উন্নয়ন ও বীমা

জীবন বীমা গতিশীল করতে করণীয়

ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র ধারাবাহিক অনুষ্ঠান ‘উন্নয়ন ও বীমা’র ১৪তম পর্বে আলোচনায় অংশ নেন প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জালালুল আজিম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় রয়েছেন সুশান্ত সিনহা।

ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত উন্নয়ন ও বীমা অনুষ্ঠানের ১৪তম পর্বের আলোচনার বিষয় ‘জীবন বীমা গতিশীল করতে করণীয়’। পাঠকদের চাহিদার প্রেক্ষিতে ভিডিও কন্টেন্টটি অনুলিখন করা হয়েছে। ‘উন্নয়ন ও বীমা’র ১৪তম পর্বের মূল ভিডিওটি দেখতে  এখানে ক্লিক করুন

সুশান্ত সিনহা: দর্শক আপনাদেরকে স্বাগত জানাচ্ছি উন্নয়ন ও বীমা অনুষ্ঠানে। আপনারা জানেন যে, ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র এ আয়োজনে আমরা প্রতি মুহুর্তে সমকালীন যে বিষয়গুলো থাকে সেগুলো নিয়ে যেমন কথা বলি তেমনি বীমা খাতের জন্য করণীয় অর্থাৎ বীমা খাতে উন্নয়নের জন্য সরকারী যে পরিকল্পনা আছে, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থা যেসব উদ্যোগ নিচ্ছে; সেখানে কিভাবে আসলে আরো গতিশীল এবং স্থিতিশীল দুইদিক থেকে টেকশই উন্নয়নের জন্য বীমা খাতকে আমরা এগিয়ে নিতে পারি সে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা অতিথিদের সাথে বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলি।

আজকে আমরা কথা বলতে চাই জীবন বীমা খাত নিয়ে। কারণ জীবন বীমা খাত-ই কিন্তু বাংলাদেশের ইতিবাচক এবং নীতিবাচক দুটোই আমাদের সামনে এসেছে। কারণ আপনারা জানেন যে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যে বীমা করছে সেখানে ঝুঁকিতে পড়লে মানুষ আসলে নতুন করে জীবন বীমা যেমন করবে না; তেমনি আবার জীবন বীমা ছাড়া আমরা কিন্তু উন্নত দেশের কাতারে যে উঠতে চাই বা উন্নয়নশীল দেশ থেকে আমরা পরবর্তী ধাপে যেতে চাই সেটা কিন্তু যাওয়া সম্ভব হবে না। সেই কারণে আমরা আজকে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনাটি করতে চাইছি সে বিষয়টি হচ্ছে জীবন ও বীমা। জীবন ও বীমার মধ্যে জীবন বীমাটায় আসলে আমাদের যে প্যানিটেশন, সেটা আমরা খুব বেশি করতে পারছি না। কেন করতে পারছি না, কোথায় হাত দেয়া দরকার- সে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য আজকে স্টুডিওতে আমাদের সঙ্গে উপস্থিত রয়েছেন প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা জালালুল আজিম।

আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি আমাদের স্টুডিওতে। আপনি জীবন বীমা খাতে দীর্ঘ বছর ধরে কাজ করছেন। আপনার শুরুটা আমরা জানি; এখন আপনি যে জায়গায় আছেন একটা ভালো কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত যেগুলো কোম্পানি তার মধ্যে একটি প্রগতি লাইফ। আপনাদের বিষয় নিয়ে না; পুরো বীমা খাত নিয়ে, দুষ্টুচক্র নিয়ে আমরা যেটা বলি সেটা হচ্ছে আস্থাহীনতা। এই আস্থাহীনতাটা আসলে কেন? এখান থেকে আসলে উত্তোরণের উপায় কি। আপনারা যারা মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, দিন শেষে এটা আপনাদের উপর-ই এই দায়ভারটা চাপে। মালিক পক্ষ সরাসরি গ্রাহকের সাথে ইনগেইজ থাকে না। আবার সরাসরি ফান্ড ম্যানেজমেন্টের কাজটি আপনাদের করতে হয়। ফলে উভয় সংকটে আপনারা আছেন; এই যায়গা থেকে আলোচনাটি করতে চাই যে, বীমা খাতের মধ্যে এই জীবন বীমা খাতের আস্থা সংকট কেন এবং এটি দূর করার উপায়টা কি?

