ওবামাকেয়ারই থাকছে মার্কিনিদের স্বাস্থ্যসেবায়

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক: অবশেষে মার্কিন নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্প হিসেবে ওবামাকেয়ারই বহাল থাকছে। ভোটাভুটিতে হারের আশঙ্কায় কংগ্রেসে তোলা ট্রাম্পের স্বাস্থ্যসেবা বিলটি প্রত্যাহারের পর এটা নিশ্চিত হলো। ওবামাকেয়ার বাতিল করে স্বাস্থ্যসেবায় নতুন চমক দেখানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করলেও শেষ পর্যন্ত পিছু হটলেন ডোনাল্ড জে ট্রাম্প।

স্বাস্থ্যসেবা বিল নিয়ে গত বৃহস্পতিবারেই কংগ্রেসে ভোটাভুটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নিজ দলেই বিরোধিতার কারণে সেদিন ভোট হয়নি। এরপর গতকাল শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৩টায় ওই বিলের ওপর ভোটাভুটি হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন কংগ্রেসের মুখপাত্র। কিন্তু প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকান সদস্যদের মধ্যে ২৮ থেকে ৩৫ জন ওই বিলের খসড়া নিয়ে বিরোধিতা করেছিলেন বলে জানায় বিবিসি নিউজ। এই প্রেক্ষাপটে ভোটাভুটির নির্ধারিত সময়ে বিলটি প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণা আসে।

হাউজ স্পিকার পল রায়ান বলেছেন, ট্রাম্পের স্বাস্থ্যসেবা বিলের সমর্থনে ২১৫টি রিপাবলিকান ভোট পাওয়া যাবে না। এমন অনিশ্চয়তার মুখে তিনি এবং ট্রাম্প কংগ্রেসে ভোট না করতে সম্মত হয়। এটাকে হতাশাজনক বলে বর্ণনা করেছেন স্পিকার পল রায়ান।

অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটরা এটাকে আমেরিকার জনগণের বিজয় বলে বর্ণনা করেছেন। তারা বলেছেন, ওবামার স্বাস্থ্যসেবা আইন বাতিল করে ট্রাম্পের বিল প্রণয়ন করা হলে যুক্তরাষ্ট্রের নিম্ন আয়ের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতেন।

ট্রাম্পের জন্য এটা বড় ধাক্কা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ ওবামাকেয়ার নামে পরিচিত স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত বিলটি বাতিল করা ছিল ট্রাম্পের অন্যতম প্রধান নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। নির্বাচনী প্রচারাভিযানের চূড়ান্ত সপ্তাহে ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১০ সালের স্বাস্থ্যসেবা আইন খুব দ্রুত বাতিলের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন। বলেছিলেন, আমরা এটা করবো এবং খুব, খুব দ্রুত করবো। এটা একটা বিপত্তি।

তবে নির্বাচনে জয়ের পর বারাক ওবামার সঙ্গে হোয়াইট হাউজে বৈঠকের পর ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি সেগুলো খুব পছন্দ করি’। বলেন, ওবামাকেয়ার সম্পর্কে তার এই পরিবর্তনের বড় কারণ রয়েছে।ওই বৈঠকে অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট’র কিছু বিষয় সংরক্ষণের পরামর্শ দিয়েছিলেন বারাক ওবামা। ৪৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর এটি ছিল ট্রাম্পের প্রথম সাক্ষাৎকার।

কিন্তু শপথ নেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই ওবামাকেয়ারের বিভিন্ন নিয়ম আইনগতভাবে বাতিলে নির্বাহী আদেশে সই করেন নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০ জানুয়ারি শুক্রবার রাতে ওই নির্বাহী আদেশে সই করেন তিনি। নির্বাহী আদেশের লক্ষ্য দ্রুত স্বাস্থ্যবীমা বাতিল করা। তারই চূড়ান্ত পর্যায় হলো কংগ্রেসে ট্রাম্পের স্বাস্থ্যসেবা বিল পাস করানো। যেখানে এসে হোঁচট খেলেন ডোনাল্ড জে ট্রাম্প।

২০০৮ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে বারাক ওবামা তার নির্বাচনী ইশতেহারে স্বাস্থ্যসেবাকে সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে এনে দেয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন। স্বাস্থ্যসেবা নীতি ও পদ্ধতিতে বীমা শিল্পের ব্যবহারের চমক দেখিয়ে আমেরিকানদের মন জয় করেন ওবামা। ক্ষমতায় এসে চালু করেন প্যাশেন্ট প্রোটেকশন অ্যান্ড অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট (পিপিএসিএ), বা সংক্ষেপে অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট (এসিএ)। যা পরিচিতি লাভ করে  ‘ওবামাকেয়ার’ নামে।

স্বাস্থ্যসেবা শিল্প পুনর্গঠন করতে ২০১০ সালের ২৩ মার্চ প্রেসিডেন্ট ওবামার দ্বারা অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট আইনে পরিণত হয়। আর ২০১২ সালের ২৮ জুন সুপ্রীমকোট এটিকে স্বীকৃতি দেয়। ওবামাকেয়ারের উদ্দেশ্য হলো- সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্মত স্বাস্থ্যবীমায় আমেরিকানদের আরো প্রবেশাধিকার দেয়া এবং দেশের স্বাস্থ্যসেবার ক্রমবর্ধমান খরচ কমানো।