হোমল্যান্ড লাইফের অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ড গঠন করল উচ্চ আদালত

নিজস্ব প্রতিবেদক: হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে ৫ সদস্য বিশিষ্ট নতুন একটি অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ড গঠন করেছে উচ্চ আদালত। ৩ মাসের জন্য এই বোর্ড গঠন করা হয়েছে। কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালক মোহাম্মদ জুলহাস, সালেহ হোসেন ও মো. এরশাদ করিমের দায়ের করা মামলার শুনানি শেষে গত ৩ সেপ্টেম্বর এই বোর্ড গঠন করে দেয় আদালত।

বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় সরকারের অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. আব্দুল মজিদকে। এই বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী আহসান, অতিরিক্ত সচিব (অবসরপ্রাপ্ত) মো. জাকির হোসেন, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ফার্ম আহমেদ হক সিদ্দিকী অ্যান্ড কোং এর পার্টনার মোহাম্মদ শাকিল চৌধুরী (এফসিএ) এবং প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (অর্থ) ও মেঘনা ব্যাংকের চেয়ারম্যান উজমা চৌধুরী।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, হোমল্যান্ড লাইফের ১৫১তম বোর্ড সভা কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ের বোর্ড রুমে ২৯ জানুয়ারি বেলা ১২টায় আহবান করা হয়। তবে এই সভাটি কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ের পরিবর্তে গত ৪ ফেব্রুয়ারি সিলেটের হোটেল ব্রিটানিয়ায় আহবান করে পরিচালকদের নোটিশ প্রদান করা হয়। এই নোটিশ দেয়া হয় গত ২৩ জানুয়ারি।

একইসাথে কোম্পানির ৪৩৩তম নির্বাহী কমিটির সভা এবং ৮১ তম নিরীক্ষা, বিনিয়োগ, দাবি ও সিএমআই কমিটি সভার স্থানও সিলেটে স্থানান্তর করে পরিচালকদের নোটিশ প্রদান করা হয়।

পরে সিলেটে সভা আহবানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট মামলা (কোম্পানি ম্যাটার নং- ১৬৪/২০২৫) দায়ের করেন কোম্পানিটির পরিচালক মোহাম্মদ জুলহাস। মামলার শুনানি শেষে ৪ সপ্তাহের জন্য আহূত সকল সভা স্থগিত করে রুল জারি করেন আদালত। হাইকোর্টের বিচারপতি জাফর আহমেদ গত ২ ফেব্রুয়ারি এই আদেশ দেন।

পরবর্তীতে কোম্পানির চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিন এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল (সিপিএলএ নং ৫২৭/২০২৫) দায়ের করেন। আপিলের শুনানি শেষে গত ১২ ফেব্রুয়ারি চেম্বার জজ আদালত ‘নো অর্ডার’ জারি করেন।

কোম্পানি ম্যাটার নং- ৭১৬/২০২৫ দায়ের করেন হোমল্যান্ড লাইফের আরেক পরিচালক সালেহ হোসেন। গত ৩০ এপ্রিল আহূত বীমা কোম্পানিটির ১৫২তম বোর্ড সভা এবং ৪৩৪তম নির্বাহী কমিটির সভার কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে এই আপিল দায়ের করেন। গত ৫ মে ঢাকায় সভা দুটি আহবান করা হয়েছিল।

সালেহ হোসেনের দায়ের করা আপিলের শুনানি শেষে আদালত সভা দুটির ওপর স্থগিতাদেশ দেন। গত ৫ মে আদালত এই আদেশ দেন। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে চেম্বার জজ আদালতে সিপিএলএ নং- ১৮১২/২০২৫ দায়ের করা হয় এবং আপিলের শুনানি শেষে গত ২৮ মে চেম্বার জজ আদালত ‘নো অর্ডার’ জারি করেন।

অপরদিকে বীমা আইন ২০১০ এর ৭৬ ধারার বিধান অনুসারে হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ গঠনের জন্য আদালতে কোম্পানি ম্যাটার নং- ৯৪১/২০২৫ দায়ের করেন হোমল্যান্ড লাইফের আরেক পরিচালক মো. এরশাদ করিম। মামলায় আভিযোগ করা হয়, কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের কেউ স্পন্সর শেয়ারহোল্ডার নন এবং পর্ষদে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নিরপেক্ষ পরিচালকও নেই।

হোমল্যান্ড লাইফ ইস্যুতে আদালতের দেয়া রায়ে বলা হয়, কোম্পানির যাবতীয় কর্মকান্ড পরিচালনার পাশাপাশি এই অন্তবর্তীকালীন বোর্ড একটি নিয়মিত বোর্ড গঠনের জন্য দায়িত্ব পালন করবেন। এই বোর্ড আদালতের অনুমোদন ছাড়া সম্পত্তি বিক্রি করতে পারবে না, এমনকি নতুন করে কোনো শেয়ারও ইস্যু করতে পারবে না।

অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ড চেয়ারম্যানের মাসিক পারিশ্রমিক হবে ২ লাখ টাকা। প্রত্যেক পরিচালক মাসিক পারিশ্রমিক পাবেন ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া এই বোর্ডের প্রতিটি সভার জন্য চেয়ারম্যানসহ প্রত্যেক সদস্য পাবেন ১৫ হাজার টাকা।

উল্লেখ্য, এর আগে ২০২১ সালে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের পর্ষদ অপসারণ করে নতুন বোর্ড গঠন করে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এবং সোনালী লাইফের পর্ষদ স্থগিত করে ২০২৪ সালে অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ড গঠন করে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ।

তবে কোন বীমা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে আদালতের নতুন বোর্ড গঠনের সিদ্ধান্ত এটিই প্রথম বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।