যন্ত প্রত্যেক ব্যক্তি Colegia Tenuforum নামক একটি সমিতিতে চাঁদা দিত এবং সমিতির কোন সদস্যের মৃত্যুতে তারা উক্ত টাকা হতে খরচ করত। সামুদ্রিক জাহাজের গমনাগমন সংক্রান্ত ঝুঁকি বহনের উদ্দ্যেশে ব্যবসায়ীদের জোটবদ্ধতা থেকে আধুনিক বীমার জন্ম। মূলত, একের ঝুঁকি সকলে ভাগা-ভাগি করা থেকেই বীমা ধারণার জন্ম হয়, বীমার ভাষায় যাকে সহযোগীতার নীতি বলা হয় ।
এ মূলনীতির ভিত্তিতে বীমা কোম্পানিগুলো প্রিমিয়ামের বিনিময়ে বীমা গ্রাহকের ঝুঁকি নিজের কাঁধে তুলে নেয়। বীমা হলো একটি চুক্তি। এজন্য বীমা পলিসিকে বীমা চুক্তি বা ক্ষতিপূরনের চুক্তিও বলা চলে। এটি দু’পক্ষের মধ্যে একটি আইনসম্মত চুক্তি। এক পক্ষ অন্য পক্ষকে ক্ষতিপূরণ দিবে বলে নিশ্চয়তা দিয়ে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। অন্যপক্ষ, যার বীমা যোগ্য স্বার্থ আছে সে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট হারে প্রিমিয়াম প্রদানের নিশ্চয়তা দিয়ে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। এভাবে বীমা হলো প্রথম পক্ষ বীমাকারী বা বীমা কোম্পানি এবং দ্বিতীয় পক্ষ বীমাগ্রহীতার মধ্যে যথাক্রমে ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং প্রিমিয়াম প্রদানের নিশ্চয়তা সম্বলিত একটি চুক্তি ।
বীমা এজেন্ট হলো উক্ত চুক্তি সম্পাদনের সহায়তাকারী তৃতীয় পক্ষ। এক কথায় বলা যায়, যে ব্যক্তি বীমা কোম্পানির পক্ষে বীমা গ্রাহকের কাছে বীমা স্কিম/ বীমা পলিসি বিক্রি করে থাকে তাকে বীমা এজেন্ট বা বীমা প্রতিনিধি বলে। বীমা প্রতিনিধি বীমা গ্রাহক ও বীমা কোম্পানির মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করে থাকে। এ কারণে জীবন বীমা কিংবা সাধারণ বীমা ব্যবসার প্রসারের সাথে এজেন্টের কর্মকাণ্ড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বীমা আইন ২০১০ এর ১২৪, ১২৫ ও ১২৬ ধারা সমূহে বীমা এজেন্ট সংক্রান্ত বিধি-বিধান বর্ণিত হয়েছে। বীমা আইন অনুযায়ী একজন বীমা এজেন্ট বা বীমা প্রতিনিধি বীমা কোম্পানির পক্ষে বীমা পলিসি বিক্রি করার কাজ করে পারিশ্রমিক হিসেবে বীমা কোম্পানি হতে কমিশন পেয়ে থাকে। বীমা আইন বীমা এজেন্টের সাথে বীমাকারী বা বীমা কোম্পানির সম্পর্কের বিষয়ে নিরব থাকলেও বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনায় দেখা যায়, বীমা কোম্পানি বীমা এজেন্টের কোন দায় বহণ করে না । বিভাগীয় পর্যালোচনায় দেখা যায়, এজেন্ট কর্তৃক প্রিমিয়াম গ্রহণ করার পর তা বীমা কোম্পানিতে জমা না হলে সেটি অসমাপ্ত চুক্তি বলে গণ্য হয়; যা আইন দ্বারা বলবৎযোগ্য নয়। অপর এক মোকদ্দমার রায়ে দেখা যায় বীমার এক এজেন্ট জনৈক গ্রাহকের প্রস্তাবের ফরম পূরণ করে দেয় এবং প্রস্তাবক শুধু সে ফরমে দস্তখত দেয় । বিষয়টি মামলা পর্যন্ত গড়ালে, মামলার রায়ে বলা হয় বীমা এজেন্ট এক্ষেত্রে বীমা গ্রাহকের প্রিতিনিধি হিসেবে কাজ করেছিলেন, তার অসত্য বর্ণনার দায় কোম্পানি নিবে না।
