বীমা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব পালনে অক্ষমতা এবং ব্যর্থতা প্রসঙ্গে

এ কে এম এহসানুল হক, এফসিআইআই: সম্প্রতি এই পত্রিকায় এক প্রতিবেদনে জনতা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির অপকৌশলে বীমা দাবি কারচুপিসহ সাধারন বীমা থেকে পুনর্বীমার টাকা হাতিয়ে নেয়ার এক চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। 

এই প্রতিবেদনে বীমা কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র অক্ষমতার এক করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে।

২০১১ সালে আইডিআরএ প্রতিষ্ঠার একটি প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বীমা খাতের নিয়ন্ত্রণ এবং সুষ্ঠ পরিচালনা। অথচ বীমা কর্তৃপক্ষ যখন নিজেরাই অকপটে তাদের অক্ষমতা এবং দুর্বলতার কথা স্বীকার করে, তখন বুঝতে আর বাকি থাকে না যে বীমা খাত কোন পথে চলছে। 

বীমা কর্তৃপক্ষের স্বীকারোক্তি থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে যাদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এই প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি তারাই বীমা কর্তৃপক্ষকে শাসন এবং নিয়ন্ত্রণ করছে।

কতিপয় অসাধু বীমা কোম্পানি নানা প্রকার ছল চাতুরি এবং অপকৌশলের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত বীমা আইন, ২০১০ লংঘন করে চলছে। অথচ কোনো অজ্ঞাত রহস্যজনক কারণে বীমা কর্তৃপক্ষ আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে এবং নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। কর্তৃপক্ষের এ ধরনের দায়িত্ব-জ্ঞানহীন আচরণ বীমা খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে ভাবিয়ে তুলেছে।

বীমা কোম্পানির বিভিন্ন প্রকার অনিয়ম এবং দুর্নীতির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কোম্পানি/ বীমা গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ, সময়মতো বীমা দাবি পরিশোধ না করা, মিথ্যা বা ভুয়া সার্টিফিকেট প্রদর্শন করে বীমা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার নিয়োগ অনুমোদন/ নবায়ন ইত্যাদি। 

এই সমস্ত গুরুতর অপরাধ এবং বীমা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন সত্ত্বেও দোষি এবং প্রমাণিত বীমা কোম্পানির বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কি যৌক্তিক কারণ থাকতে পারে? বীমা কর্তৃপক্ষের এহেন আচরণ এক প্রকার প্রহসনের শামিল। আইডিআরএ’র আইনে প্রতিষ্ঠানটিকে যথাযথ ক্ষমতা প্রদানের ব্যাপারে যদি কোন প্রকার ঘাটতি বা কমতি থাকে তবে সরকারের উচিত তা অনতিবিলম্বে খতিয়ে দেখা এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যা বীমা কর্তৃপক্ষের হাত শক্তিশালী করার জন্য জরুরী এবং অপরিহার্য।

বাংলাদেশ ইন্সুরান্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ) দোষি সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করবে এমনটাই তাদের কাছে প্রত্যাশা। গুটি কয়েক দুষ্টু এবং অসাধু বীমা কোম্পানির জন্য সমগ্র বীমা খাত কলঙ্কিত হোক এটা মোটেও বাঞ্চনীয় বা কাম্য নয়।

বীমা একটি অন্যতম প্রধান মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষা করা। বর্তমানে বীমা খাত যেভাবে চলছে তাতে কি বীমা গ্রাহকের স্বার্থ ক্ষুন্ন হচ্ছে না? অবশ্যই হচ্ছে। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

বীমা কর্তৃপক্ষের স্বঘোষিত অক্ষমতা, অসহায়ত্ব এবং দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা বীমা খাতের জন্য এক অশনিসংকেত বহন করে বৈকি।