বীমাদাবি না দেয়ায় গোল্ডেন লাইফের সিএফও গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক: মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও ৯৭ জন গ্রাহকের সঞ্চয়কৃত টাকা ফেরত না দেয়ায় কুষ্টিয়ায় রুজু হওয়া মামলায় বেসরকারি বীমা কোম্পানি গোল্ডেন লাইফের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মো: ফিরোজ আলমকে আজ বিকেলে গ্রেফতার করেছে ঢাকার শিল্পঞ্চল থানা পুলিশ । থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি'কে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কোম্পানিটির বন্ধুবীমা প্রকল্পে ৯৭ জন গ্রাহকের ৭ লাখ ৫ হাজার ৭শ' টাকা জমা করে কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলা ইউনিট। পলিসির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধ করার জন্য তাগিদ দেয় সংশ্লিষ্ট ইউনিট। কিন্তু কোম্পানিটি গ্রাহকদের পাওনা টাকা পরিশোধ করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এতে গ্রাহকের টাকা পাওয়া নিয়ে শংকা দেখা দেয়। অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট ইউনিট প্রধানের ওপর চাপ দিতে থাকে গ্রাহকরা ।

এরপর গ্রাহকদের পক্ষে বাদী হয়ে কুষ্টিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ভেড়ামারার ইউনিট প্রধান শাহনাজ পারভীন। মামলা নং সি আর ১৭১/১৬। তিনি নিজেও একজন বীমা গ্রাহক।

মামলায় আসামি করা হয় কোম্পানিটির তৎকালীন মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা সুশান্ত প্রামাণিক, (বর্তমানে বায়রা লাইফের মূখ্য নির্বাহী)  বন্ধুবীমা প্রকল্প পরিচালক এজেডএম মাসুদ আজাদী এবং  প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও)ফিরোজ আলমকে।

উক্ত মামলার সমন পাওয়ার পরেও আসামিরা আদালতে হাজির না হওয়ায় গত বছরের ৩ নভেম্বর তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন আদালত। পরোয়ানাটি ঢাকার তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় প্রেরণ করা হয়। আদালতের পরোয়ানা পেয়েও ওই তিন কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা পুলিশ।

এরপরও আদালতে হাজির না হলে এ বছরের ৫ জানুয়ারি কোম্পানিটির ওই ৩ কর্মকর্তার অফিসের মালামাল ক্রোকের আদেশ দেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এম এম মোর্শেদ। এক কর্মকর্তার অফিস পরিবর্তন এবং বাকী দু’জন ঠিকভাবে অফিস না করারয় তাদের এতদিন গ্রেফতার করতে পারেনি ঢাকার তেজগাঁও থানা। অবশেষে ঐ কোম্পানির সিএফওকে আজ বিকেলে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে কোম্পানির সাবেক মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা  সুশান্ত প্রামানিক (বর্তমানে বায়রা লাইফের মূখ্য  নির্বাহী কর্মকর্তা) ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডিকে বলেন, আমি গতবছর ৩০ জুন কোম্পানি ছাড়ার একমাস পরে এ মামলাটি হয়। আমাকে ভুলবশত: মামলায় জড়ানো হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ঐ কোম্পানিতে আমি তিন বছর ছিলাম। আমি ছাড়ার সময় ৮৪ জন গ্রাহকের ১২৫ কোটি টাকার বীমা দাবির চেক তৈরি করেই এসেছিলাম। বর্তমানে যিনি দায়িত্বে আছেন তিনি তো আমার চেয়ে অভিজ্ঞ বীমা জগতে। তার সময়ে কেন এ রকম হয় বলে তিনি প্রশ্ন রেখেছেন।

তিনি জানান, ফিরোজ আলম গ্রেফতার হবার পরে কুষ্টিয়ার গ্রাহক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আপসের চেষ্টা করছেন।

গোল্ডেন লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান একেএম আজিজুর রহমান ইন্সুরেন্সনিউজবিডিকে বলেন, অনেকগুলো ব্রাঞ্চ। একটু ঝামেলাতো থাকতেই পারে। কিন্তু কুষ্টিয়ার বিষয়টি আমার ভালো জানা নেই। মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ‍নুর মোহাম্মদ ভূঁইয়া ভাল বলতে পারবেন। কিন্তু সিইওকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

মামলার বাদী শাহনাজ পারভীনের সঙ্গে কথা হয় ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি’র। তিনি বলেন, আমি নিজেই গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্সের একটি পলিসি করি। পরবর্তীতে কোম্পানির কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি। অনেক গ্রাহক সংগ্রহ করি। কিন্তু মেয়াদ শেষ হতেই কোম্পানি গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে টালবাহানা শুরু করে। নানা কারণে এখানকার অফিসটি বন্ধ হয়ে যায়।

আমি, আমার পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজনদের পলিসি করাই। মেয়াদ শেষে কোম্পানি টাকা ফেরত নিয়ে টালবাহানা শুরু করে।

কোম্পানি যখন গ্রাহকের টাকা ফেরত দেয় না তখন অবস্থাটা এমন হয় নিজেদের লোক আমাদের অবিশ্বাস করতে শুরু করে। তারা সন্দেহ করে আসলে আমরা কোম্পানিতে টাকা জমা করেছি কিনা। মাঠে বের হলেই সবাই বলে আমাদের টাকা দাও। আমি তখন বাধ্য হয়ে মামলায় যাই ।

এরপরও কোম্পানির লোকজন গ্রাহকদের টাকা না দিয়ে নানাভাবে ঘোরাতে থাকে। পরে এক পর্যায়ে আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। তখন কোম্পানির পক্ষ থেকে মামলা তুলে নেয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু টাকা না পেয়ে তো মামলা তুলতে পারি না।

আরো পড়ুন:

ক্রোক ঠেকাতে আপোষে যাচ্ছে গোল্ডেন লাইফ

মামলা করেই বীমা দাবি পেলেন গোল্ডেন লাইফের ৫১ গ্রাহক