জালালুল আজিম: ধন্যবাদ। আস্থাহীনতা আসলে কেন ঘটে- যখন আপনি কোন কমিটমেন্ট করে ফেইল করবেন তখনই কিন্তু আস্থাহীনতা আসে। এটা যদি রিপিটেডলি হতে থাকে তখন এই আস্থাহীনতা একটা পারমানেন্ট শেইফ (স্থায়ী রূপ)-এ চলে যায়। আমাদের জীবন বীমা সেক্টরে আমরা কিছু কমিটমেন্ট করি গ্রাহকের কাছে; সেই কমিটমেন্টের ভেতরে একটা থাকে যেমন ধরেন- কোন গ্রাহকের মৃত্যু হলে তার নমিনিকে আমরা টাকা দিব। উনি যদি কোন দুর্ঘটনায় পড়েন- তার চিকিৎসার জন্য বা পঙ্গু হয়ে গেলেন তাকে চলা ফেরার জন্য টাকা-পয়সা দিব। অথবা সন্তানের পড়াশোনা, সন্তানের লেখা পড়ার জন্য শিক্ষা বীমা করে থাকে তার সন্তানের লেখাপড়াটার নিশ্চয়তা বিধান করব। মেয়াদ শেষে তাকে আমরা একটা ভালো বোনাসসহ তাকে মেয়াদ উত্তীর্ণ দাবিটা পরিশোধ করব।

সুশান্ত সিনহা: সে যে টাকাটা জমা দেবে?

জালালুল আজিম: সে টাকার সাথে আরও কিছু বোনাস অর্থাৎ কোম্পানিগুলো অপারেশন করে যে প্রফিট করে বাংলাদেশের আইনে সে প্রফিটের ৯০% তাকে দিতে হবে। যেটা জমা হতে থাকে এটাকে আমরা বোনাস বলি। এই বোনাসটাসহ বীমা অংকর সাথে তার টাকাটা ফেরত দিব- সেটা হলো মেয়াদ উত্তীর্ণ। আমাদের দেশের জীবন বীমার যে প্রোডাক্টগুলো তাতে কিন্তু বেশিরভাগ-ই এই ধরণের প্রোডাক্ট। অর্থাৎ দুর্ঘটনা ঘটলে বা মারা গেলে যে রকম টাকা দিতে হয়, পাশাপাশি মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে তাকে টাকা দিতে হয়। এখন মারা যায় কিন্তু কম; দেড় থেকে দুই পার্সেন্ট। যার ফলে এই ক্লেইমটা এই রকম এমাউন্ট বলেন, সংখ্যা বলেন- তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর না। এটা যে কোন কোম্পানি পে করতে পারবে। কিন্তু আসল জিনিসটা হয় একটা কোম্পানি সুন্দরভাবে রান করার পরে এবং আমাদের দেশে বেশির ভাগ পলিসি করে দশ, বারো, পনের, বিশ বছর মেয়াদে; এই সময় শেষে তার গ্রাহকের কাছে টাকাটা দ্রুততার সাথে ভালো বোনাসসহ তাকে ফেরত দেয়া। এখন দুভার্গ্যবশত আমাদের দেশে বেশিরভাগ কোম্পানি এই কমিটমেন্টগুলোতে ফেল করতেছে। যার ফলে বীমার প্রতি আস্থার সংকট -এটা আরো প্রকোপ। আমি বলব, অনেক ব্যাপকহারে হচ্ছে। যেহেতু আপনি যদি স্ট্যাটিস্টিকস (পরিসংখ্যান) দেখেন এখন অনেক কোম্পানি বাংলাদেশে তারা গ্রাহকের দাবি পরিশোধ করছে না।

