২০২৬ সালে স্থিতিশীল থাকবে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের বীমা খাত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: এশিয়া-প্যাসিফিকের বীমা শিল্প আগামী ২০২৬ সালেও স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি ধরে রাখবে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থা ফিচ রেটিংস। সংস্থার সাম্প্রতিক মূল্যায়নে দেখা গেছে, অঞ্চলজুড়ে রেটিংপ্রাপ্ত বীমাকারীদের মধ্যে প্রায় ৯২ শতাংশ প্রতিষ্ঠানই এখনো ‘স্টেবল আউটলুক’-এ রয়েছে, যা এ খাতের শক্তিশালী মূলধন অবস্থান, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ক্ষমতা ও শৃঙ্খলাপূর্ণ ব্যবসায়িক কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ।

লাইফ বীমা খাতের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ২০২৫ ও ২০২৬ সালকে সামনে রেখে বেশিরভাগ কোম্পানি পণ্যের গুণগত মান, লাভজনকতা ও পোর্টফোলিও পুনর্গঠনে অধিক মনোযোগ দিচ্ছে। বাজারে সুদের হারের ওঠানামা, অপ্রত্যাশিত ইক্যুইটি ভোলাটিলিটি এবং নিয়ন্ত্রক পরিবর্তনকে বিবেচনায় রেখে কোম্পানিগুলো দীর্ঘমেয়াদি সক্ষমতা বাড়ানোর কৌশল গ্রহণ করছে। একই সময়ে নন-লাইফ বীমা খাত আন্ডাররাইটিং শৃঙ্খলা ও পরিচালন দক্ষতা বাড়িয়ে ২০২৬ সালে আরও শক্তিশালী আয় ধরে রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক পুনর্বীমা বাজারে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় নন-লাইফ বীমাকারীদের লাভজনকতা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে ফিচের পূর্বাভাস।

অঞ্চলের বীমা কোম্পানিগুলো আগত নতুন সলভেন্সি বিধিমালা- যার বেশ কয়েকটি ২০২৬ সালেই কার্যকর হবে- মোকাবিলায় ইতোমধ্যে মূলধন সংগ্রহ, সম্পদ-দায় ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করা এবং ঝুঁকি সীমিত করার মতো বিস্তৃত প্রস্তুতি শুরু করেছে। তবুও ফিচ মনে করে, নিয়ন্ত্রক সংস্কার, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধীর গতি এবং কম বিনিয়োগ আয়ের পরিস্থিতির মধ্যেও বাজারের গড় অপারেটিং মার্জিন উল্লেখযোগ্যভাবে স্থিতিশীল থাকবে।

যদিও আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে মোট চিত্রটি ইতিবাচক, তবুও চীন ও তাইওয়ানের লাইফ বীমা খাতের জন্য ফিচ ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে ‘স্টেবল’ থেকে ‘ডিটারিওরেটিং’-এ দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেছে। চীনের ক্ষেত্রে কঠোর কমিশন কাঠামো প্রিমিয়াম বৃদ্ধিকে ধীর করছে এবং ইক্যুইটি বাজারের ওঠানামার প্রতি বীমাকারীদের বাড়তি সংবেদনশীলতা ভবিষ্যৎ আয়ের স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে। তাইওয়ানে ২০২৬ সালে কার্যকর হতে যাওয়া নতুন মূলধন মান, মুদ্রাবাজারের অস্থিরতা এবং উচ্চ হেজিং ব্যয় লাইফ বিমাকারীদের জন্য উল্লেখযোগ্য চাপ সৃষ্টি করেছে।

যদিও এসব চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও, ২০২৫ সালের নভেম্বরে ফিচ তাইওয়ানের অধিকাংশ লাইফ বীমাকারীর রেটিং পুনরায় ‘স্টেবল’ পর্যায়ে ফিরিয়ে আনে, যা আগের তীব্র তাইওয়ান ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও বৈদেশিক মুদ্রা ঝুঁকিজনিত নেতিবাচক নজরদারির তুলনায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি নির্দেশ করে।

ফিচ রেটিংসের এশিয়া-প্যাসিফিক বীমা বিভাগের প্রধান জেফ্রি লিউ প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, কঠোর মূলধন বিধি, বাজারের অনিশ্চয়তা এবং জলবায়ু-সম্পর্কিত ঝুঁকি এই অঞ্চলের বীমা খাতের জন্য চ্যালেঞ্জ হলেও, শক্তিশালী আয়ের ধারা এবং দৃঢ় মূলধন বাফার শিল্পকে স্থিতিশীলতার পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তার মতে, চীন ও তাইওয়ানের লাইফ বীমা খাতে প্রবৃদ্ধির ধীরতা ও বাজার-মুদ্রা সংবেদনশীলতা বাড়লেও, অঞ্চলের বাকি অংশের স্থিতিশীলতা পুরো এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের শক্ত অবস্থানের ইঙ্গিত দেয়। (সংবাদ সূত্র: ইন্স্যুরেন্স এশিয়া)