শেফাক আহমেদের অনিয়ম তদন্তের নির্দেশ দেবেন কবে মাননীয় অর্থমন্ত্রী ?

বরিশালের সাবেক মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ওয়াহিদুজ্জামানের দুর্নীতি তদন্ত করতে আইনমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক অর্থমন্ত্রীর চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ওই ম্যাজিস্ট্রেটের অনিয়ম প্রাথমিক তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। এর বেশি আর কিছু মনে পড়ছে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী আইনমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন ২১ অক্টোবর। আর দৈনিক সকালের খবর এ খবরটি ছেপেছে ১০ নভেম্বর সোমবার ৫এর পাতায় ৪র্থ কলামে। বরিশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বর্তমানে বরিশালে নেই। বদলি হয়ে গেছেন জামালপুরে। আর এই বদলি অর্থমন্ত্রীর চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আইনমন্ত্রীর গৃহীত পদক্ষেপের ফল কি না খবরে তা খোলাশা করা হয়নি।

সরকারের মুরব্বী মন্ত্রী হিসেবে প্রজাতন্ত্রের যে কোনো কর্মচারি-কর্মকর্তার দুর্নীতি তদন্ত করার সুপারিশ বা নির্দেশ দিতেই পারেন (?) অর্থমন্ত্রী। সচিব, এমপি এমনকি মন্ত্রীরাও এর আওতার বাইরে পড়েন না। ঠিক তেমনি সুবিচার প্রতিষ্ঠা করা এবং জনগণের সুবিচার প্রাপ্তির ব্যত্যয় ঘটার আশঙ্কা দেখা দিলে – তা যদি কোনো বিচারকের দ্বারা সংগঠিত হওয়ার লক্ষণ পাওয়া যায় – তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে সুপারিশ করতেই পারেন তিনি। সেটা চিঠি দিয়ে হোক বা মৌখিক। কারণ আইন এবং কানুনের অধিকারে সবাই সমান – কি বিচার প্রার্থি বা বিচারক।

কিন্তু ওই ম্যাজিস্ট্রেটের দুর্নীতি তদন্তে অর্থমন্ত্রীর চিঠি এবং তার প্রেক্ষিতে আইনমন্ত্রীর পদক্ষেপের পেছনের চিত্রটা কী?

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ( আইডিআরএ)’র চেয়ারম্যান এম. শেফাক আহমেদ এক ব্যক্তিগত মামলায় হাজিরা দিতে যান বরিশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ওয়াহিদুজ্জামানের আদালতে। ম্যাজিস্ট্রেট প্রথমে তাকে জামিন দিতে অস্বীকার করেন। এরপর পরবর্তী ধার্য তারিখ পর্যন্ত অস্থায়ী জামিন দেন। স্থায়ী জামিন দেন নি। বরিশাল থেকে ফিরে শেফাক আহমেদ হয়তো বিষয়টি অর্থমন্ত্রীকে জানান। যেহেতু আইডিআরএ অর্থ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান, এ জানানোটা সঙ্গত। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর সাথে শেফাক আহমেদের সম্পর্ক দাফতরিক শিকলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বীমা বাজারে শেফাক আহমেদ অর্থমন্ত্রীর ভাগিনা হিসেবে পরিচিত। বরিশাল ম্যাজিস্ট্রেট শেফাককে স্থায়ী জামিন না দেয়ায় ক্ষেপে গিয়ে অর্থমন্ত্রী চিঠি দিয়ে ফেললেন – ও দুর্নীতিবাজ ! ওকে ধর। ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াহিদুজ্জামান যে দুর্নীতি করেছেন – তদন্ত করলেই ধরা পড়বেন – বিষয়টি অর্থমন্ত্রী জানলেন কীভাবে ? ধরে নেয়া যাক ওই ম্যাজিস্ট্রেটের দুর্নীতির ফাইল অর্থমন্ত্রীর কাজে আছে। যদি ওই ম্যাজিস্ট্রেট শেফাক আহমেদকে হাসতে হাসতে জামিন দিয়ে দিতেন তাহলে কী অর্থমন্ত্রী তার দুর্নীতি তদন্ত করতে আইন মন্ত্রীকে চিঠি দিতেন? হয়তো না। তখন তিনি সুনীতিবান হয়ে যেতেন। দুর্নীতি করে নিরাপদে থাকতেন ও নিরাপদে দুর্নীতি চালিয়ে যেতেন ওই ম্যাজিস্ট্রেট। অর্থমন্ত্রীর কাছে সব প্রমাণ থাকার পরও তিনি কিছুই বলতেন না।