সুশান্ত সিনহা: মানে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান মহোদয় যেটি বলেছেন, দশটা কোম্পানির অবস্থা এমনই; তারা অস্তিত্বের সংকটে আছে।

জালালুল আজিম: ইগজ্যাক্টলি (যথাযথভাবে) তারা টাকা দিতে পারছে না। এটা নিয়ে বিভিন্নভাবে আমরা কথা বলছি। আমাদের প্রথম কাজ হলো- আমাদের ইমেজ সংকটটা কাটাতে হবে। ইমেজ সংকট কাটাতে হলে গ্রাহকের দাবি পরিশোধ করতে হবে। এটা মৃত্যুদাবি হোক, মেয়াদ উত্তীর্ণ দাবি হোক।

সুশান্ত সিনহা: একটা বিষয় হলো- গ্রাহকদের বীমা দাবি কিছু কোম্পানি দিতে পারছে না। আবার যে কোম্পানিগুলো দিচ্ছে তাদের দেখা যাচ্ছে, যে সময় বীমা দাবি পাওয়ার কথা; ম্যাচুরিটির পর তিন মাস, চার মাস, এক বছর, দু’বছর ঘুরে ঘুরে তাকে টাকাটা নিতে হচ্ছে। এটা আরেকটা বিড়ম্বনার জন্ম দেয়। সেটাতে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

জালালুল আজিম: হ্যা, এটাই। একটা হলো দিচ্ছেন না, আরেকটা হলো দেরি করে দিচ্ছেন; সময় ক্ষেপন করে দিচ্ছেন। দুটোই কিন্তু আমাদের ইমেজের ক্ষতিকর। প্রগতি লাইফে আমরা যে মটো নিয়ে কাজ করি, আমাদের কথা হচ্ছে, যেদিন তার মেয়াদ উর্ত্তীণ হবে তার পরের দিন তার ব্যাংক একাউন্টে গিয়ে তার টাকা হিট করবে। এই মটো নিয়ে আমরা কাজ করছি।

সুশান্ত সিনহা: এই ডিজিটাল ব্যবস্থাটার কথা আমরা আগেও দু’য়েকটা কোম্পানির ক্ষেত্রে শুনেছি। এটিই তো আসলে হওয়া উচিত। গ্রাহকতো তার চেক দিয়ে, আবার টাকা নিতে আসবে কেন? এটা না করে আমরা সরাসরি দিতে পারি কিনা?

জালালুল আজিম: অবশ্যই পারি। আমরা আমাদের কোম্পানিতে দিচ্ছি। আমার কোম্পানির যদি উদাহরণ চান তাহলে আমি বলতে পারি যে, আমি জানি এই পলিসিটা কবে ম্যাচিউরিটি হবে। আমার আইটি ডিপার্টমেন্টকে সেই ইন্সট্রাকশন দেয়া আছে যে, এক মাস আগে সে গ্রাহকের কাছে, আমরা এটাকে নির্বাহি রশিদ বলি অর্থাৎ সে কত টাকা পাবে তার বোনাস কত জমা হয়েছে, লোন নিয়ে থাকলে লোন মাইনাস করা করে নেট ফিগারটা দিয়ে গ্রাহককে জানানো হয় যে, আপনার পলিসি এত তারিখে মেয়াদ শেষ হবে আপনি এত টাকা পাবেন যার হিসাব দেয়া হল এটা ঠিক থাকলে আপনি নিচে স্বাক্ষর করে পলিনি ডকুমেন্টটাসহ আমাদের কাছে পাঠিয়ে দেন। আমরা এক মাস আগে এই প্রসেসটা শুরু করি এই জন্য যে, এক মাস আগে আমি যদি তার কাছে পাঠাই তিনি পাওয়ার পরে এটা সই করে আমাদের কাছে আসতে আসতে আমরা ধরে নিচ্ছি আরো দশ পনের দিন যাবে। যখন পনের দিন পরে আমরা সেটা পেলাম তখন আমার ডিপার্টমেন্টগুলো এটাকে কাজ করে, অডিট করে ফাইনালি রেডি করে; যাতে তাকে মেয়াদ পুর্তির পরের দিন তাকে টাকাটা দেয়া যায়। আমরা এখন যে জিনিসটা করছি সেটা হচ্ছে, আমরা গ্রাহককে এর সাথে নতুন করে যোগ করছি যে আপনি আপনার ব্যাংকের একাউন্ট নাম্বার পাঠাবেন; ইএফটিএন এর মাধ্যমে আমরা আপনার একাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দিব। এ জন্য ব্যাংকের একাউন্ট নাম্বার, ব্যাংক ডিটেইলসটা দিবেন; আরো ভালো হয় যদি আপনি ওই এমআইসিআর চেকের একটা ফটোকপি আমাদেরকে দেন। কারণ বিইএফটিএন এ টাকা পাঠাতে ওই রাউটিং নাম্বারটা লাগে।

