পরিচালকরা বীমা কোম্পানির মূখ্য নির্বাহী হতে পারবেন

রহমান সিদ্দিকী: বীমা কোম্পানির পরিচালকরা মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হতে পারবেন। মূখ্য নির্বাহী হিসেবে নিয়োগের অনুমোদন পেতে বীমা কোম্পানির পরিচালক, শেয়ারহোল্ডার বা বীমা ব্যবসায় কোন ব্যক্তির ১২ বছরের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি মূখ্য নির্বাহীর অব্যবহিত পরের পদে ৩ বছরের অভিজ্ঞতাসহ যথাযথ শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে। তবে পরিচালক হলে পদত্যাগ করে মূখ্য নির্বাহীর অব্যবহিত নীচের পদে অন্যূন ৩ বছর চাকরি করার অভিজ্ঞতা নিতে হবে। বীমা ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিজ্ঞতা মূখ্য নির্বাহী নিয়োগের অভিজ্ঞতার শর্ত পূরণ করবে।

বীমা ব্যবসায় কোন ব্যক্তির জড়িত থাকা বিচ্ছিন্নভাবেও হলেও গ্রহণযোগ্য হবে।

এছাড়াও, কোন না কোনভাবে ইন্স্যুরেন্স আম্ব্রেলার নীচে ১২ বছর কাটিয়ে দিয়ে মূখ্য নির্বাহীর অব্যবহিত পরের পদে ৩ বছর চাকরি করতে পারলেই ওই ব্যক্তি একই শ্রেণীর বীমা কোম্পানির মূখ্য নির্বাহী হতে পারবেন।

এমন সুযোগ রাখা হয়েছে মূখ্য নির্বাহী নিয়োগ ও অপসারণ বিষয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র জারি করা প্রবিধানমালায়।

আইডিআরএ চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ স্বাক্ষরিত ৭ অক্টোবর ২০১২ তারিখ জারি করা বীমা কোম্পানি (মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ) প্রবিধানমালা ২০১২ এর ধারা ৩ এর (খ) উপধারায় বলা হয়েছে ‍‍’ইতোপূর্বে কোন বীমা কোম্পানির মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে বা উহার অব্যবহিত নিম্নপদে অন্যূন ৩ (তিন) বছরের কর্ম অভিজ্ঞতাসহ যে শ্রেণীর বীমার জন্য কোন ব্যক্তিকে মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাব করা হবে, অনুরূপ শ্রেণীর বীমা ব্যবসায় অন্যূন ১৫ (পনের) বৎসরের কাজের অভিজ্ঞতা;”

প্রবিধানমালায় ‌”অনুরূপ শ্রেণীর বীমা ব্যবসায় অন্যূন ১৫ (পনের) বৎসরের কাজের অভিজ্ঞতা’ কথাটি থাকায় বীমা কোম্পানির পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডারদের জন্য মূখ্য নির্বাহী পদে নিয়োগের সুযোগ রয়েছে।

এ প্রবিধানমালার এ ধারার বক্তব্য আরও সুস্পষ্ট হয় গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহী ফারজানা চৌধুরীর অভিজ্ঞতা সম্পর্কে এক অভিযোগের বিষয়ে আইডিআরএ গঠিত পরিদর্শন দলের তদন্ত প্রতিবেদনে।

সূত্র মতে, মূখ্য নির্বাহী নিয়োগ পাওয়ার সময় সংশ্লিষ্ট প্রবিধানের শর্ত মতো প্রয়োজনীয় কর্ম অভিজ্ঞতা ফারজানা চৌধুরীর ছিল না, আইডিআরএ চেয়ারম্যান বরাবর এমন অভিযোগ দায়ের করে গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের এক শেয়ার মালিক।

অন্যদিকে, কর্মচারীদের পক্ষ থেকে একই ধরণের অভিযোগ দাখিল করা হয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ।  এ অভিযোগ খতিয়ে দেখতে আইডিআরএ চিঠি পাঠায় দুদক।

এর প্রেক্ষিতে গত ১০ মে নির্বাহী পরিচালক খলিল আহমেদকে প্রধান করে অন্য ৩ অফিসার নিয়ে ৪ সদস্যের পরিদর্শন দল গঠন করে আইডিআরএ।  দলটি ফারজানা চৌধুরীর উপস্থাপিত বিভিন্ন অভিজ্ঞতার সনদ পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন দেয়।  

ফারজানা চৌধূরীর অভিজ্ঞতার একটি হিসাব তুলে ধরা হয় ওই প্রতিবেদনে।

এতে বলা হয়, ফারজানা চৌধুরীর ১৯৯৩ সালের এপ্রিল হতে ১৯৯৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সে ইন্টার্ন হিসেবে ১১ মাস কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। এরপর ১৯৯৪ সালের মার্চ হতে ১৯৯৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এক্সিকিউটিভ ট্রেইনি ও এ্যাসিসট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে ৩ বছর ৮ মাস কর্মরত ছিলেন।

তবে ১৯৯৭ সালের অক্টোবর থেকে ২০০২ সালের মে মাস পর্যন্ত ফারজানা চৌধুরীর কাজের কোন বিবরণ দেয়া হয়নি।

