বিআইএ’র নির্বাচন ২০২৫-২০২৬

বীমাসেবা আরো সহজ, দ্রুত এবং স্বচ্ছ করা আমার মূল লক্ষ্য: সাঈদ আহমেদ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বীমা খাতের সেবা আরো সহজ, দ্রুত এবং স্বচ্ছ করে গড়ে তোলা-ই হবে মূল লক্ষ্য। এক্ষেত্রে বীমা খাতকে কিভাবে আরো শক্তিশালী, সাশ্রয়ী, গ্রাহকবান্ধব এবং কার্যকরী করে তোলা যায় সে বিষয়ে কাজ করতে চান বিআইএ’র নির্বাচনে নন-লাইফ বীমা খাতের প্রার্থী ও গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান সাঈদ আহমেদ।

বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন (বিআইএ)’র নির্বাচনে বিজয়ী হলে বীমা খাতের সংস্কারে কি কি উদ্যোগ নিবেন- ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। সাঈদ আহমেদ মনে করেন, আধুনিক প্রযুক্তি, সঠিক আইন ও নীতির সংস্কার এবং পেশাদারিত্বের মাধ্যমে বীমা খাতকে আরও উন্নত এবং বিশ্বস্ত খাতে পরিণত করা সম্ভব হবে।

বীমা খাতের উন্নয়ন ও সংস্কারে যেসব পদক্ষেপ নিতে চান সাঈদ আহমেদ-

১। ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন:

ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন এর মাধ্যমে বীমা গ্রাহকদের জন্য সেবাকে আরও সহজ, দ্রুত এবং নিরাপদ করা। অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে গ্রাহকরা যাতে সহজেই বীমা পলিসি কিনতে, নবায়ন করতে এবং দ্রুত দাবির নিষ্পত্তি করতে পারে সে দিকে গুরুত্ব দেয়া, যাতে সময় এবং পরিশ্রম বাঁচে। ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে লেনদেনের স্বচ্ছতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া, এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে ঝুঁকি মূল্যায়ন এবং দাবি নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া আরও দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে সম্পন্ন করা হবে। উন্নত ডাটা অ্যানালিটিক্সের মাধ্যমে গ্রাহকের আচরণ এবং ঝুঁকি বিশ্লেষণ করে প্রিমিয়াম নির্ধারণ আরও সঠিক এবং কার্যকর করা।

২। বীমা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি:

বীমা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বীমার গুরুত্ব প্রচার করা। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে বীমা শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করে নতুন প্রজন্মকে সচেতন করা যেতে পারে। এছাড়া, বীমা এজেন্টদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ আয়োজন করা, যাতে তারা গ্রাহকদের কাছে আরও নির্ভরযোগ্য সেবা প্রদান করতে পারেন, ফলে বীমা খাতের গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াবে।

৩। বীমা দাবি নিষ্পত্তি সহজ ও দ্রুত করা:

বীমা দাবি নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুত করতে ডিজিটালাইজড দাবি দাখিল ও প্রসেসিং ব্যবস্থা চালু করা, যাতে গ্রাহকদের সময় বাঁচাবে। অভিযোগ ব্যবস্থাপনা এবং নিরীক্ষা পদ্ধতি কার্যকর করে প্রতিটি দাবি দ্রুত এবং স্বচ্ছভাবে নিষ্পত্তি করা। এছাড়া, বীমা দাবি নিষ্পত্তি প্রক্রিয়ার সময় নির্ধারণ করে কার্যকারিতা বাস্তবায়িত করার মাধ্যমে গ্রাহকদের সন্তুষ্টি নিশ্চিত করা।

৪। বীমা খাতে দক্ষ জনবল তৈরি:

বীমা খাতে দক্ষ জনবল তৈরি করতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও প্রফেশনাল ট্রেনিং এবং সার্টিফিকেশন প্রোগ্রাম চালু করা। এর ফলে কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বীমা খাতের সেবার মান উন্নত হবে। এছাড়া ইন্স্যুরটেক (Insur-tech) স্টার্টআপগুলোকে উৎসাহিত করে নতুন প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনকে সমর্থন করা, যা খাতটির গতিশীলতা ও উদ্ভাবনশীলতা বাড়াবে।

৫। বীমা আইন ও নীতি সংস্কার:

বীমা খাতের উন্নয়নে আইন ও নীতির আধুনিকায়ন করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, যাতে তা আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর হয়। বীমা কোম্পানিগুলোর স্বার্থ রক্ষা করার পাশাপাশি ব্যবসাবান্ধব নীতি গ্রহণ করা, যা তাদের কার্যক্রমকে আরও সহজ ও লাভজনক করবে। মাইক্রো-ইনস্যুরেন্সের উন্নয়ন এবং নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সাশ্রয়ী বীমা সুবিধা নিশ্চিত করা, দেশের সাধারণ জনগণের জন্য বীমা সেবা আরও কার্যকরী করা সম্ভব হবে।

৬। বীমা খাতের স্বচ্ছতা ও গ্রাহক আস্থা বৃদ্ধি:

বীমা খাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতারনা প্রতিরোধ করা। একক অভিযোগ ব্যবস্থাপনা প্ল্যাটফর্ম চালু করে গ্রাহকদের অভিযোগ দ্রুত এবং স্বচ্ছভাবে নিষ্পত্তি করা। এছাড়াও বীমা কোম্পানির আর্থিক অবস্থা, দাবি পরিশোধের হার ইত্যাদি বিষয়ে স্বচ্ছ তথ্য প্রকাশ করে গ্রাহকদের আস্থা বৃদ্ধির মাধ্যমে খাতটির বিশ্বস্ততা এবং গ্রহণযোগ্যতা উন্নত করা।

৭। কমিশন প্রথার সংস্কার:

আইডিআরএ বা বিআইএ’র সহায়তায় কমিশন হার নির্ধারণে স্বচ্ছতা আনা, যাতে একক কমিশন হার ও নিয়ম গ্রাহকদের ন্যায্যতা নিশ্চিত করে। অনিয়ম শনাক্ত করে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ।

৮। রিইন্স্যুরেন্স:

রিইন্স্যুরেন্স খাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে এবং আন্তর্জাতিক মানের গাইডলাইন অনুসরণ করা হবে। বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা হবে এবং বৃহত্তর প্রকল্প ও পণ্য কভারেজ বৃদ্ধি করা।

৯। সাধারণ বীমা করপোরেশন:

সাধারণ বীমা করপোরেশন বীমা দাবী সংঘঠিত হলে বীমা দাবির অর্থ যাতে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির নিকট দ্রুত হস্তান্তর করে সেজন্য সাধারণ বীমা করপোরেশনের সাথ আলাপ–আলোচনার মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা। এর ফলে বীমা গ্রাহকের দাবি দ্রুত নিষ্পত্তির মাধ্যমে আস্থা অর্জন করা সম্ভব হবে।

বিআইএ’র নির্বাচনে বিজয়ী হলে, আমি এই পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করে বীমা খাতের উন্নয়ন ও সংস্কারে কাজ করব। এর মাধ্যমে, বীমা খাতের গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।