আমরা কিন্তু জুলাই থেকে এটা বাধ্যতামূলক করতে যাচ্ছি আমাদের কোম্পানিতে। এখন আমরা বাধ্যতামূলক অবস্থায় নয়, অপশনাল আছি। কিন্তু আমি প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছি, ভাই আপনাদের সুবিধার্থে আপনি আমাকে কিন্তু মেয়াদপুর্তি দাবির সময় বা ইভেন ডেড ক্লেইম বলেন; যখনই টাকা আমরা গ্রাহককে দিব এই চেকের তথ্য দিবেন। তাহলে হবে কি, আমি তার পাওনা যেদিন হবে সেদিন বা তার পরের দিন আমি তার একাউন্টে যাতে বিইএফটিএন নাম্বারে দিতে পারি। এটা কিন্তু ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে সম্ভব; যেটা ব্যাংকিং সেক্টরে এখন শুরু হয়ে গেছে। প্রগতি লাইফ এটা করছে; আরো কয়েকটা কোম্পানি এটা করছে। সবাই যদি আমরা করি তাহলে কিন্তু পেমেন্ট করার সমস্যা নাই। মূল সমস্যা হচ্ছে কিন্তু ওই জায়গায় না। মূল সমস্যা হচ্ছে, আমি যে গ্রাহককে টাকাটা দিব সে টাকাটা এখন অনেক কোম্পানির কাছে নেই।

সুশান্ত সিনহা: কিন্তু গ্রাহকের কাছ থেকে টাকাটা আপনি নিয়েছিলেন?

জালালুল আজিম: ইগজ্যাক্টলি, গ্রাহকের কাছ থেকে আমরা টাকা নিয়েছি এবং আমরা কাস্টোডিয়ান (জিম্মাদার) হিসেবে কাজ করি। এই টাকাটা এমন জায়গায় বিনিয়োগ করে আমরা সে বিনিয়োগ থেকে যে মুনাফা অর্জন করব, সেই রির্টান দিয়ে ম্যানেজম্যান্ট এক্সপেন্স (ব্যবস্থাপনা ব্যয়) মেটাব; একটা ভালো বোনাস দিয়ে গ্রাহককে পরবর্তীতে পরিশোধ করব। এই জায়গাটায় দেখা গেছে আমরা যখন গ্রাহকের কাছ থেকে টাকাটা প্রিমিয়াম হিসেবে নিয়েছি এবং যেহেতু আমাদের দেশে পলিসিগুলো নূ্ন্যতম দশ বছরের, ম্যাক্সিমাম পলিসি হয় বারো বছরের বা পনের বছরের। সুতরাং আমরা বলি একটা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির জন্য দশ বছর ইজ হানিমুন পিরিয়ড। অর্থাৎ দেড় থেকে দুই পার্সেন্ট ডেড ক্লেইম দিতে হয়। বাকিগুলো কিন্তু আপনার কাছে রয়ে যাচ্ছে।

সুশান্ত সিনহা: প্রথম দশ বছর তার জার্নি শুরু।

জালালুল আজিম: প্রথম দশ বছর তার কিন্তু পেমেন্ট শুরু হয় না। যার ফলে তখন এদের ফান্ড এভেইলেব থাকে।