বাংলাদেশে প্রচলিত বীমা পলিসি বিক্রির প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিক্রি প্রক্রিয়ার শৃংখলে এজেন্টরা হলো প্রান্তিক ব্যক্তিবর্গ মাত্র। আইনে জীবন বীমার ক্ষেত্রে বীমা এজেন্ট নিয়োগকারী (এমপ্লয়ার অব এজেন্ট ) ব্যক্তি এবং সংস্থা বা কোম্পানি নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে। অপরদিকে, সাধারণ বীমার ক্ষেত্রে বীমা এজেন্ট নিয়োগকারী ব্রোকার (ইন্স্যুরেন্স ব্রোকার) কোম্পানির কথা বলা হয়েছে। বীমা আইনে নন-লাইফ বীমা কোম্পানির জন্য দু’ভাবে এজেন্ট নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে। বীমা আইন ২০১০ এর ১২8 ধারায় নন-লাইফ বীমা কোম্পানি স্বয়ং এবং অনুমোদিত ব্রোকার ( ইন্স্যুরেন্স ব্রোকার) কোম্পানি তথা করপোরেট ব্রোকার কর্তৃক বীমা এজেন্ট নিয়োগের মধ্যমে বীমা পলিসি বিক্রির সুযোগ রাখা হয়েছে। ১২৬ ধারায় ইন্স্যুরেন্স ব্রোকার বা বীমা আমন্ত্রণকারী হিসেবে শুধু মাত্র কোম্পানির বিধান রাখা হয়েছ। তাই কোন ব্যক্তি ব্রোকার কর্তৃক নন-লাইফ বীমা কোম্পানির জন্য এজেন্ট নিয়োগ বৈধ নয়। বীমা আইন বিশ্লেষণ করে দেখা যায় উক্ত ইন্স্যুরেন্স ব্রোকার বা বীমা আমন্ত্রণকারী কোম্পানি বীমা কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে গণ্য হন না এবং তার মধ্যস্থতায় কোম্পানি কর্তৃক ইস্যুকৃত পলিসির উপর তার কোন আইনী দায়ও নাই। স্বাভাবিকভাবে, একই বিষয় প্রযোজ্য উক্ত ব্রোকার কর্তৃক নিয়োগকৃত বীমা এজেন্টের ক্ষেত্রেও। অপর দিকে, বাংলাদেশে প্রচলিত বীমা আইন ২০১০ এর ১২৫ ধারায় জীবন বীমা কোম্পানির পলিসি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে এজেন্ট নিয়োগকারী (এমপ্লয়ার অব এজেন্ট) ব্যক্তি এবং সংস্থা বা কোম্পানি নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে।
সম্প্রতি উন্নয়ন এ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) একটি সার্কুলার (সার্কুলারনং- নন-লাইফ ৭৫/২০২০) জারি করেছে, যাতে বলা হয়েছে নন-লাইফ কোম্পানিগুলো বেতন-ভাতা খাতে নীট প্রিমিয়ামের ১০ শতাংশের বেশি খরচ করতে পারবে না। উপরন্তু, আইডিআরএ’র জারি করা ওই সার্কুলারে বেতন ভাতায় ব্যয়ের সীমা বেঁধে দেয়ার পাশাপাশি আরো ২টি নির্দেশনা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। সার্কুলারটিতে বলা হয়েছে, ১ মার্চ ২০২০ তারিখ থেকে নন-লাইফ কোম্পানিসমূহে ব্যবসা আহরণের নিমিত্তে সকল উন্নয়ন কর্মকর্তাগণকে কমিশনের ভিত্তিতে এজেন্ট হিসেবে পদায়ন করতে হবে। এছাড়া উক্ত সার্কুলারে নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোকে বীমা আইন, ২০১০ এর ৫৮(১) ধারার বিধান অনুযায়ী বীমা ব্যবসা অর্জন বা সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বীমা এজেন্ট ব্যতীত অন্য কাউকে কমিশন বা অন্য কোন নামে পারিশ্রমিক বা পারিতোষিক পরিশোধ না করার যে বিধান রয়েছে তা যথাযথভাবে প্রতিপালন এবং নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