সে অনুসারে তিনি ১৯৯৭ সালের অক্টোবর মাস থেকে ২০০২ সালের মে মাস পর্যন্ত ফারজানা চৌধুরী গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে বা বীমা ক্ষেত্রে কাজ করেননি।

কিন্তু ২০০২ এর জুন মাস হতে ২০০৯ এর ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ৬ বছর ৮ মাস ২ দিন স্পন্সর ডিরেক্টর ছিলেন। এমনকি ভাইস চেয়ারম্যানও হয়েছিলেন।  এমন তথ্য এসেছে প্রতিবেদনে।

অন্যদিকে ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ৮ তারিখ বোর্ড ডিরেক্টরের পদ থেকে পদত্যাগ করে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে যোগ দেন এবং মূখ্য নির্বাহী নিয়োগ পাওয়া পর্যন্ত ২০১৩ সালের ১০ অক্টোবর পর্যন্ত ৪ বছর ৯ মাস কাজ করেন।

পরিদর্শন দলের হিসাব মোতাবেক ফারজানা চৌধুরীর বীমা ক্ষেত্রে ‘মোট কর্ম অভিজ্ঞতা’ প্রায় ১৬ বছর।

এ ছাড়াও আরো বলা হয়েছে, ‘বীমা বিষয়ে প্রফেশনাল ডিগ্রি (এসিআইআই) থাকায় তিনি মোট অভিজ্ঞতা থেকে ৩ বছরের অব্যাহতি পান’

সূত্র মতে, ফারজানা চৌধুরীকে প্রথমবার নিয়োগের অনুমোদন দেয়া হয় ১০ অক্টোবর ২০১৩ সালে। ফারজানা চৌধুরী এসিআইআই পেয়েছেন ২৩ এপ্রিল ২০১৫ সালে।  

উল্লেখ্য, বীমা আইন ১৯৩৮ এর ৪৮সি ধারা মোতাবেক বীমা কোম্পানির মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য ‘বীমা ক্ষেত্রে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা সম্পন্ন’ শর্তটি সুস্পষ্ট করে ২০০৭ সালের ১৮ জুন স্মারক নং ১১১৭ বেসরকারি বীমা কোম্পানীর মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগের নীতিমালা শীর্ষক প্রজ্ঞাপন জারি করে বীমা অধিদপ্তর/ প্রধান বীমা নিয়ন্ত্রক।

এ প্রজ্ঞাপনের ৬ এর (ক) তে বলা হয়েছে, ‘সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বীমা কর্পোরেশন কিংবা বীমা কোম্পানীতে ১ম শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসেবে ন্যুনতম ১৫(পনের) বছরের কর্ম অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।’

২০০৩ সালের ৪ মে বীমা অধিদফতরে জারি করা বেসরকারি বীমা কোম্পানির মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগের নীতিমালা শীর্ষক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বীমাখাতে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বলতে বুঝাবে বীমা করপোরেশন অথবা বীমা কোম্পানির কর্মকর্তা হলে প্রধান নির্বাহী নিয়োগের ক্ষেত্রে সাধারণ বীমা কোম্পানির জন্য এক বা একাধিক সাধারণ বীমা প্রতিষ্ঠানে এবং জীবন বীমা কোম্পানির জন্য এক বা একাধিক জীবন বীমা প্রতিষ্ঠানে ১ম শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসেবে ১২ বছরের কর্ম অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

১৯৮৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি জারি করা বীমা অধিদফতরের প্রজ্ঞাপন ১- এ বলা হয়েছে, বীমা ক্ষেত্রে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বলতে সাধারণ বীমা কোম্পানির জন্য এক বা একাধিক সাধারণ বীমা সংস্থায় এবং জীবন বীমা কোম্পানির জন্য এক বা একাধিক জীবন বীমা সংস্থায় নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে পনের বৎসর অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

১৯৯০ সালের ২৫ জুন জারি করা বীমা অধিদফতরের প্রজ্ঞাপনের ২- এ বলা হয়, বীমাকারীর/ বীমা অধিদফতরের দায়িত্বশীল পদে অন্তত পক্ষে ১২ (বার) বছরের অভিজ্ঞতা না থাকিলে তাহাদেরকে বীমাকারীর মূখ্য নির্বাহী হিসেবে নিয়োগের জন্য বীমা ক্ষেত্রে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বলিয়া গণ্য করা হইবে।

মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা ২০১২ এ মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার যোগ্যতার বিষয়ে বীমা অধিদপ্তরের এসব প্রজ্ঞাপনের শর্ত পরিবর্তন করে ‌‌“বীমা কোম্পানীতে ১ম শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসেবে” এর স্থলে “অনুরূপ শ্রেণীর বীমা ব্যবসায়” প্রতিস্থাপন করা হয়।  এতে বীমা ব্যবসার সঙ্গে ১২ বছর জড়িত থাকার পর পদত্যাগ করে ২য় সর্বোচ্চ পদে ৩ বছর চাকরি করলে কোন শেয়ারহোল্ডার বা পরিচালক মূখ্য নির্বাহী পদে নিয়োগ নিতে পারেন।