সুশান্ত সিনহা: এই সময়টাতে টাকা শুধু আসে, দিতে হয় না। টাকা দিতে হয় না। ব্যয় নাই।

জালালুল আজিম: টাকা দেয়া শুরু হয় দশ বছর পর থেকে। দেখা গেছে, আসলে আমরা যখন এই প্রিমিয়ামটা নিচ্ছি বা একজন বীমা গ্রাহকের কাছে বীমা পরিকল্প বিক্রি করছি; তার জন্য একটা ম্যানেজমেন্ট এক্সপেন্স এলাউ করা আছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বলেন, কোম্পানিগুলোর ব্যাড প্রাকটিসের (মন্দ চর্চার) জন্য বলেন, ব্যাড ম্যানেজমেন্ট বলেন, ব্যাড সুপারভিশন বলেন বাই দ্যা বোর্ড; ব্যাড মনিটরিং বাই দ্যা রেগুলেটর- সব কিছু মিলে দেখা গেছে বেশিরভাগ কোম্পানি এই ম্যানেজমেন্ট এক্সপেন্সের ভেতর ছিল না।

সুশান্ত সিনহা: মানে, যে টাকাটা খরচ করার সীমা আছে তার চেয়ে বেশি খরচ করেছে।

জালালুল আজিম: এমনও অনেক নজির আছে যে, একশত টাকা প্রিমিয়াম আনতে গিয়ে একশত বিশ টাকা খরচ করছে। উল্টো পকেট থেকে টাকাটা চলে গেছে। যার ফলে প্রকিউরমেন্ট হাই; প্রকিউরমেন্ট কস্টের কারণে এলাউঅ্যাবল ম্যানেজমেন্ট এক্সপেন্সের ভেতরে না থাকার কারণে তার কাছে টাকা নাই। এটা হল একটা কারণ। দ্বিতীয় কারণ হল- কিছু কিছু কোম্পানিতে ব্যাড ইনভেস্টমেন্ট। এই ব্যাড ইনভেস্টমেন্ট যে জায়গাগুলো- আপনার পাঁচ টাকার একটা জমি কিনছে ৫০ টাকা দিয়ে। আবার সেই জমি ডেভেলপমেন্টের নামে আরো কয়েকশ’ কোটি টাকা খরচ করছে। এখন প্র্যাকটিক্যালি কাগজে কলমে লাইফ ফান্ড দেখাচ্ছেন যে, ধরেন- এই কোম্পানির লাইফ ফান্ড দুই হাজার কোটি টাকা। তার মধ্যে একটা জমির ভ্যালু দেখাচ্ছেন দুইশ’ কোটি টাকা।

সুশান্ত সিনহা: মানে সেটা ৫ কোটি টাকা, ১০ কোটি টাকা।

জালালুল আজিম: রিয়েলি আপনি জমিটি বিক্রি করতে গেলে পাবেন দশ কোটি টাকা। যার ফলে আপনার টাকা নাই।

সুশান্ত সিনহা: তার মানে এখান থেকে টাকা বের হয়ে যাওয়া; কোম্পানি থেকে টাকা বের করার একটা পথ হচ্ছে ব্যাড ইনবেস্টমেন্ট।