লাখ লাখ ক্ষুদ্র বিনিযোগকারী শেয়ার বাজারে সবর্স্ব হারিয়ে ফতুর হয়ে গেলেও শেয়ার কেলেংকারির হোতারা উপর তালার, অনেক ক্ষমতাধর আখ্যায়িত করে বিচার – তদন্ত – এমনকি টু শব্দটি করতে রাজি হননি অর্থমন্ত্রী। শেফাককে স্থায়ী জামিন না দেয়ায় রাগে একজন বিচারকের বিরুদ্ধেই দুর্নীতি তদন্ত করতে চিঠি দিলেন অর্থমন্ত্রী।

ওই চিঠির প্রেক্ষিতে আইনমন্ত্রী যে কিছু ব্যবস্থা নিয়েছেন তা বোঝা যায় ওই খবরটির শেষ অংশ পড়লেই। ‘ইতোমধ্যেই বরিশালের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটকে বদলি করে জামালপুর পাঠানো হয় এবং বেগম নুসরাত জাহানকে বরিশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব দেয়া হয়। ওই আদালত গত ১৬ অক্টোবর আইডিআরএ’র চেয়ারম্যানকে স্থায়ী জামিন মন্জুর করে আগামী ১৬ নভেম্বর আবার শুনানির দিন ধার্য করেন।” শেফাক আহমেদকে স্থায়ী জামিন পাইয়ে দিতে দুই মন্ত্রীর কারিগরি এখানে সুষ্পষ্ট।

খবরটিতে ২টি চিঠি চালাচালির কথা আছে। একটি আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। অন্যটি অর্থমন্ত্রীর কাছে দিয়েছেন আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ। আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো অর্থমন্ত্রীর চিঠিটি দেখার সৌভাগ্য হয়নি – হওয়ার কথাও নয়। সকালের খবর যে খবরটি প্রকাশ করেছে তাতে দুইটি চিঠির বক্তব্য কিছুটা তুলে দেয়া হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেটের ভূমিকা সম্পর্কে চিঠিতে অর্থমন্ত্রী লিখেছেন, ‘আদালতের কাজে আমাদের কিছু করার থাকে না। কিন্তু বরিশালের আদালতের ব্যবহারটি খুবই দৃষ্টিকটু বলে আমার মনে হয়। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তো বটেই ।এ ব্যাপারে আমার পরামর্শ হবে যে ওই বিচারকের বিষয়ে দুর্ণীতির তদন্ত চিন্তা করা যথাযথ হবে।”

এখানে অর্থমন্ত্রীর দুটি শব্দ খুব বেশী জোরালো – ব্যবহার দৃষ্টি কটু এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এটা ওই বিচারকের আচরণগত ত্রুটি। এর জন্য তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া সমিচীন। দুর্ণীতির তদন্ত কেন? নিম্ম আদালতের যে কোন কাজের জন্য তাকে জবাব দিহি করতে হয় সুপ্রিম কোর্টের কাছে। ওই বিচারকের আচরণগত এসব ত্রুটির জন্য সুপ্রিম কোর্টের কাছে যাওয়াই যথার্থ। অর্থমন্ত্রীর এ বিষয়টি সুপ্রিমকোর্টকে অবহিত করতে আইনমন্ত্রীকে চিঠি দেয়াটাই সংগত হতো।

চিঠির আরেক অংশে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান শেফাক আহমেদের বিরুদ্ধে রুজু হওয়া ১৮টি মামলা চক্রান্তকারীদের কাজ এবং ভূয়া হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেছেন,‘বরিশাল ও ঢাকায় (শেফাকের বিরুদ্ধে) এখনও দুটি ভূয়া মামলা চলছে। বরিশালের মামলার বিবরণ থেকে বোঝা যায় যে, চক্রান্তকারীরা সেখানেও প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়।’ অর্থমন্ত্রীর চিঠির বক্তব্যে বুঝা যায়, মামলাটি ভূয়া এবং এ ভূয়া মামলায় শেফাককে স্থায়ী জামিন দেননি ম্যাজিস্ট্রেট। কাজেই ম্যাজিস্ট্রেট দুর্ণীতি করেছেন।

কিন্তু কেউ যদি কারো বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে তা বিচারকের জানার কথা না। জানলে বা বোঝতে পারলেও বিচারকের কিছু করার থাকে না। বিচারক যদি ধরে নেন কোন মামলা সত্যি অথবা ভূয়া, তাহলে ন্যায় বিচার না হওয়ার আশংকা থাকে।এটা একজন বিচারকের অবিচারক আচরণ। বিচারক বিচার চালিয়ে যাবেন। কাগজপত্র, সাক্ষী এবং উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক বিচেনায় নিয়ে তিনি মামলা সত্যি বা মিথা ঘোষণা করবেন- তার আগে নয়। কেউ যদি মিথ্যা মামলা করে থাকে, আদালতে তা মিথ্যা প্রমাণিত হলে মামলা দায়েরকারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যায়। কেউ কারো বিরদ্ধে মিথ্যা মামলা করলে তার দায় কি বিচারকের? শেফাকের বিরুদ্ধে কেউ যদি মিথ্যা মামলা করে থাকে তার জন্য মামলাকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলতে পারতেন অর্থমন্ত্রী। সেজন্য বিচারকের বিরুদ্ধে দুর্ণীতির তদন্ত করার যৌক্তিকতা কী?

অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো শেফাক আহমেদের চিঠির যে টুকু অংশ খবরে তুলে দেয়া হয়েছে তা পড়ে জানা গেল, দেশের বিভিন্নস্থানে শেফাক আহমেদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো যে ভূয়া অর্থমন্ত্রী তা নিশ্চিত হয়েছেন এনএসআই এর রিপোর্ট পড়ে। এনএসআই’র রিপোর্টের ভিত্তিতেই শেফাকের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো খারিজ হয়েছে। সিআরপিসি অনুসারে কোন মামলার তদন্তে এনএসআই দায়িত্ব পেতে পারে কি না এবং এনএসআই’র রিপোর্ট আদালতে গ্রহণযোগ্য কি না তা আইনমন্ত্রী ভাল বলতে পারবেন। কারণ তিনি একজন প্রথিতযশা আইনজীবী।

শেফাকের পদ বা পদমর্য়াদা না দেখে বিচারক কী দুর্ণীতি করলেন? যদি স্বয়ং অর্থমন্ত্রী বা আইনমন্ত্রীর কোন কাজে কেউ সংক্ষুদ্ধ হয় তাহলে কি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে না। আদালত কি তাদের সমন দিতে পারবে না? আইনের চোখে সবাই সমান কথাটা কি আর চলবে না?

একজন বিচারকের মামলা চালানোর কার্যক্রমকে কিভাবে দেখা হবে? বিচারক যখন আদালতে বসেন তখন বাদী বা কাঠগড়ায় দাঁড়ানো ব্যক্তি কে বা তার মূখ, পদ বা পদবি দেখেন না, দেখা উচিতও না। যার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বিচারে অভিযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত বিচারকের কাছে তিনি নির্দোষ, অন্যদিকে খালাস না পাওয়া পর্যন্ত আসামি। বিচারক মামলার বিচার কাজ চালাবেন ফৌজদারি কার্যবিধি বা সিআরপিসি কঠোর ভাবে অনুসরণ করে। নিম্ম আদালতের কোন বিচারক সিআরপিসির কোন রকম অমান্য করলে তাকে জবাবদিহি করতে হয় সুপ্রিম কোর্টের কাছে। সুপ্রিম কোর্ট তার এ বিচ্যুতির জন্য ব্যবস্থা নিতে পারেন। কাকে জামিন দেবেন বা দেবেন না তা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার আইন বিচারককে দিয়েছে। বিচারকের কোন আদেশ বা সিদ্ধান্তে কেউ বিক্ষুদ্ধ হলে সে উচ্চতর আদালতে যেতে পারে। উচ্চ আদালত বিবেচনা করে নিম্ম আদালতের রায় সংশোধন, বাদ বা বহাল রাখতে পারে। কিন্তু এভাবে বিচারকের বিরুদ্ধে দুর্ণীতির অভিযোগ তুলে তা তদন্ত করতে নির্দেশ দেয়া বিচারকের ওপর জোর খাঁটানো। এ জোর খাঁটানো বিচার কাজের ওপর হস্তক্ষেপ। মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেট শেফাককে জামিন না দেয়ায় শেফাক বিচারককে ‘মামুর জোর’ দেখিয়ে দিলেন। ন্যায় বিচার ও আইনের শাসনের জন্য এই ‘মামুর জোর’ কতটুকু মঙ্গলজনক? অর্থমন্ত্রী না হয় ভাগিনা স্নেহে অন্ধ। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তো বিষয়টি এঁড়াতে পারেন না। একজন প্রথিতযশা আইনজীবী হিসেবে তিনি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং বিচারকদের মর্যাদা রক্ষায় সোচ্চার ছিলেন। তিনি কিভাবে শেফাককে জামিন দিতে অর্থমন্ত্রীর প্রদর্শিত পথে হাটলেন?

