যে বীমা বিক্রি নিষিদ্ধ
ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি'র ধারাবাহিক অনুষ্ঠান 'উন্নয়ন ও বীমা’র প্রথম পর্বে আলোচনায় অংশ নেন একচ্যুয়ারিয়াল এনালিস্ট এবং একচ্যুয়ারি বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহমেদ ইমরান হাসান লস্কর। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় রয়েছেন সুশান্ত সিনহা।
ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত উন্নয়ন ও বীমা অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বের আলোচনার বিষয় ‘যে বীমা বিক্রি নিষিদ্ধ’। পাঠকদের চাহিদার প্রেক্ষিতে ভিডিও কন্টেন্টি অনুলিখন করা হয়েছে। 'উন্নয়ন ও বীমা’র প্রথম পর্বের মূল ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
সুশান্ত সিনহা: দর্শক সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি উন্নয়ন ও বীমা অনুষ্ঠানে। আপনারা জানেন যে, ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি বাংলাদেশে ইন্স্যুরেন্স খাতে একমাত্র গণমাধ্যম। এই গনমাধ্যমটি উন্নয়ন ও বীমা অর্থাৎ বীমা খাতে যে সম্ভাবনা, সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে বিভিন্ন ধরনের সংবাদ আমরা করে আসছি। পাশাপাশি যে কাজটি আমরা করে থাকি বিভিন্ন বিষয়ে বীমার সংশ্লিষ্ট যারা আছেন বা বীমা খাতে যারা জড়িত আছেন তাদেরকে নিয়ে আমরা তাদের সাথে মতামত নিই; তাদের সাথে আমরা কথা বলি। আজো আমরা সেই উন্নয়ন ও বীমা অনুষ্ঠানে একজন অতিথিকে নিয়ে এসেছি তিনি কথা বলবেন জীবন বীমার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটি বিভিন্ন প্রোডাক্ট, যেগুলো আমরা সেল করি। ইন্স্যুরেন্সের ভাষায় সে সমস্ত বিষয় বা প্রোডাক্ট তৈরীর ক্ষেত্রে পেছন থেকে যে মানুষগুলো কাজ করেন অর্থাৎ একচ্যুয়ারি। যদিও বাংলাদেশে একচ্যুয়ারির সংখ্যা খুব বেশি নেই, হাতে গোণা অল্প কিছু মানুষ আছে। কিছু মানুষ একচ্যুয়ারিয়াল সায়েন্স এখন পড়ছে। সরকারও কিছু সহযোগিতা করছে একচ্যুয়ারি তৈরি করার ক্ষেত্রে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন যে, এই বীমা শিল্পে উন্নয়ন করতে হলে অবশ্যই দেশে একচ্যুয়ারির সংখ্যা বাড়াতে হবে। ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র এই আয়োজন উন্নয়ন ও বীমাতে আজকে অতিথি হিসেবে আমাদের সঙ্গে যিনি আছেন তিনি হচ্ছে একচ্যুয়ারি বাংলাদেশের সিইও এবং একই সাথে একচ্যুয়ারিয়াল এনালিস্ট আহমেদ ইমরান হাসান লস্কর। আমরা আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি আমাদের এই অনুষ্ঠানে ‘উন্নয়ন ও বীমা’। আপনি জানেন যে, বড় ধরনের একটি আলোচনা আছে আমাদের দেশে বীমা খাতে সম্ভাবনা প্রচুর। গোটা পৃথিবীতে বীমা খাতে বড় ধরনের একটা অর্থনৈতিক কন্ট্রিবিউশন আছে। একইসাথে কর্মসংস্থানেও কন্ট্রিবিউশন