পাঠক মাত্রই বুঝতে পারছেন, আইনের সাথে আইডিআরএ কর্তৃক ইস্যুকৃত সার্কুলার নং-নন-লাইফ ৭৫/২০২০ এর সম্পর্ক সম্পূরক। কিন্তু বীমা শিল্পর দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থের সাথে বিষয়টি পরিপূরক। কারণ, নন-লাইফ বীমার বর্তমান বাজার তৈরীতে উক্ত বীমা উন্নয়ণ কর্মকতাদের অবদান অনস্বীকার্য। তারাই দীর্ঘ দিন ধরে সাধারণ বীমার সেবা সমূহ গ্রাহকদের দোর গোড়ায় পৌঁছিয়ে অবহেলিত এ শিল্পে সেবা দিয়ে আসছে। হঠাৎ করে বীমা সেবা প্রদানের ডিষ্ট্রিবিউশন চ্যানেল থেকে তাদেরকে বিচ্ছিন্ন বা আলাদা না করেই বিকল্প খুঁজতে হবে। আবার কেউ, ব্যক্তি কিংবা বীমা কোম্পানি, যাতে কোন অবৈধ সুযোগ নিতে না পারে সেদিকটাও খেয়াল রাখতে হবে। নচ্যেৎ অবৈধ কমিশন বন্ধে আইডিআরএ এর সকল চৌকষ তৎপরতা এবং সফল উদ্যোগ ব্যর্থতায় পরিণত হবে। ফলশ্রুতিতে, সাধারণ বীমার বাজার আবার লাগামহীন হয়ে পড়ার শংকা তৈরী হবে ।
গতবছর থেকে অবৈধ কমিশন বন্ধে আইডিআরএ’র নানা মুখি পদক্ষেপের পর অভিযোগ ওঠে অনেক সাধারণ বীমা কোম্পানি তাদের কর্মকর্তা কর্মচারিদের বেতন ভাতা বাড়তি দেখিয়ে তা থেকে অবৈধভাবে কমিশন দিচ্ছে। খাতটিতে গত কয়েকমাস থেকেই এমন আলোচনা ছিল। আবার অনেকে দাবি করে আসছিলেন বেতন ভাতা বাড়তি দেখিয়ে বা নতুন নিয়োগ দেখিয়ে যাতে কোনো কোম্পানি অবৈধ কমিশন দিতে না পারে, আইডিআরএ যাতে এর প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা নেয়। এরপরপরই আইডিআরএ’র সার্কুলার নং-নন-লাইফ ৭৫/২০২০ জারি করে বেতন-ভাতা খাতে ব্যয়ের সীমা বেঁধে দিল। অনেকগুলো নন-লাইফ বীমাকারীর তথ্যবাতায়ন তথা ওয়েবসাইট ভিজিট করে দেখা যায় অদ্যবধি অনেকেই সেখানে তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং এজেন্টদের তালিকা প্রদর্শন করেনি। বিষয়টি বীমা শিল্প প্রেমিদের উক্ত দাবির সত্যতা অনেকাংশে নিশ্চত করছে ।
এখন যদিও আইডিআরএ সাময়িক সময়ের জন্য উক্ত সার্কুলার স্থগিত করছে কিন্তু আবার চালু হলে উক্ত সার্কুলার পরিপালন করতে নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর সামনে এজেন্ট কমিশন বাবদ নীট প্রিমিয়ামের ১৪ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং বেতন-ভাতা বাবদ নীট প্রিমিয়ামের ১০ শতাংশের বেশি খরচ করতে পারবে না। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বীমা উন্নয়ন কর্মকতাদের বেতন-ভাতা সমন্বয় করতে বরং সকল আইন পরিপালনকারী নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর জন্যই বেশি সমস্যা হবে। অথচ যে সকল কোম্পানি মার্কেট প্রকৌশলে রত তাদের জন্য তুলনামূলক কম সমস্যা হবে। কারণ, কর্মকর্তা কর্মচারিদের বেতন ভাতা বাড়িয়ে দেখানো বা নতুন নিয়োগ দেখানোর কারণে তারা ইতোমধ্যেই সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে এবং এখনও অবৈধ কমিশন দিয়ে যাচ্ছে।
