যে কারণে লাইফ বীমা খাতে আস্থার সংকট
ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র ধারাবাহিক অনুষ্ঠান ‘উন্নয়ন ও বীমা’র ৬ষ্ঠ পর্বে আলোচনায় অংশ নেন হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ড. বিশ্বজিৎ কুমার মণ্ডল। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় রয়েছেন সুশান্ত সিনহা।
ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত উন্নয়ন ও বীমা অনুষ্ঠানের ৬ষ্ঠ পর্বের আলোচনার বিষয় ‘যে কারণে লাইফ বীমা খাতে আস্থার সংকট’। পাঠকদের চাহিদার প্রেক্ষিতে ভিডিও কন্টেন্টটি অনুলিখন করা হয়েছে। ‘উন্নয়ন ও বীমা’র ৬ষ্ঠ পর্বের মূল ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
সুশান্ত সিনহা: দর্শক স্বাগত জানাচ্ছি ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র নিয়মিত আয়োজন উন্নয়ন ও বীমা অনুষ্ঠানে। আপনারা জানেন যে, বীমা খাতের একমাত্র গণমাধ্যম ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি; যেখানে সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করার পাশাপাশি আমরা মতামত তুলে ধরি। বীমা খাতে যে সংকট সেটা নিয়ে আমরা আলোচনা করি। সম্ভাবনার যে জায়গাটি আছে সেটা নিয়ে আলোচনা করি।
এর মূল উদ্দেশ্যটা হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বীমা খাতের অবদান আরো কিভাবে বাড়ানো যায়। বীমা আইন; ২০১০ সালে যেটি করা হয়েছে। পরবর্তীতে বিধিগুলো করা হচ্ছে সেগুলো কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায় সে সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্যই আমরা ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি এই আয়োজনটি করে থাকি।
আপনারা জানেন যে, এ আয়োজনে আমাদের সাথে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তিরা যুক্ত হন। তাদের কেউ কেউ বীমা বিশেষজ্ঞ। কেউবা হয়তো বীমা খাতে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিতে মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা কিংবা তার অধ্বস্তন কোন দায়িত্বে আছে। কিংবা পরিচালকরা আছেন অর্থাৎ বীমা খাতে যারা দিস দ্যাট ওয়েতে জড়িত তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলি।
আজকেও আমাদের এই সাধারণ বীমা এবং জীবন বীমা যে দুটি স্তম্ভ বীমা খাতের, যার মধ্য দিয়ে অর্থনীতিতে বীমার অবদান বাড়ানোর কথা বলছি; সেই আলোচনায় ঘুরে ফিরে যেটি আসে সেটি হচ্ছে- আস্থাসংকট। এই আস্থাসংকটের মূল যে জায়গা সেটি হচ্ছে সাধারণ বীমা নয়, সেটি হচ্ছে লাইফ ইন্স্যুরেন্স বা জীবন বীমার কথা বলছি আমরা।
আমাদের দেশে জীবন বীমা কোম্পানির সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু আস্থাহীনতা এখনো কমে নাই। তার মূখ্যত হচ্ছে বীমা গ্রাহকরা। তারা পলিসি করলেও বা প্রিমিয়ামের টাকা জমা দিলেও নিদিষ্ট মেয়াদে তারা আর প্রিমিয়ামের টাকাটা আর ফেরত পান না। পেলেও অনেক ভোগান্তির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।
এই আস্থাসংকট দূর করার জন্য কি করণীয় সে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। আর এই বিষয়টি আরো একটু সামনে এনেছেন আমাদের বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইডিআরএ চেয়ারম্যান মহোদয়। তিনি সাম্প্রতিক সময় বলেছেন যে, কোন সময় তিনি একটি শংকার কথা বলেছেন খুব বড় ধরনের শংকার কথা বলেছেন যে কোন সময় বীমা দাবি পেতে হাজারো গ্রাহক মাঠে নামতে পারেন, রাজপথে নামতে পারেন।
সুতরাং কেন বীমা দাবি পাওয়ার জন্য গ্রাহকরা রাজপথে নামবেন, সে বিষয়টি নিয়ে আমরা কথা বলব- আইডিআরএ চেয়ারম্যানের মন্তব্যকে কেন্দ্র করে। আমাদের সঙ্গে আজকে স্টুডিওতে হাজির হয়েছেন। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের এই কাজগুলোর সাথে বিধি বিধানের সাথে যারা দীর্ঘদিন ধরে জড়িত তাদেরই একজন হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহি কর্মকর্তা ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল। আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি আমাদের উন্নয়ন ও বীমা অনুষ্ঠানে।
ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল: ধন্যবাদ, আপনাকে।
সুশান্ত সিনহা: একটা বিষয় যদি আমরা শুরুতে জানতে চাই, পলিসি করার পদ্ধতিটা; একটাতো নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য করা হয়- তাহলে এই টাকাটা সে কবে পাবে? কিভাবে পাবে? এবং পাওয়ার পদ্ধতিটা কি?
ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল: পাওয়ার পদ্ধতি সিম্পল; যত মেয়াদে সে বীমাটা করবে। হয়ত বিভিন্ন মেয়াদে আছে- ১০ বছর আছে, ১২ বছর আছে, ১৫ বছর, ১৮ বছর, ২০ বছর। সুতরাং গ্রাহকের সাথে চুক্তি হচ্ছে- আপনি ১২ বছরের পলিসি হয়ে থাকে, ১২ বছর আপনি নিয়মিত প্রিমিয়াম জমা দিবেন এবং আপনার মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে আপনি টাকাটা পাবেন। টাকাটা আমরা সাথে সাথে বলি; সাথে সাথে গ্রাহকের টাকাটা লাভসহ কোম্পানি যে বিভিন্ন সময় বোনাস ডিকলার করে এই বোনাস সহকারে এই লাভটা দিয়ে দিতে হবে। তার পুরো টাকাটা দিয়ে দিতে হবে। আর এটা বীমা আইনে আছে।
সুশান্ত সিনহা: কতদিনের মধ্যে দিতে হবে তাকে?
ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল: বীমা আইনে আছে সর্বোচ্চ ৯০ দিন। ম্যাচিউরড হোক আর ডেথ ক্লেইম হোক; যে দাবি হোক না কেন সর্বোচ্চ ৯০ দিন। যদি ৯০ দিনের মধ্যে না দিতে পারে তাহলে নিদিষ্ট হারে তাকে ইন্টারেস্ট সহকারে তাকে পে করতে হবে। গ্রাহককে ইন্টারেস্ট সহকারে পে করতে হবে; যদি ৯০ দিনের মধ্যে না দিতে পারে।
সুশান্ত সিনহা: কিন্তু রিয়েলিটি হচ্ছে- আমরা দেখছি যে, গ্রাহকরা হন্য হয়ে ঘুরছে। টাকা জমা দিয়ে অনেকে বলছে যে, একবার টাকা জমা দিয়ে ভুল করেছি; পরে টাকা তুলতে গিয়ে তারা জুতা ক্ষয় করছে এবং আরো টাকা চলে যাচ্ছে। এটার আসলে প্র্যাকটিসটা কি। লাইফ ইন্স্যুরেন্সটা কি অন্য দেশেও এরকম? নাকি শুধু বাংলাদেশে এরকম?
ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল: না না। আমি যতটুকু দেখেছি এধরনের গ্রাহকের হয়রানি অন্য কোন দেশে নাই। বিভিন্ন সময়ে আমিতো বিভিন্ন দেশে- জাপান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, চায়না, বিভিন্ন সময়ে তাদের ইনস্টিটিউটে আমি ট্রেনিংয়ের জন্য আমি গিয়েছি। তাদের সাথে বিভিন্ন সময়ে তাদের অথরিটির সাথে আলোচনা হয়েছে। তাদের দেশের বিভিন্ন বীমা কোম্পানির সাথে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু তারা এগুলো চিন্তাই করতে পারে না। তাদের কল্পনায় আসে না যে, গ্রাহক বীমা দাবি পাচ্ছে না বা তিন মাসের বেশি হয়ে যাওয়া। তিন মাস কেন, হোয়াই তিন মাস? পরের দিন কেন পাবে না। তাদের বক্তব্যটা এরকম- তোমাদের দেশে যে আইন এই আইনটা পুরোপুরিভাবে সঠিক না।
সুশান্ত সিনহা: তিন মাস হয়ে যাচ্ছে তারপর ও তো পাচ্ছে না?
ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল: তিন বছরেরও বেশি হয়ে যাচ্ছে এটা পাচ্ছে না। বীমা কোম্পানিগুলো দিতে পারছে না। মূলত আস্থাসংকট; বীমা কোম্পানির উপর আস্থাসংকট এখান থেকে তৈরী হচ্ছে। মূল জায়গাটা এটা।
সুশান্ত সিনহা: অথচ ইন্স্যুরেন্স তো ট্রাস্টের ব্যবসা। আপনার সাথে আমার একটা লিখিত চুক্তি। আস্থা থাকছে যে, আপনি আমার টাকাটা নিচ্ছেন, এত মেয়াদের পরে আমাকে ফেরত দিবেন। যদি সেই ট্রাস্টটা না থাকে তাহলে লাইফ ইন্স্যুরেন্সে কি থাকে?
ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল: থাকে না কিছু। এই কারণে তো আমাদের দেশের পেনিট্রেশন বাড়ছে না। বীমার পেনিট্রেশন কিন্তু দিন দিন কমছে।
সুশান্ত সিনহা: সাম্প্রতিক সময় আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান মহোদয় বলেছেন- আগে ছিল দশমিক ৫ শতাংশ সেটা এবারে কমে দশমিক ৪ শতাংশ হয়েছে।
ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল: দশমিক ৪ শতাংশ, না দশমিক ৩ শতাংশ।
সুশান্ত সিনহা: আরো কমে যাচ্ছে?
ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল: কমে যাচ্ছে।
সুশান্ত সিনহা: কারণ কি আসলে?
ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল: কারণ কি- ঐ যে আস্থার অভাব। একবার যে বীমা করছে সে যদি মেয়াদ শেষে তার টাকাটা পেয়ে যায় লাভসহ; ইভেন, এমনও আছে আমি দেখেছি- আমার লাভ দরকার নাই আসল টাকাটা আপনারা দিয়ে দেন। এমনও গ্রাহকরা আছে কিন্তু আমরা দিতে পারতেছি না। দিতে না পারার কারণে আস্থাসংকট। এবং এখান থেকে একজনে পাচ্ছে না, তার সাথে সাথে তার অন্য যে পরিচিতজন আছে সেও কিন্তু তার দেখাদেখি নতুন করে বীমা করতে আসছে না। সে বলছে, না তোমরা আর বীমা করতে যেও না। এখানে বীমা কোম্পানি কোন টাকা পয়সা গ্রাহককে ফেরত দেয় না। সময়মতো টাকা দিতে পারে না। টাকা আনতে গিয়ে আমার জুতার তলা ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। এটা হচ্ছে আমাদের দেশের একটা ইল প্রাকটিস (অসুস্থ চর্চা)।
সুশান্ত সিনহা: তার মানে কি আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান যে, শংকার কথা বলছেন- যেকোন সময় হাজার হাজার বীমার গ্রাহক রাস্তায় নেমে যেতে পারেন?
ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল: অবকোর্স, এটা বাস্তব। উনি যথাযথ বাস্তবভিত্তিক একটা কথা বলেছেন।
সুশান্ত সিনহা: উনিতো দশটা কোম্পানির অস্তিত্বহীন অবস্থায় চলে যাচ্ছে- এরকম কথাও বলেছেন?
ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল: হ্যাঁ, বলতে পারেন। উনিতো স্টাডি করেন। উনি যেহেতু আইডিআরএ চেয়ারম্যান, রেগুলেটরি চেয়ারম্যান। উনার কাছে তো দর্পন (আয়না)’র মত সব কিছু আছে। এ কারণে উনি এটা প্রেডিক্ট (ভবিষ্যদ্বাণী) করতে পারছেন।
সুশান্ত সিনহা: গ্রাহকরাতো অভিযোগও করে! গ্রাহকরা বীমা দাবি যখন পাচ্ছে না, তখন তারা কোথায় কোথায় অভিযোগ করে? একটা কোম্পানিতে যোগাযোগ করল, আরেকটা আইডিআরএ...।
ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল: প্রথমত, কোম্পানিতে যোগাযোগ করে। কোম্পানিতে যখন পায় না, যোগাযোগ করে টাকাটা সময় মত যখন পাচ্ছে না; কোম্পানি থেকেও বিভিন্ন রকম কমিটমেন্ট করা হচ্ছে কিন্তু সময়মত টাকা দিতে পারছে না। পরবর্তীতে গিয়ে তারা আইডিআরএতে অভিযোগ করে এবং প্রতি বছরই দেখা যায় বীমা কোম্পানির কাছে বস্তা বস্তা অভিযোগ আইডিআরএ থেকে আসেছে। আইডিআরএ থেকে নিষ্পত্তি করার নির্দেশনা দেয়। কিন্তু আমরা অনেক সময় নিষ্পত্তি করতে পারি না ফান্ডিংয়ের কারণে; ফান্ড শর্টেজের (ঘাটতি) কারণে।
সুশান্ত সিনহা: কিন্তু গ্রাহকতো টাকা দিয়েছে! সে টাকাগুলো গেল কোথায়? অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার মধ্যে কি গিয়েছে?
ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল: অব্যবস্থাপনার মধ্যে, আমাদের বিশেষ করে আমি যেটা বলব যে, বিভিন্ন কোম্পানিতে মার্কেটিংয়ে লোকজনের ইল প্রাকটিস (অসুস্থ চর্চা) যেটা আছে; ব্যাড প্র্যাকটিস (খারাপ চর্চা) যেটা আমরা বলি, প্রতিযোগিতা করে কে কতো বেশি পয়সা খরচ করে প্রিমিয়াম আনতে পারে। এ কারণে আমরা প্রতিনিয়ত আইডিআরএ’র যে ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের লিমিট দেয়া আছে- এই লিমিট কিন্তু আমরা ক্রস করে যাই। এই লিমিটের মধ্যে হাতে গোণা দু’একটা কোম্পানি থাকতে পারে; আর কোন কোম্পানি লিমিটের মধ্যে থাকতে পারছে না এই ব্যয়ের জন্য। অর্থাৎ তারা বিভিন্নভাবে পয়সা খরচ করছে এবং অতিরিক্ত ব্যয়ে চলে যাচ্ছে। এই কমিশন বাবদ যাচ্ছে এবং আরো অন্যান্য বিভিন্ন উপায়ে দিস ওয়ে, দ্যাট ওয়ে এখান থেকে, বিভিন্ন কোম্পানি থেকে টাকা বের হয়ে যাচ্ছে।
সুশান্ত সিনহা: এটার সমাধানটা কি? ট্রাস্ট তো ফিরিয়ে আনতে হবে। কারণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, বীমা নিয়ে তার একটা ব্যক্তিগতভাবে আগ্রহের বিষয় আছে। যেহেতু তার বাবা জাতীর পিতা এই ইন্স্যুরেন্স সেক্টরে জব করেছেন। তিনি এটাকে একটু ওউন করেন বলেই তিনি (মাননীয় প্রধানমন্ত্রী) বারবার বলছেন যে, বীমা খাতের আরো বেশি মানুষ কিভাবে যুক্ত করা যায়! তাহলে সেই প্রধানমন্ত্রীর যে আগ্রহ, প্রধানমন্ত্রীর যে আকাঙ্খা সেটার সাথে আমাদের বীমা কোম্পানিগুলো আসলে কতটুকু উদ্যেগী হচ্ছে, আগ্রহী হচ্ছে, এই বিষয়টাকে ট্রাস্ট ফিরিয়ে আনার জন্য?
ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল: ট্রাস্ট ফিরিয়ে আনার জন্য এই বীমা কোম্পানিগুলোর অতটা পারছে না যদিও ইচ্ছা থাকে; ইচ্ছা থাকা সত্বেও পারছে না তারা। আমি মনে করি যে, বিভিন্ন কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে যারা আছেন তারা হয়তো মনে করেন যে, আমরা ভালোভাবে ফেয়ার বিজনেস আমরা করব। কিন্তু আমরা যারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দায়িত্বে আছি বিভিন্ন উচ্চ পদে যারা থাকি তারা, আমাদের স্বার্থটাকে আমরা... আমি ব্যক্তিগতভাবে বড় করে দেখি। যে কারণে আমি কত বেশি পয়সা এখান থেকে আহরণ করতে পারব, আমি সেটা চিন্তা করি। যে কারণে দিস ওয়ে দ্যাট ওয়ে আমি কমিশনটা বিভিন্ন আকারে অতিরিক্ত ব্যয় করছি। অতিরিক্ত ব্যয় করার কারণে আমরা এটা করতে পারছি না। এবং একটা কোম্পানি দেখাদেখি; একটা খারাপ কোম্পানি যখন অতিরিক্ত ব্যয় করছে, ভালো একটা কোম্পানির লোকজন তারা বলছে যে, স্যার অমুক কোম্পানিতো এত টাকা কমিশন দেয় তাহলে স্যার আমরা এত কম দেই কেন। বা অমুক কোম্পানির এই কয়টা লেয়ার আছে, আইডিআরএ একটা লেয়ার বেধে দিয়েছে যে ৬টা লেয়ায় তার মধ্যে আমরা থাকতে পারছি না। তার মধ্যে গোপনে গোপনে ওই ৬টা লেয়ার সবোর্চ্চ জেনারেল ম্যানেজার। এই জেনারেল ম্যানেজার উপরে আবার ইডি, জেইডি, এসিসট্যান্ট এমডি, ডিএমডি, এডিশনাল এমডি বিভিন্ন রকমের পদ সৃষ্টি করে তাদেরকে কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেতন ও দেয়া হচ্ছে; আবার কাউকে কাউকে এত বড় বড় পদে রেখে কমিশনও দেয়া হচ্ছে এবং এগুলো গোপনে দেয়া হচ্ছে। সুতরাং ব্যবস্থাপনা ব্যয় তো বাড়বে, আর বাড়লে তো অতিরিক্ত খরচের কারণে এই কোম্পানিগুলা সিক (দুর্বল) হয়ে যাচ্ছে আস্তে আস্তে।
সুশান্ত সিনহা: একদম শেষ প্রশ্ন আপনার কাছে। সেটি হচ্ছে যে, সমাধান কি? কি করণীয় এই মুহুর্তে বাংলাদেশের ইন্স্যুরেন্সের, বিশেষ করে লাইফ ইন্স্যুরেন্সের? ট্রাস্ট ফিরিয়ে আনা, আস্থা ফিরে এনে আস্থা সংকট দূর করার?
ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল: এটা একটা কঠোর প্রোগ্রাম করতে হবে। প্রথমত কথা হচ্ছে যে, জাতীয় বীমা নীতি যেটা আছে, ২০১৪ সালে যেটা হইছিল; নতুন করে এটা আবার রিভিউ করছে। ২০২২ সাল/ ২৩ সাল পর্যন্ত ২০১৪ সালের জাতীয় বীমা নীতি বাস্তবায়ন করার কথা ছিল। এটা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি নাই। উল্টো আরো সময় লাগবে। এর মধ্যে রুলস-রেগুলেশন সবগুলো আমরা কমপ্লিট করতে পারি নাই। এগুলো সব কমপ্লিট করে সঠিক একটা স্ট্রিম লাইনের মধ্যে একদম সঠিকভাবে চালানো যায় যে, যে কোম্পানি এগুলো করবে, সাথে সাথে ওই কোম্পানির লাইসেন্স স্থগিত করা হোক। অন্য যেকোন উপায়ে লাইসেন্স স্থগিত করতে না পারলেও যে সমস্ত কোম্পানি সিক আছে একটা কোম্পানির সাথে আরেকটা কোম্পানির মার্জ করে দিয়ে হলেও এটা একটা শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা উচিত। আমি মনে করি যে, আমাদের কর্তৃপক্ষ যদি এই নিয়ম নীতিগুলো প্রোপারলি বিভিন্ন কোম্পানির উপর প্রয়োগ করতে পারে তাহলে মনে হয় এটা সম্ভব। কিন্তু এটারও একটা বিষয় আছে; আইডিআরএ’তে আমাদের জনবল অত্যন্ত কম, জনবল কম থাকার কারণে তারা পুরোপুরি এটা অফসাইট সুপারভিশন করতে পারছে না, ওয়ানসাইটতো দূরের কথা।
সুশান্ত সিনহা: তার মানে হচ্ছে কোম্পানিগুলো আইনকানুন প্রয়োগ করতে জনবলের একটা বিষয় আছে?
ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল: আইডিআরএ’র জনবলের বিষয় আছে এবং যে নীতিমালা আইডিআরএ দিয়ে দিবে ওই নীতিমালার বাইরে যেতে পারবে না। ওই নীতিমালার বাইরে গেলেই সাথে সাথে তার বিরুদ্ধে কোম্পানিসহ এবং অন্যান্য দায়িত্বশীল কর্মকর্তা যারা আছে তাদের উপরে এইগুলো ইমপোজ (আরোপ) করতে হবে।
সুশান্ত সিনহা: অনেক ধন্যবাদ আমাদেরকে সময় দেয়ার জন্য।
ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
সুশান্ত সিনহা: দর্শক আপনারা জানেন যে, ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি তার নিয়মিত যে কাজ সেটি হচ্ছে গণম্যধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করা; সেটির পাশাপাশি কিন্তু এই ভিজুয়াল যেম মতামত সেটিও আমরা তুলে ধরি। আজকে আপনারা শুনছিলেন বাংলাদেশের বীমা খাতের বিশেষ করে জীবন বীমা খাতের যে আস্থাহীনতা বা আস্থা সংকট দূর করার কথা বলা হচ্ছে- সে আস্থাহীনতা দূর করার পদ্ধতিগুলো কি, করণীয়, কারণ, রোগ জানা থাকলে আপনার কিন্তু রোগের চিকিৎসাটা করা সম্ভব।
আমাদের কেন আস্থাহীনতা, সে বিষয়টি নিয়ে আমরা কথা শুনলাম এতক্ষণ ধরে। সেটি হচ্ছে, বীমা খাতকে এবং এ খাতের সম্ভাবনাকে সামনে রেখে অব্যবস্থাপনা যেগুলো আছে সেগুলোকে দূর করতে হবে। আপনারা আমাদের সঙ্গেই থাকবেন নিয়মিত এই আয়োজনে। আমাদের দেখা হবে আগামী দিনে অন্য কোন অতিথির সাথে, অন্য কোন বিষয় নিয়ে। আপনারা ততক্ষণ ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।