জালালুল আজিম: টাকা বের করে নেয়ার এটা একটা পথ হয়ে গেছে। যার ফলে এখানে বোর্ড ইনভলব ছিল, এখানে ম্যানেজমেন্ট ইনভলব ছিল এবং রেগুলেটর তার দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়ে গেছে। এই সিচুয়েশনের কারণে কিন্তু এখন যেটা দেখছেন আপনি টাকা দিতে পারছে না। তাহলে এর পরিত্রাণটা কি? আমি যেটা মনে করি যে, এখন যে সমস্ত কোম্পানি টাকা দিতে পারছে না এই সমস্ত কোম্পানির এসেট (সম্পদ) যদি থাকে সে এসেটটা লিকুইডেট (নগদ) করে গ্রাহকের দাবিটা দ্রুত পরিশোধ করা। যদি এসেটের ঘাটতি থাকে, যারা এই কোম্পানিগুলো ফরম করছে; যেহেতু তারা ব্যবসা করতে নামছে। এই ব্যবসা বেনিফিট হলে তারা নিয়েছে। তাই এই ব্যবসার দায়-দায়িত্ব তাদের। আমি মনে করি সরকার তাদেরকে বাধ্য করা উচিত, তাদের আদার প্রোপারটি বিক্রি করে হইলেও গ্রাহকের দাবির যে টাকাটা এই টাকাটা এই ফান্ডে দিয়ে গ্রাহকের দাবি পরিশোধ করা। এখানে শক্ত এসটেন্স নিয়ে গ্রাহকের দাবিটা পরিশোধ করা যায় তাহলে একটা ধাপ আমরা অতিক্রম করতে পারব। পাশাপাশি যারা আছি ভবিষতেৎ এটা যাতে না হয়। ২০১৩-১৪ সালে যে কোম্পানিগুলো এসেছে তাদের বেশিরভাগ কিন্তু এই ব্যাড প্র্যাকটিসে আছে। তারা কিন্ত সামনে গিয়ে একটা বিপদে পড়বে। সে অবস্থা যেন না হয়। এখানে বোর্ডকে সেভাবে মনিটরিং করা, ম্যানেজমেন্টকে সেভাবে সেলফ রেগুলেশনের মধ্যে আনা, অবশ্যই যারা রেগুলেটরি বডি থাকবেন তাদের নজরদারি তৈরী করা।

সুশান্ত সিনহা: সাম্প্রতিক সময়ে আমরা ম্যানেজমেন্ট এক্সপেন্সে উন্নতি দেখছি; অনেকগুলো বীমা কোম্পানি। এটি ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র বড় কাজ ছিল যে, তারা আউট অব লিমিট খরচ করতো সেটা কমিয়ে এনেছে। এটার মানে, আমাদের যে ভালো হওয়ার পথে আরেক ধাপ এগুনো কিনা, মনে করছেন?

জালালুল আজিম: অবশ্যই ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি একটা ভালো ভূমিকা পালন করেছে, আমি জানি। তারা অন্তত রেগুলেটরদের কাছে বা কিছু সংস্থার কাছে তারা এই তথ্যটা সঠিকভাবে তুলে ধরেছিল। যার ফলে তারা কিছু পদক্ষেপ নেয়াতে এই অনেক কোম্পানি কিন্তু এলাউয়েভল ম্যানেজমেন্ট এক্সপেন্সে আসছে। আমি, যদি আমাদের কোম্পানির কথা বলি। ভেরি ফ্যাক্ট যে, ২০০০ সালে প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স তৈরি হয় বা ব্যবসা শুরু করে। ২০১৫ সাল পর্যন্ত কিন্তু এই কোম্পানিটা এক্সেস ম্যানেজমেন্ট এক্সপেন্সের কোম্পানি ছিল। মানে, লিমিটের বাইরে খরচ করে আসছে। আমি ২০১৩ সালে যখন এখানকার এমডি হিসেবে দায়িত্বে আসি, এসে এর সংস্কার প্রোগ্রামে হাত দিলাম তখন ওয়ান অব দি টার্গেট ছিল যে, আমি ম্যানেজমেন্ট এক্সপেন্সটা লিমিটের মধ্যে নিয়ে আসব। আমি কাজ শুরু করি। পাশাপাশি এ ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র নিউজের ফলে আইডিআরএ’র প্রেশার এবং আরেকটা সংগঠনের পেশারের কারণে আমার এ প্রচেষ্টা আরো জোরদার হয়। যার ফলে ২০১৬ থেকে আমি ব্রেকইভেনের মধ্যে আসি এবং প্রতি বছরে কিন্তু যতটুকু খরচ করার কথা তার থেকে অনেক কম করি।

সুশান্ত সিনহা: তার মানে আপনাদের (প্রগতি লাইফের) জার্নিটা ২০০২ সালে শুরু?