আছে। আমাদের দেশে বীমার পেনিট্রেশন যদি বলি সেটা এখনো আশাব্যঞ্জক তো নয়-ই বরং অনেকখানি আশাব্যঞ্জকের নিচে। কারণ দশমিক ৪ শতাংশ আমাদের বীমার প্যানিটেশন। এই জীবন বীমা আলোচনা করার ক্ষেত্রে শুরুতে যে প্রোডাক্ট নিয়ে আলোচনাটি করতে চাই সেটি হলো আইডিআরএ সম্প্রতি একটি পরিপত্র দিয়েছে যেখানে বলা হচ্ছে- মাসিক সঞ্চয়পত্রের মতো করে মুনাফা ভিত্তিক যে প্রোডাক্টগুলো বিক্রি করা হচ্ছে জীবন বীমা কোম্পানিগুলোতে সেগুলো আসলে বিক্রি করা যাবে না; কারণ এগুলোর বৈধতা নেই। এটি আসলে কি বুঝাতে চেয়েছে এবং কোন ধরনের প্রোডাক্টের কথা বলছে যেটা আইডিআরএ বন্ধ করতে বলছে।
আহমেদ ইমরান হাসান লস্কর: ধন্যবাদ, আপনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। বর্তমানে যে বিষয়টা নিয়ে বেশি কথা চলছে- আইডিআরএ সম্প্রতি বাংলাদেশের বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) উনারা একটা সার্কুলার দিয়েছেন। যেখানে কিছু প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে এবং কিছু প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে যে, সেগুলো মার্কেটিং করা যাবে না বা বিক্রি করা যাবে না। সেক্ষেত্রে বলা হয়েছে, মূলত আইডিআরএ মানথলি ইন্স্যুরেন্স বা মাসিক প্রদেয় বীমা পলিসিগুলো নিষিদ্ধ করে নাই। বরং কিছু পরিকল্প আছে যেগুলো মূলত ইন্স্যুরেন্স এক্টের আওতার বাইরে সেক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
সুশান্ত সিনহা: সেগুলো কি আসলে আমরা সচরাচর যেগুলো অনেকটা লোভনীয় বলি যে, দ্বিগুণ হয়ে যাবে; এই রকম লোভনীয় মাসিক সঞ্চয়। আইডিআর সেগুলোর কথা বলছে?
আহমেদ ইমরান হাসান লস্কর: আমি দ্বিগুণের প্রসঙ্গে পরে আসছি। আমি মূলত বলতে চাচ্ছি যে, কোন জিনিসিটাকে আইডিআরএ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন! সেক্ষেত্রে ইন্স্যুরেন্সের ইন্স্যুরেন্স আইন অনুযায়ী কোন পলিসি বীমা পরিকল্পে স্বীকৃত পাওয়ার জন্য অবশ্যই জীবন বীমা থাকতে হবে অর্থাৎ মানুষের জীবনের ঝুঁকিটাকে গ্রহণ করতে হবে এবং সাথে করে যদি কোন ক্ষেত্রে রির্টান দেয়া হয় বা ম্যাচিউরিটি ভেলু দেয়া হয় সেটা পারমিটেড। কিন্তু কোন ক্ষেত্রে যদি এমন হয়ে যায় যে, ওই পরিকল্পের ক্ষেত্রে বা প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে লাইফ রিস্কটা নেয়া হয় নাই অর্থাৎ গ্রাহকের জীবনের রিস্ককে কাভার করা হয় নাই; শুধুমাত্র বিনিয়োগ রিটান দেয়ার কমিটমেন্ট দেয়া হচ্ছে সেসব প্রোডাক্ট নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সুশান্ত সিনহা: কথাটা যদি সহজ করে বলি যে, যেক্ষেত্রে এর (পলিসির) সাথে দুর্ঘটনা বা মৃত্যু -এই সমস্ত জীবনের রিস্ক নেয়া হচ্ছে না, শুধুমাত্র ব্যাংকে যেভাবে ডিপিএস করা হয় এখানেও তাই করা হয় জীবন বীমার নাম করে; সেটাকেই তো নিষিদ্ধ করা হয়েছে!
