আত্মসাতকৃত অর্থ উদ্ধার ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে আজও মানববন্ধন করেছে ফারইস্টের গ্রাহক-কর্মকর্তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ফারইস্ট ইসলামী লাইফের অর্থ আত্মসাতে দুদক মামলায় গ্রেফতার হওয়া সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের সুষ্ঠু বিচার ও আত্মসাৎকৃত অর্থ উদ্ধারের দাবিতে আজও (রোববার) মানববন্ধন করেছে কোম্পানিটির কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ভুক্তভোগী বীমা গ্রাহকরা।
একইসঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মহাপরিচালকের বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে আত্মসাতকারীদের দেশ-বিদেশে থাকা সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে কোম্পানিকে ফেরত এবং আত্মসাতে সহযোগীদের দ্রুত গ্রেফতার করে শাস্তির দাবিও পুনর্ব্যক্ত করেন তারা।
রোববার (২৬ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে তারা এসব দাবি জানান। কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) কামরুল হাসানের সভাপতিত্বে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এতে আরো অংশ নেন কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম, আইন কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন, রিয়েল এস্টেট বিভাগের ইনচার্জ আজগর আলীসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী, মাঠকর্মী এবং ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা।
মানববন্ধনে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের প্রধান সংকট হলো ক্যাশ ফ্লো বা নগদ প্রবাহের অভাব। আমাদের হাতে এমন অনেক সম্পদ বা আসেট রয়েছে, যা রাজনৈতিক কারণে বিক্রি করা যাচ্ছে না। বর্তমানে আমাদের প্রায় ৪০ লাখ গ্রাহক রয়েছেন, কিন্তু তাদের প্রাপ্য অর্থ পরিশোধে আমরা চরম সমস্যার মুখে পড়েছি। আমরা আজ একত্র হয়েছি একটি উদ্দেশ্যে- এই কোম্পানি থেকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা লুণ্ঠন করা হয়েছে। এই অর্থ আমরা ফেরত চাই, কারণ এটি আমাদের ভুক্তভোগী গ্রাহকদের টাকা, যা তাদের কাছেই ফিরিয়ে দিতে হবে।
অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, আজ ফারইস্ট ইসলামী লাইফের কর্মচারী ও গ্রাহকরা যে দুরবস্থায় পড়েছেন, তার মূল কারণ নজরুল ও খালেক। তাদের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে অসংখ্য কর্মচারী চাকরি হারিয়েছেন, এমনকি কেউ কেউ ঘরছাড়া হতে বাধ্য হয়েছেন। আমরা দুদকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি- তাদের কাছ থেকে সত্য উদঘাটন করে দ্রুত এই লুণ্ঠিত অর্থ ফেরত আনার ব্যবস্থা করুন।
আইন কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন বলেন, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সুনামের সঙ্গে গ্রাহকদের সেবা দিয়ে আসছিল। কিন্তু ২০১১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়ে প্রতিষ্ঠানটি দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়। দরিদ্র ও অসহায় মানুষের কষ্টার্জিত অর্থে গড়ে ওঠা এই প্রতিষ্ঠান তৎকালীন দুর্নীতিবাজ কর্তৃপক্ষের কারণে আজ ধ্বংসের মুখে পড়েছে। তাদের হাতেই গ্রাহকদের স্বপ্ন চুরি হয়ে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের মধ্য থেকে একজন তার বক্তব্যে বলেন, ফারইস্ট ইসলামী লাইফের কাছে আমার ৬০ লাখ টাকা পাওনা আছে। আমিসহ আরো যেসব গ্রাহক ভুক্তভোগী- আমরা আমাদের টাকা দ্রুত ফেরত চাই। এই নজরুল-খালেকের জন্যই আমরা বীমা গ্রাহক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আজ পথে বসেছি। আমরা দোষীদের কাছ থেকে আত্মসাতকৃত টাকা দ্রুত ফেরত চাই এবং তাদের চূড়ান্ত বিচার দাবি করছি।
উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই ৪৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলামসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের নামে রাজধানীর ৩৬ তোপখানায় ২০৭ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার টাকার জমি ক্রয় দেখিয়ে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ৪৫ কোটি টাকা আত্মাসাৎ করে। এর মধ্যে নজরুল ইসলাম আত্মসাৎ করেন ১০ কোটি ও তার স্ত্রী এবং ফারইস্ট লাইফের সাবেক পরিচালক তাসলিমা ইসলাম আত্মসাৎ করে সাড়ে ৯ কোটি। জমি ক্রয় ও অর্থ আত্মসাতের এ ঘটনা ঘটে ২০১৫ সালে।
মামলার আসামিদের মধ্যে পরিচালক নাজনিন হোসেন এখনো পরিচালনা পর্ষদে আছেন। মামলার অপর আসামি মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিসের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ডা. মো. মনোয়ার হোসেনের বড় ভাই ড. মোকাদ্দেস হোসেন ফারইস্ট ইসলামী লাইফের ভাইস চেয়ারম্যান। এ ছাড়াও ড. মোকাদ্দেস হোসেনের আরেক ভাই মোজাম্মেল হোসেনও দুদকের অপর মামলার আসামি। ফারইস্ট ইসলামী লাইফের পরিচালনা পর্ষদের নিরপেক্ষ পরিচালক হিসেবে আছেন মোবারক হোসেনের ভাই মামলার অপর আসামী আমানত শাহ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মো. হেলাল মিয়া।
মামলার অন্য আসমিরা হলেন- পিএফআই প্রোপার্টিজ ও নর্দার্ন জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক শাহরিয়ার খালেদ, গেটকো টেলিকমিউনিকেশন ও গেটকো এগ্রো ভিশনের চেয়ারম্যান কে এম খালেদ, প্রাইম ব্যাংক ও প্রাইম ফাউন্ডেশনের উদ্যোক্তা এবং ম্যাক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টি এম এ খালেক, টারটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ড. ইফফাৎ জাহান, ফারইস্ট ইসলামী লাইফের পরিচালক খন্দকার মোস্তাক মাহমুদ, ফারইস্ট ইসলামী লাইফের পরিচালক মো. মিজানুর রহমান, মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিসের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন, ফারইস্ট ইসলামী লাইফের শেয়ারহোল্ডার পরিচালক রাবেয়া বেগম, স্বতন্ত্র পরিচালক ও আইডিআরএ’র সাবেক চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন এবং স্বতন্ত্র পরিচালক ও পিএফআই সিকিউরিটিজের সাবেক এমডি কাজী ফরিদ উদ্দীন আহমেদ। কোম্পানিটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হেমায়েত উল্যাহ-কেও দুদকের মামলার আসামি করা হয়।

 (1).gif)