এমন পরিস্থিততে আইডিআরএ’কে মনে রাখতে হবে, যে কোন আইনের অন্যতম মূলনীতি হলো নিরপরাধ কেউ যাতে শাস্তি না পায় সেটি নিশ্চত করা। আবার অপরাধীও যাতে কোনভাবে ছাড়া না পায় সেটিও আইনের অন্যতম উদ্দেশ্য। বিচারের ক্ষেত্রে বিচারককে সব সময় প্রথমোক্তটিই বেশি নিশ্চত করতে হয়। বীমাখাতের অভিভাবক এবং বিচারক হিসেবে আইডিআরএ’কেও প্রথমোক্তটিই বেশি নিশ্চত করতে হবে।
সকল উন্নয়ন কর্মকতাদের এজেন্ট হিসেবে গণ্য করলে সেটি তাদের সমাজিক মর্যদা এবং দীর্ঘ লব্ধ অভিজ্ঞতাকে খাটো করা হবে। এতে করে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যেও ছেদ পড়বে। উপরন্তু, বীমা উন্নয়ন কর্মকতা শব্দটিও সময়োপযোগী নয় । বরং তাদের বীমা বিপনণ কর্মকতা হিসেবে স্বীকৃতি দিলে বিষয়টি ভালো শোনায় ।
আবার, উক্ত সার্কুলার পূর্ব পরিস্থিতির রাশ টেনে ধরে এখাতের সত্যিকারের উন্নয়নের স্বার্থে বিকল্প কৌশল খোঁজাও জরুরি হয়ে পড়েছে। প্রচলিত বিপনণ পদ্ধতির পাশাপাশি ইন্স্যুরেন্স ব্রোকার কোম্পানি এবং ব্যাংকাস্যুরেন্স বিশ্বব্যাপী দু’টি জনপ্রিয় বীমা সেবা বিপনণ পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃত।
এক্ষেত্রে নীট প্রিমিয়ামের বিপরীতে বীমা বিপনণ কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। পর্যায়ক্রমে প্রয়োজনীয় নীতিমালা করে সফল বীমা বিপনণ কর্মকর্তাদের ইন্স্যুরেন্স ব্রোকার কোম্পানি তথা কর্পোরেট ব্রোকার কোম্পানি খোলায় উৎসাহিত করা যেতে পারে। যত দ্রুত সম্ভব ব্যাংকাস্যুরেন্স চালু করার লক্ষ্যে অন্যান্য দেশের মতো প্রথমে গাইডলাইন তৈরি করতে হবে এবং সে গাইডলাইনের ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে ব্যাংকাস্যুরেন্স চালু করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ ।
বিকল্প পন্য বিপনণ চ্যালেন হিসেবে কর্পোরেট ব্রোকার কোম্পানি এবং ব্যাংকাস্যুরেন্স ব্যবহারে বীমা কোম্পানিগুলোর ব্যবসার নতুন নতুন উৎস সৃষ্টি হবে। অত্যাধুনিক এই বিক্রয় প্রক্রিয়া দু’টি ব্যবহারে কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা খরচ ব্যাপকভাবে কমে আসবে। ব্যাংকাস্যুরেন্সের ক্ষেত্রে বীমা কোম্পানিগুলো অপেক্ষাকৃত কম খরচে ব্যাংকের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বৃহত্তর ভৌগলিক অঞ্চলকে তাদের সেবার আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম হবে। অর্থাৎ প্রত্যন্ত গ্রামীণ জনপদেও বীমা সেবা পৌঁছানো সহজ হবে। অধিকন্তু, ব্যাংকের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে সেবা সরবরাহ করতে পারলে গ্রাহকের মানসিক বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে কোম্পানিগুলোর নাটকীয় উন্নতি হবে। এছাড়া জীবন বীমার ক্ষেত্রে ব্যাংকাস্যুরেন্সের মাধ্যমে কোম্পানি সহজেই নবায়ন প্রিমিয়াম পেতে পারে এবং ল্যাপস বা তামাদির ঘটনা বহুলাংশে হ্রাস পাবে। এভাবে ত্রিবিধ কার্যকর বিকল্প চ্যানেল অর্থাৎ প্রচলিত বিপনণ পদ্ধতি, ইন্স্যুরেন্স ব্রোকার কোম্পানি এবং ব্যাংকাস্যুরেন্স চ্যানেলে বীমা পন্য বিপণন এবং তাদের পারস্পারিক প্রতিযোগীতায় বীমা খাতে কাংখিত শৃংখলা ফিরে আসবে ।
