অপসারণের আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আইডিআরএ’র কাছে ড. বিশ্বজিৎ কুমার মণ্ডলের আবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক: হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদ থেকে অপসারণ সংক্রান্ত আইডিআরএ’র আদেশ প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছেন ড. বিশ্বজিৎ কুমার মণ্ডল। গত ২ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) এ সংক্রান্ত একটি চিঠি তিনি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)-এ পাঠান।

দেশের লাইফ বীমা খাতের দু’টি কোম্পানি হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগের আইনগত জটিলতা নিরসন এবং কোম্পানি দু’টির স্থবিরতা দূর করাসহ এ খাতের উন্নয়নের স্বার্থে তিনি এই আবেদন জানিয়েছেন।

সূত্র মতে, ড. বিশ্বজিৎ কুমার মণ্ডলকে হোমল্যান্ড লাইফ থেকে অপসারণ করা হয় ২০২৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর। বিশেষ নিরীক্ষককে তথ্য না দেয়ার অপরাধে এই অপসাণের আদেশ দেয় আইডিআরএ। এই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট মামলা দায়ের করেন ড. বিশ্বজিৎ কুমার মণ্ডল।

উচ্চ আদালত এই মামলার আদেশে আইডিআরএ’র অপসারণের আদেশ স্থগিত করেন।

পরবর্তীতে আপিলেট ডিভিশন এক আদেশে রিট মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হোমল্যান্ড লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেন। রুলটি নিষ্পত্তি না হওয়া অদ্যবধি হোমল্যান্ড লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার পদ শূন্য রয়েছে।

অপরদিকে হোমল্যান্ড লাইফে ড. বিশ্বজিৎ কুমার মণ্ডলকে অপসারণ সংক্রান্ত মামলাটি বিচারাধীন থাকায় যমুনা লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে তার নিয়োগ সংক্রান্ত আবেদনটি না-মঞ্জুর করে আইডিআরএ। এই না-মঞ্জুরের আদেশটির বিরুদ্ধেও আদালতে রিট মামলা দায়ের করেন ড. বিশ্বজিৎ কুমার মণ্ডল।

এই রিট মামলায় আদালত যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রেও রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থিতাবস্থা জারি করেন।

আবেদনে ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল উল্লেখ করেন, হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সে তিনি নিয়োগ পান ২৪ মে ২০২২ তারিখে। আর তাকে অপসারণ করা হয় ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালের তথ্য বিশেষ নিরীক্ষককে না দেয়ার অভিযোগে। অথচ ওই সময়ে অর্থাৎ ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালে তিনি বীমা কোম্পানিটিতে কর্মরত ছিলেন না। এরপরও নিরীক্ষককে তথ্য না দেয়ার ও গ্রাহক স্বার্থ ক্ষুন্ন করার অভিযোগ আনা হয় তার ওপরে।

চিঠিতে তিনি দাবি করেন, ব্যক্তিগত আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে তার প্রতি অবিচার করা হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার তৎকালীন চেয়ারম্যানের সাথে হোমল্যান্ড লাইফের সিলেটের প্রবাসী পরিচালকদের ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল। নিজেদের আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও অন্তর্দ্বন্দ্ব ঢাকতেই পরিচালকরা আমাকে অপসারণ করার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে প্রভাবিত করতে এই ঘনিষ্ট সম্পর্ক কাজে লাগায়। মূলত ন্যায়বিচার পাওয়ার স্বার্থে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।

আইডিআরএ’র কাছে লিখিত আবেদনে ড. বিশ্বজিৎ কুমার মণ্ডল উল্লেখ করেন, বীমা পেশায় দীর্ঘ ২৬ বছরে তিনি বিভিন্ন কোম্পানিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে অত্যন্ত দায়িত্বশীলতা ও সুনামের সাথে কাজ করেছেন। দেশের বীমা শিল্পের উন্নয়নে নানাভাবেই তিনি অবদান রেখে চলেছেন।

বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমি থেকে প্রথম স্থান অর্জন করে টাইজার অ্যাওয়ার্ড পান এবং দীর্ঘদিন ধরে একাডেমির প্রশিক্ষক ও পরীক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল।

তিনি আইডিআরএ’র জন্য কোয়ার্টারলি রিপোর্টের ফরমেট তৈরি করেন, যা এখনও চালু আছে এবং লাইফ বীমা কোম্পানির হিসাবে স্বচ্ছতা বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। বিভিন্ন সময় তিনি আইডিআরএ’র কর্মকর্তাদের হিসাব, নিরীক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে ওপর প্রশিক্ষণও প্রদান করেছেন।

এ ছাড়াও বিআইএ’র নির্বাহী কমিটি এবং লাইফ টেকনিক্যাল কমিটি’র সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে বীমা শিল্পের উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন। বীমা শিল্পের মাঠ সংগঠনের কাঠামো পুনর্বিন্যাসে কর্তৃপক্ষের গঠিত কমিটির সদস্য হিসেবেও কাজ করেছেন ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল।

অপাসরণের আদেশ প্রত্যাহারে আইডিআরএ’র কাছে লিখিত আবেদনের বিষয়টি স্বীকার করেছেন ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল।  ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’কে তিনি বলেন, এই অন্যায় অপসারণের কারণে কেবল আমি নই, বীমা খাতও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মুখ্য নির্বাহী নিয়োগে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকায় দু’টি কোম্পানি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

হোমল্যান্ড লাইফের মুখ্য নির্বাহী পদ থেকে অপসারণে আইডিআরএ’র আদেশ প্রত্যাহার হলে নিজের সব মামলা প্রত্যাহার করে বীমা কোম্পানি তথা বীমা শিল্পের উন্নয়নে আরো সক্রিয়ভাবে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের পরামর্শক (মিডিয়া এবং যোগাযোগ) ও মুখপাত্র সাইফুন্নাহার সুমি ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’কে ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডলের এই আবেদন দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।