জালালুল আজিম: ২০০০ সালে শুরু। কিন্তু ২০১৫ সাল পর্যন্ত আমরা বেশি খরচ করছি।

সুশান্ত সিনহা: ২০১৩ সালে আপনি উদ্যোগ নিলেন, ২০১৬ সালে এসে লিমিটের মধ্যে থাকলেন।

জালালুল আজিম: এখন দেখা গেছে যে, আমার যতটুকু খরচ করার কথা ছিল তার থেকে ৯ কোটি টাকা খরচ কম করেছি। যার ফলে ৯ কোটি টাকার বেনিফিট কিন্তু গ্রাহক পাবে। অর্থাৎ সে বোনাস বেশি পাবে। আবার শেয়ারহোল্ডারও বেশি পাবে।

সুশান্ত সিনহা: শেয়ারহোল্ডার মানে, যারা কোম্পানির উদ্যেক্তা পরিচালক?

জালালুল আজিম: নট অনলি উদ্যেক্তা পরিচালক; শেয়ার যারা কিনেছে, প্রতি বছর ডিভিডেন্ট পাবে। অ্যাট দ্যা সেইম টাইম, আমরা যারা কাজ করছি, যারা এমপ্লয়ি- তাদের ইয়ারলি ইনক্রিমেন্ট, বেতন-ভাতা ভালো পাবে। যার ফলে এই জায়গাটা কিন্তু প্রত্যেককে হাত দিতে হবে। তবে এখন আপনি দেখবেন সব কোম্পানি এলাউঅ্যাবল এক্সপেন্সে আসে নাই। তাহলে কি করতে হবে? আমি মনে করি আইডিআরএকে একটা ভালো ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রত্যেক কোম্পানির ম্যানেজমেন্টকে ডেকে একটা ডেডলাইন দিয়ে দেয়া; তোমাকে এলাউঅ্যাবল এক্সপেন্সে আসতে হবে। এটা আসা খুব কঠিন কিছু না।

সুশান্ত সিনহা: এখানে এলাউঅ্যাবল লিমিটের মধ্যে থাকার মানে কিন্তু বীমা দাবি পরিশোধ করাটা...।

জালালুল আজিম: আপনার সক্ষমতা বাড়াবে। আপনি যখন ম্যানেজমেন্টের ভেতর থাকছেন; তখন বেনিফিটটা হলো বীমা দাবি পরিশোধে আপনি ব্যর্থ হবেন না, আপনি পলিসি গ্রাহককে শুধু বীমা দাবি দিবেন না বরং তাকে আপনি বেশি বোনাস দিয়ে এই বীমা দাবি পরিশোধ করতে পারবেন। শেয়ারহোল্ডারদেরকে ভালো ডিভিডেন্ট দিতে পারবেন। এমপ্লয়িদেরকে... এখন দেখবেন বীমা সেক্টরে ভালো ছেলেপেলে কেন আসে না, কারণ আমরা ভালো বেতন দিতে পারি না। কিন্তু যদি আমরা (এলাউঅ্যাবলের) ভেতরে থাকি তাহলে কোন অফিসারকে ভালো বেতন দিতে পারব। তখন কিন্তু কোয়ালিটি ছেলেপেলে আমার এখানে কাজ করতে আসবে। যেটা লং টার্ম এই সেক্টরকে ভালোর দিকে নিয়ে যাবে।

সুশান্ত সিনহা: জ্বি, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে সময় দেয়ার জন্য। দর্শক আপনারা শুনছিলেন ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র নিয়মিত যে আয়োজন, উন্নয়ন ও বীমা অনুষ্ঠানে সেখানে জীবন বীমার খাতের আস্থার সংকট দূর করার জন্য করণীয়গুলো। পরিস্থিতি উত্তোরণের হয়েছে অনেক খানি কিন্তু এটা যথেষ্ট নয়। এটাকে টেকসই করার জন্য কন্টিনিউ অর্থাৎ ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। আমরা অন্য দিন, অন্য কোন বিষয়ে আমরা কথা বলব অন্য কোন অতিথির সঙ্গে। ততক্ষণ পর্যন্ত আপনারা আমাদের সঙ্গে-ই থাকুন, ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র সঙ্গে থাকুন।