গত ১৪ অক্টোবর অর্থমন্ত্রীকে লেখা আইডিআরএ চেয়ারম্যান শেফাক আহমেদের চিঠিতে বলেছেন,‘ আমি ২০০১ সালে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নিয়োজিত হওয়ার পর সরকারের নির্দেশে বীমা শিল্পে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে দুর্ণীতি উৎখাতে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।কর্তৃপক্ষের এসব পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে স্বার্থাণে¦ষি মহলের স্বার্থে আঘাত লাগে। বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে এ মহলটি সংস্কার কর্মসূচি বন্ধ বা এর গতি শ্লথ করার চেষ্টা চালায়। কিন্তু এসব পদ্ধতিতে ব্যর্থ হয়ে তারা ২০১২ সাল থেকেই আমার বিরুদ্ধে ব্যক্তিনামে পদ পদবি উল্লেখ ব্যতিরেকেই দেশের বিভিন্ন আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করতে শুরু করে। বিষয়টি আপনার (অর্থমন্ত্রী) নজরে আনা হলে আপনার উদ্যোগে সরকারের উচ্চ মহল থেকে এনএসআইকে দিয়ে তদন্ত পরিচালনা করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে এনএসআই সুস্পষ্টভাবে জানায় যে, এ সব মামলা মিথ্যা এবং কর্তৃপক্ষের গৃহিত আইনানুগ পদক্ষেপে সংক্ষুদ্ধ হয়ে আমাকে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখার মানসে দায়ের করা হয়েছে। ’ এখানে শেফাক আহমেদ ওই ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আনেন নি। অর্থমন্ত্রী ক্ষেপে গিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে তদন্ত চালাতে বলেছেন।

শেফাক বলেছেন, সরকারের নির্দেশে বীমা শিল্পে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে দুর্ণীতি উৎখাতে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করায় তার বিরুদ্ধে এসব মামলা করেছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল। আইডিআরএ গঠন বীমা শিল্প উন্নয়নে এবং বীমা শিল্পকে জাপটে ধরা নানান দুর্ণীতির জঞ্জাল দূর করে এ শিল্পকে সংকট থেকে বাঁচিয়ে তুলতে সরকারের একটি সময়োচিত উদ্যোগ। কিন্তু গঠনের পর থেকেই অর্থমন্ত্রী সংস্থাটির চেয়ারম্যান নিয়োগ দেন শেফাককে। প্রথম মেয়াদেই এক মামলায় দ্বৈত নাগরিকত্বসহ ৬টি অভিযোগের প্রেক্ষিতে তার নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। শেফাক এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে তাও খারিজ হয়ে যায়। তারপরও শেফাককে ২য় মেয়াদের জন্য নিয়োগ দেন অর্থমন্ত্রী। এখন পর্যন্ত শেফাক কি এমন কোন নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত বা কাজ দেখাতে পেরেছেন যা বীমা খাতের উন্নয়নে কোনো ভূমিকা রেখেছে? তা খতিয়ে দেখা হলে মাননীয় মন্ত্রীর অন্ধন্ত দুর হওয়ার ভয় থাকবে না তো?

শেফাক আহমেদ বীমা খাতে দুর্নীতি উৎখাতের দাবি করেন। অথচ তার দফতরে এখন বীমা খাতের দুর্নীতিবাজ লোকের আনাগোনাই বেশি। এ অবস্থা বীমা পাড়ার সবারই জানা। বীমা খাতে দুর্নীতি রোধে তার পদক্ষেপ জরিমানার মধ্যে সীমাবদ্ধ। আর তাও গ্রাহক স্বার্থ রক্ষার চেয়ে ব্যক্তি হিংসার ফলই বেশি। অন্যদিকে খাতিরের কোম্পানিকে বাঁচাতে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি এমন অভিযোগ কম নয়।

বাংলাদেশে বেসরকারি জীবন বীমা কোম্পানি ডেল্টা লাইফে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন চুক্তিভিত্তিক কনসালটেন্ট হিসেবে। পরে প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালে তিনি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে প্রথম মেয়াদে নিয়োগ পান।

চেয়ারম্যান হিসেবে শেফাক আহমেদ বেতন পান ৯০ হাজার টাকা বা তার কিছু বেশি। অননুমােদিত গাড়িখরচ নেন ২ লাখ টাকা। তবে প্রতিদিন সন্ধার পর গুলশান ক্লাবে সময় কাটান। সেখানে বিভিন্ন বীমা কোম্পানির চেয়ারম্যানরা তার সঙ্গ দেয়। বাংলাদেশে কর্মজীবনের এ সময়ে শেফাক আহমেদ কতটা সম্পদ অর্জন করলেন? নামে বেনামে তার সম্পদের পরিমাণ কত? এসব বিষয় তদন্ত করতেন মাননীয় অর্থমন্ত্রী কবে নির্দেশ দিবেন?

তারিখ: ৩০ নভেম্বর, ২০১৪