আহমেদ ইমরান হাসান লস্কর: জি, শুধুমাত্র ওই ধরণের প্রোডাক্টকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে যেসব প্রোডাক্টটের ক্ষেত্রে ঝুঁকি নাই। ঝুঁকির ক্ষেত্রে আরেকটা জিনিস বলা হয়েছে যে, আপনি যেটা বললেন ইন্স্যুরেন্সের ক্ষেত্রে দুইটা ধারা আছে একটা জেনারেল ইন্স্যুরেন্স এবং আরেকটা লাইফ ইন্স্যুরেন্স। যদি জীবনের উপর ঝুঁকি না থাকে তাহলে কিন্তু সেটাও লাইফ ইন্স্যুরেন্সের আওতার বাইরে। দেখা যায় যে, আপনি যদি শুধু দুর্ঘটনার ঝুঁকি নেন বা হসপিটালাইজেশন ঝুঁকি নেন তাহলে সেক্ষেত্রে কিন্তু সেটা জীবন বীমার আওতার বাহিরে। অর্থাৎ জীবন বীমার পরিকল্প হিসেবে স্বীকৃত হওয়ার জন্য সেখানে অবশ্যই জীবনের রিস্ক কাভারেজ থাকতে হবে।
সুশান্ত সিনহা: আইডিআরএ যেটা বন্ধ করার কথা বলছে, তারা একটা পরিপত্র দিয়েছে বা তারা নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু এটা বাংলাদেশের জীবন বীমা কোম্পানিগুলো যে ব্যবসা করছে তাদের কাছে তো অভিযোগগুলো এসেছে। তাহলে তাদের তো একটা মনিটরিংও থাকার কথা এটাকে বন্ধ করার। কারণ এটাকে চাইলেই আজকে নোটিশ দিয়ে বন্ধ করা সম্ভব না। এই বন্ধ করার ক্ষেত্রে নজরদারি, মনিটরিংটা বীমা কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে স্টেটমেন্টগুলো তারা পায়। কোনটা, কতটুকু কি, কোন খাতে ইনভেস্টমেন্ট, রিটার্ন পাচ্ছে- সে সমস্ত বিষয়গুলো কিভাবে সমাধান করা দরকার বলে আপনারা মনে করেন? বা আইডিআর কিভাবে ব্যবস্থাপনাটা নিতে পারবে যাতে করে এ ধরনের অনুমোদনহীন, লোভনীয় বা আকর্ষণীয় করে যে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে গ্রাহকের কাছে থেকে পয়সা নেয়া হচ্ছে সেই বিষয়টি বন্ধ করা যায়।
আহমেদ ইমরান হাসান লস্কর: এ ধরনের ক্ষেত্রে আইডিআরএ’র কিছু প্রচলিত আইন আছে যেগুলোর মধ্যে বীমা আইন ২০১০ সহ অনেকগুলো নির্দেশনা দেয়া আছে সেগুলোর ক্ষেত্রে যথাযথ কঠোর বাস্তবায়ন হচ্ছে এটার আলটিমেট সমাধান। পাশাপাশি যদি এমন হয় যে, কোন কোম্পানি আইডিআরএ’তে রিটান সাবমিট করেছে সেক্ষেত্রে দেখা যায় যে, ওইসব পরিকল্পের ক্ষেত্রে জীবনের ঝুঁকিটা নেয়া হয় নাই। সে ক্ষেত্রে ওইসব প্রোডাক্ট যাতে সেল করতে না পারে সেজন্য আইডিআরএ পক্ষ থেকে নির্দেশনা, মনিটরিং এবং প্রয়োজনে অন্যান্য কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া দরকার। আমরা আশা করি যে, এভাবে এটাকে নিয়ন্ত্রন করতে পারবে।
সুশান্ত সিনহা: জি, ধন্যবাদ। দর্শক, আপনারা শুনছিলেন আহমেদ ইমরান হাসান লস্করের কথা। এই আলোচনাটা আমাদের অব্যহত থাকবে। আমরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আমরা উন্নয়ন ও বীমা অনুষ্ঠানে কথা বলি। আজ এই পর্যন্ত আপনারা ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। আগামীতে দেখা হবে অন্য কোন অতিথির সাথে ততক্ষণ পর্যন্ত ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র সঙ্গে থাকবেন।