ব্যাংকাস্যুরেন্সের নীতিমালা তৈরীর সময় এমন একটি ধারা যুক্ত করার কথা ভাবতে হবে যাতে বীমা বিষয়ে অভিজ্ঞ জনবলকে এ নতুন বিপণন পদ্ধতিতে কাজে লাগানো যায়। ব্যাংকাস্যুরেন্সের মাধ্যমে পলিসি ইস্যুর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কাজের জন্য ব্যাংক কর্মকর্তা নিয়োগে কিংবা পদায়নের ক্ষেত্রে বীমা অভিজ্ঞতার শর্তজুড়ে দিয়ে বীমা পেশাজীবীদের দীর্ঘলব্ধ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর কথা অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে। এতে করে সংস্কারের কারণে কোন বীমা কর্মকর্তা তো বেকার হবেই না বরং এ বিষয়টি ভালো বেতন-ভাতা এবং বীমা অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য বীমা শিল্পের প্রতি মেধাবীদের আগ্রহ বাড়াতে চমৎকার শ্রেষ্ঠ অনুঘটকের কাজ করবে।
পরিশেষে বলা চলে, জনগণের সামনে যত বেশি বিনিয়োগের বিকল্প পথ থাকবে আর্থনীতির জন্য সেটি ততবেশি ভালো। বীমা হতে পারে বিনিয়োগের নতুন দিগন্ত। উপরন্তু এখন সময় এসেছে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ব্যাংক এবং বীমা উভয় খাতকেই একে অপরের সহযোগী হিসেবে কাজ করার। এতে ব্যাংক এবং দেশের অর্থনীতি সকলের জন্যই কল্যাণ নিহিত। তাই বর্তমান বাস্তবতায় অতীব প্রয়োজনীয় বিকল্প বীমা সেবা বিপণন চ্যানেল সৃষ্টির লক্ষ্যে বিধি-বিধান প্রণিত হলে বীমাখাত হবে অলস সন্ঞ্চয় বিনিয়োগের জন্য সম্ভাবনার নতুন দুয়ার। জনগন পাবে একই সাথে ঝুঁকি বহন এবং গচ্ছিত অর্থ ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা। সক্ষম এবং কার্যকর এ বীমা শিল্পের প্রতি জনগণের অনাগ্রহ এবং আস্থহীনতা বহুাংশে লাঘব করবে। আয়ের তুলনায় খরচ কমে যাওয়ার ফলে বীমাকারির ব্যবস্থাপনা ব্যয় নাটকীয়ভাবে কম যাবে। প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে আসবে চিকিৎসা খাতসহ শিল্পর সাথে জড়িত অপরাপর লিংকেজ শিল্প সমূহেও। তাই যতদ্রুত সরকার এখাতে কার্যকর সংস্কার করবে ততোই অর্থনীতির জন্য মঙ্গল ।
লেখক: মো. নূর-উল-আলম, এসিএস, এমবিএ, এমএ (ইং), এলএলবি
সহযোগী সদস্য- ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অব বাংলাদেশ (আইসিএসবি)
ভাইস প্রেসিডেন্ট- প্রাইম ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড
ই-মেইল : [email protected] ,তথ্য বাতায়ন: www.csnoor.com

 (1).gif)



 
                 
                     
                             
                             
                             
                             
                            